ব্রকলি ও ফুলকপির মধ্যে পার্থক্য

ব্রকলি (Broccoli):

ব্রকলি উচ্চ ফোলাইট সমৃদ্ধ এবং এতে ফুলকপির চেয়ে ক্যালরির পরিমাণ বেশি। ব্রকলি ক্রসিফেরী গোত্রের অন্তর্ভুক্ত শীতকালীন সবজি। এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, আঁশ আছে। এতে Phytonutrients থাকায় হৃদরোগ, বহুমূত্র এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ব্রকলি জারণরোধী (অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট) ভিটামিন এ এবং সি সরবরাহ করে কোষের ক্ষতি রোধ করে। সাধারণত তিন ধরণের ব্রোকোলি বেশি দেখা যায়। ব্রকলিতে পাওয়া যায় উচ্চমাত্রার ভিটামিন C। দিনে মাত্র ১০০ গ্রাম ব্রকলি শরীরে প্রতিদিনের ভিটামিন C এর চাহিদার 150% পূরণ হতে পারে।

প্রতি শতক জায়গায় 25-30 দিন বয়সের 200টি চারা রোপন করে মাত্র 50-60 দিন পরই 40 মণ ব্রকলি উৎপাদন করা সম্ভব। ব্রকলী সাধারণত দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ভাল হয়। মাটি ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। মধ্য ভাদ্র-মধ্য পৌষ এর মধ্যে বীজ বপন ও চারা রোপন করতে হয়। 25-30 দিন বয়সের চারা 50 সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপন করতে হয়। এরপর একর প্রতি গোবর 6 টন, ইউরিয়া 100 kg, টি এস পি 70 কেজি ও পটাশ 55 কেজি প্রয়োগ করলে চাষ ভাল হয়।

সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি ফ্ল্যাভোনয়েডস হ’ল রক্তনালী ক্লিনারও, যা কোলেস্টেরল জারণ এবং প্লেটলেট জমাট বাঁধতে পারে, যার ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে reducing ব্রোকলিতে এই পদার্থের একটি উচ্চতর সামগ্রী রয়েছে। ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সহায়ক চিকিত্সার জন্য বিজ্ঞানীরা ব্রাকোলি থেকে এই পদার্থটি বের করেছেন। তদতিরিক্ত, ব্রোকলিতে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি হত্যার প্রভাব রয়েছে যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ক্যান্সারবিরোধী খাবারের ক্ষেত্রে ব্রোকলি কিছুটা ভাল।

ফুলকপি (Cauliflower):

ফুলকপি ব্রাসিকেসি পরিবারভুক্ত ব্রাসিকা অলেরাসিয়া (Brassica oleracea) প্রজাতির সবজিগুলোর একটি। এটি একটি বার্ষিক ফসল যা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। সাধারণতঃ ফুলকপির পুষ্পাক্ষ অর্থাৎ সাদা অংশটুকুই খাওয়া হয় আর সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁট এবং পুরু, সবুজ পাতা দিয়ে স্যুপ রান্না করা হয় অথবা ফেলে দেওয়া হয়। ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি; এটি রান্না বা কাঁচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়, আবার এটি দিয়ে আচারও তৈরি করা যায়।

ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন B, C, K, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক। একটি মাঝারি আকারের ফুলকপিতে রয়েছে শক্তি-25 কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট-4.97 গ্রাম , প্রোটিন-1.92 গ্রাম , ফ্যাট-0.28 , আঁশ-2 গ্রাম, ফোলেট-0.57 মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন-0.50 মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন-0.05 , প্যানথানিক এসিড-0.667 মাইকোগ্রাম। ফুলকপি পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি।এর পাতার উপরিভাগে ক্যানসার নিরোধক উপাদান পেয়েছেন বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। বাল্টিমোর জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা ফুলকপির পাতায় আইসো থায়োসায়ানেটস নামক রাসায়নিক পদার্থ পেয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, মলাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক কমাতে হলে সপ্তাহে প্রায় দুই পাউন্ড ফুলকপি এবং এ জাতীয় শাকসবজি খেতে হবে। চোখের যত্নে ফুলকপির কোনো তুলনা হয় না। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। চোখ সুস্থ রাখতে বেশি করে ফুলকপি খাওয়া উচিত।

ব্রকলি ও ফুলকপির মধ্যে পার্থক্য:

বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য ব্রকলি ও ফুলকপি দুটাই বেশ জরুরি। এরা দেখতে অনেকটা এক রকম হলেও সম্পূর্ণ এক নয়। রয়েছে আলাদা স্বাস্থ্যোপকারিতা। তবে পুষ্টির পরিমাণে এবং চাষ পদ্ধতির কারণে দুটি সবজির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তা নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১। ব্রকলি উচ্চ ফোলাইট সমৃদ্ধ এবং এতে ফুলকপির চেয়ে ক্যালরির পরিমাণ বেশি। তাই যারা ওজন কমাতে চায় তাদের জন্য ফুলকপি আদর্শ। হৃদয় ভালো রাখতে প্রয়োজন লোহিত কনিকা যা তৈরিতে ফোলাইট সাহায্য করে। অন্যদিকে ব্রকলি উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। স্বাস্থ্যকর ক্যালসিয়াম বাড়তি চর্বি কমায় এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

২। ফুলকপি ও ব্রকলি উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা হাড়ের স্থায়িত্ব বাড়ায়। তাই যাদের আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য হাড়ের সমস্যা আছে তাদের জন্য ব্রকলি ভালো। অন্যদিকে, আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য হাড়ের সমস্যার ক্ষেত্রে ব্রকলির তুলনায় ফুলকপি কম উপকারি।

৩। ব্রকলিতে থাকে নানান ভিটামিন। যেমন- A, C, K,। তাই সুষম খাবার তৈরিতে একে আদর্শ সবজি হিসেবে ধরা হয়। অন্যদিকে, ফুলকপিতে ভিটামিন ‘A’ নেই এবং ব্রকলির তুলনায় ভিটামিন ‘K’ এবং ‘C’ কম থাকে।

৪। ব্রকলি এবং ফুলকপি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ। নিয়মিত এগুলো খেলে বিপাক বৃদ্ধি পায়। আঁশ ও প্রোটিন উপাদান ফুলকপির তুলনায় ব্রকলিতে বেশি। এ কারণে, যাদের হজমে সমস্যা আছে তাদের জন্য ব্রকলি আদর্শ।

৫। আপনি যদি আপনার ডায়েটে একটি সমৃদ্ধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অন্তর্ভুক্ত করতে চান তবে ব্রোকোলির চেয়ে ভালো আর কিছু নয়। এই সবুজ শাকসবজিতে একটি যৌগ পাওয়া যায়, যাকে সালফোরোফেন বলে। রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে, চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং বৃদ্ধ বয়সেও আপনাকে সুস্থ রাখে। অন্যদিকে, একইভাবে ফুলকপিতে শক্তিশালী এবং শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষের কার্যকে শক্তিশালী করে।

৬। একটি শক্তিশালী স্বাদ সহ ব্রোকলির সবুজ স্বাদ রয়েছে। অন্যদিকে, ফুলকপির ব্রোকোলির তুলনায় সামগ্রিক উপাদেয় স্বাদ আছে।

৭। ব্রোকলির বড় সবুজ রঙের ফুলের মাথা রয়েছে। অন্যদিকে, ফুলকপির বড় সাদা রঙের ফুলের মাথা রয়েছে। তবে কিছু জাতের কমলা বা বেগুনি রঙের ফুলের মাথা থাকে।

৮। ব্রকোলিতে ফুলকপির চেয়ে বেশি ক্যালোরি থাকে। (34 কিলোক্যালরি / 100 গ্রাম)। অন্যদিকে, ফুলকপির মধ্যে ব্রকলির চেয়ে কম ক্যালোরি থাকে। (25 কিলোক্যালরি / 100 গ্রাম)