চেক ও ব্যাংক ড্রাফটের মধ্যে পার্থক্য

চেক (Cheque):

চেক হল এমন একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল যার মাধ্যমে ব্যাংকের আমানতকারি লিখিত ও শর্তহীনভাবে ব্যাংককে চেকের বাহককে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করে থাকে। যিনি চেক লেখেন তিনি আদেষ্টা বা ড্রয়ার হিসাবে পরিচিত। আদেষ্টা বা ড্রয়ার চেকে মুদ্রার পরিমাণ, তারিখ এবং চেকের প্রাপক সহ বিভিন্ন বিবরণ লিখে তাতে স্বাক্ষর করে ব্যাংকে আদেশ দেয়, এক্ষেত্রে ব্যাংককে আদিষ্ট বা ড্রয়ী বলা হয়। ব্যাংক আদেশ দেয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিবৃত অর্থ পরিশোধ করে। আদেষ্টার অবশ্যই আদিষ্ট ব্যাংকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

ব্যাংক ড্রাফট (Bank draft):

ব্যাংক ড্রাফট হচ্ছে একটি পে মেন্ট পদ্ধতি। যার মাধ্যমে প্রাপক কে নগদ টাকার পরিবর্তে ব্যাংক কর্তৃক চেকের ন্যায় পেমেন্ট করা যায়। ব্যাংক ড্রাফট করা সহজ এবং অধিক নিরাপদ। সাধারণত আমাদের দেশে চাকুরী অথবা টেন্ডার প্রভৃতি কাজে ব্যাংক ড্রাফট করা হয়। এর ব্যাংককে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন এবং ভ্যাট দিতে হয়। ধরুন আপনি ঢাকায় আছেন, আপনি জনাব রহমান কে নগদ টাকা না দিয়ে উনার একাউন্টে নির্দিষ্ট ব্যাংকের শাখায় নগদ টাকার পরিবর্তে ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন। একে সংক্ষেপে ডিডি বা ডিমান্ড ড্রাফটস ও বলে থাকে।

চেক ও ব্যাংক ড্রাফটের মধ্যে পার্থক্যঃ

চেক ও ব্যাংক ড্রাফট উভয়ই হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল তবুও এদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে চেক ও ব্যাংক ড্রাফট এর মধ্যে পার্থক্য গুলো তুলে ধরা হলো-

১। আমানতকারী ব্যাংকের প্রতি যে লিখিত ও শর্তহীন আদেশ প্রদান করে তাকে চেক বলা হয়। অন্যদিকে, ব্যাংক ড্রাফট বা ডিমান্ড ড্রাফট ব্যাংক তার শাখা ব্যাংক অথবা অন্য কোন ব্যাংকের উপর ইস্যু করে থাকে।

২। চেক প্রস্তুতকারক চেকের ধারকের কাছে দায়ী। অন্যদিকে, ড্রাফটের ক্রেতা ড্রাফটের ধারকের কাছে দায়ী নন।

৩। চেকের অর্থ কেবল হিসাব ধারকের হিসাবে টাকা থাকলেই প্রদেয় হয়। অন্যদিকে, ড্রাফটের বেলায় এমনটি হয় না।

৪। চেকের প্রস্তুতকারক গ্রাহক। অন্যদিকে, ড্রাফটের প্রস্তুতকারক ব্যাংক।

৫। চেক ব্যাংক এর উপর গ্রাহক কর্তৃক কাটা হয়। অন্যদিকে, ব্যাংক ড্রাফট বা ডিমান্ড ড্রাফট ব্যাংক নিজের উপর কাটে।

৬। আমানতকারী বা তার বাহক কেবল চেকের টাকা তুলতে পারে। অন্যদিকে, যে কেউ ব্যাংকে নগদ টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক ড্রাফট সংগ্রহ করতে পারে।

৭। চেক অমর্যাদা হতে পারে। অন্যদিকে, ব্যাংক ড্রাফট বা ডিমান্ড ড্রাফট অমর্যাদা হতে পারে না।

৮। চেক শুধুমাত্র দেশের ভিতরে ব্যবহার হয়ে থাকে। অন্যদিকে, দেশে-বিদেশে ড্রাফট সমভাবে কার্যকর এবং ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৯। ব্যাংকে হিসাব না থাকলে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, ব্যাংকে হিসাব না থাকলেও ব্যাংক ড্রাফট বা ডিমান্ড ড্রাফট এর মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করা যায়।

১০। চেক এর টাকা উত্তোলন করার জন্য ব্যাংকে কোন কমিশন দিতে হয় না। অন্যদিকে, ডিমান্ড ড্রাফট বা ব্যাংক ড্রাফটের জন্য ব্যাংকে নগদ কমিশন দিতে হয়।