বিরিয়ানি ও পোলাও এর মধ্যে পার্থক্য

বিরিয়ানি (Biryani):

বিরিয়ানির সঠিক উৎপত্তি সম্পর্কে অনশ্চিয়তা রয়েছে। তবে উত্তর ভারতে, দিল্লির (মুঘলাই রন্ধনপ্রণালী) মুসলিম বসতিপূর্ণ স্থানগুলিতে, রামপুর, লখনউ (আওধী রান্না) এবং অন্যান্য ছোট রাজ্যে বিরিয়ানি বিভিন্ন বৈচিত্র্যের উৎপত্তি লক্ষ করা যায়। আবার অনের মতে, দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ এ বিরিয়ানির উৎপত্তি। সেইসাথে তামিলনাড়ু (আম্বুর, তানজাভুর, চেটিনাড, সালেম, ডিন্ডিগাল) ), কেরালা (মালাবার), তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটক (ভাটকল) যেখানে মুসলিম সম্প্রদায় উপস্থিত ছিল সেখানেও এই রন্ধনপদের উৎপত্তি বলে মনে করা হয় ।

বিরিয়ানি বা বিরানি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে প্রচলিত এক বিশেষ প্রকারের খাবার যা সুগন্ধি চাল, ঘি, গরম মশলা এবং মাংস মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মাধ্যমে উৎপত্তি লাভ করে। এটি সাধারনত বিশেষ অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশিত হয়।

পোলাও (Polao):

পোলাও হল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ। সাধারণত সুগন্ধি চাল এবং অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাছ, মাংস এবং ডিম দিয়ে পোলাও তৈরি হয়ে থাকে। মিষ্টি মিষ্টি হলুদ রঙের বাসন্তী পোলাও যে কোন বাঙালি উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। বাসন্তী পোলাও সাদা পোলাও বাঙালি হেঁশেল এ যথেষ্ট সমাদৃত। চালের তৈরি পোলাও চিঁড়ের পোলাও সুজির পোলাও জলখাবার হিসেবে আদর্শ।

পোলাও হচ্ছে চাল দিয়ে তৈরী একটি মশলাযুক্ত খাবার। পোলাও মুসলিম শাসনের সময় বাংলায় আগমন হয়েছে বলে অনেকে ঐতিহাসিক অনুমান করেন। তবে গিরিশচন্দ্র বেদান্ততীর্থ তার ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত প্রাচীন শিল্প পরিচয় গ্রন্থে প্রাক মুসলিম যুগে ঘিতে রান্না করা স-মাংস ভাত বলে উল্লেখ করেছেন। যা প্রাচীন কালে পললৌদন নামে পরিচিত ছিল বলে লিখেছেন। এর ওপর নাম সর্পিস্বৎ ছিল।

পোলাও এবং এই ধরনের খাবার মধ্য প্রাচ্য, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ পরিচিত খাবার। বলকান, মধ্যপ্রাচ্য, ককেশাস, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় রন্ধনশৈলীতে গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে আছে। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বালুচি, বুখারার ইহুদি, ক্রেটান, ভারত, ইরান, কাজাক, কেনিয়া, পাকিস্তান, তানজানিয়া, জাঞ্জিবার, উইঘুর, উজবেক, তাজিক এবং তুর্কী প্রভূতি রন্ধনশৈলীতে প্রধান খাবারের তালিকায় পোলাও স্থান দখল করে আছে।

বিরিয়ানি ও পোলাও এর মধ্যে পার্থক্যঃ

পোলাও এবং এই ধরনের খাবার মধ্য প্রাচ্য, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ পরিচিত খাবার। বিরিয়ানি ও পোলাও এর মধ্যে পার্থক্য পার্থক্য নিচে দেখানো হলো-

১। বিরিয়ানির সঠিক উৎপত্তি সম্পর্কে অনশ্চিয়তা রয়েছে। তবে উত্তর ভারতে, দিল্লির মুসলিম বসতিপূর্ণ স্থানগুলিতে, রামপুর, লখনউ এবং অন্যান্য ছোট রাজ্যে বিরিয়ানি বিভিন্ন বৈচিত্র্যের উৎপত্তি লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে, পোলাও মুসলিম শাসনের সময় বাংলায় আগমন হয়েছে বলে অনেকে ঐতিহাসিক অনুমান করেন।

২। বিরিয়ানি রাঁধতে চালকে আধা সেদ্ধ করে তার পানি ফেলে দিয়ে আবার সেই ভাতকে রান্না করে মাংসের সাথে মিশিয়ে রান্না করতে হয়ে। অন্যদিকে, পোলাওয়ের বেলায় তার উল্টোটা করতে হয়। এতে পানি পরিমাণ মত দিয়ে একবারে রান্না করে নিতে হয়।

৩। বিরিয়ানির মশলা অবশ্যই বিশেষ এবং উচ্চ মানের হয়ে থাকে।যা বিরিয়ানিতে বিশেষ স্বাদ ও গন্ধ এনে দেয়। অন্যদিকে, পোলাওয়ে বিরিয়ারি তুলনায় মসলা কম দেওয়া হয়।

৪। বিরিয়ানি রান্না লম্বা সময় নিয়ে করতে হয়। কারণ এটি তৈরি করতে যে জিনিস লাগেতা কয়েক ধাপে তৈরি করতে হয়। অন্যদিকে, পোলাও খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব।