সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য

সবাত শ্বসন (Aerobic Respiration):

যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বায়ুজীবি জীবের কোষস্থ শ্বসনবস্তু (গ্লুকোজ) সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তি সম্পূর্ণরূপে নির্গত হয় তাকে সবাত শ্বসন (Aerobic Respiration) বলে। যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় এবং শ্বসনিক বস্তু (শর্করা, প্রোটিন, লিপিড, বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড) সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে CO2, H2O ও বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তাকে সবাত শ্বসন বলে। সবাত শ্বসনই হলো উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক শ্বসন প্রক্রিয়া।

অবাত শ্বসন (Anaerobic Respiration):

যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অবায়ুজীবি জীবের কোষস্থ খাদ্য মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কিন্তু অক্সিজেনযুক্ত যৌগের (অজৈব অক্সাইড) সাহায্যে আংশিকভাবে জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য যৌগ উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তির আংশিক নির্গমন ঘটায় তাকে অবাত শ্বসন (Anaerobic Respiration) বলে । অর্থাৎ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোনো শ্বসনিক বস্তু অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই কোষের ভিতরের এনজাইম দিয়ে আংশিকরূপে জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ, যেমন: ইথাইল অ‍্যালকোহল, ল‍্যাকটিক এসিড ইত্যাদি, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং সামান্য পরিমাণ শক্তি তৈরি করে, তাকে অবাত শ্বসন বলে। কেবলমাত্র কিছু অণুজীবে যেমন ব‍্যাকটেরিয়া, ইস্ট ইত্যাদিতে অবাত শ্বসন হয়।

C6H12O6 —এনজাইম–> 2C2H5OH + 2CO2 + শক্তি ( 56 k Cal / Mole )

সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য:

জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তি সম্পূর্ণরূপে নির্গত হয় তাকে সবাত শ্বসন বলে। সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। সবাত শ্বসনে মুক্ত অক্সিজেনের (O2) উপস্থিতিতে ঘটে। অন্যদিকে অবাত শ্বসনে মুক্ত অক্সিজেনের অনপস্থিতিতে ঘটে।

২। সবাত শ্বসন বস্তু সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়। অন্যদিকে অবাত শ্বসন বস্তু আংশিক জারিত হয় ।

৩। সবাত শ্বসন বায়ুজীবি জীবে ঘটে । অন্যদিকে অবাদ শ্বসন অবায়ুজীবি জীবে ঘটে ।

৪। সবাত শ্বসন প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক হল আণবিক অক্সিজেন । অন্যদিকে অবাত শ্বসন প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক অক্সিজেনযুক্ত যৌগের অক্সিজেন।

৫। সবাত শ্বসনের উপজাত বস্তু CO2 ও H2O । অন্যদিকে উপজাত বস্তু CO2, H2O এবং অন্যান্য বস্তু।

৬। সবাত শ্বসন সম্পূর্ণ শক্তি অর্থাৎ 686 Kcal শক্তি উৎপন্ন হয় । অন্যদিকে অবাত শ্বসন আংশিক শক্তি অর্থাৎ 50 Kcal শক্তি উৎপন্ন হয়।

৭। সবাত শ্বসন প্রধানত তিনটি পর্যায়ে হয় -গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবস চক্র এবং প্রান্তীয় শ্বসন । অন্যদিকে অবাত শ্বসন দুটি পর্যায়ে সম্পর্ণ হয় – গ্লাইকোলাইসিস এবং পাইরুভিক অ্যাসিডের অসম্পূর্ণ জারণ ।

৮। সবাত শ্বসন সাইটোপ্লাসম ও মাইট্রোকন্ড্রিয়ার মধ্যে ঘটে । অন্যদিকে অবাত শ্বসন মাইট্রোকন্ড্রিয়ার বাইরে অর্থাৎ সাইটোপ্লাসমে ঘটে।