জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য

জনঘনত্ব (Density Of Population):

কোন দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যাকে ওই দেশ বা অঞ্চলের মোট জমির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, তাকে জনঘনত্ব বলে। প্রকৃতপক্ষে জনঘনত্ব হলো কোন দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ও মোট জমির অনুপাত।

এক কোটির বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাধিক জনঘনত্ববিশিষ্ট দেশ। ২০২০ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী এদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১২৬৫ জন লোক বসবাস করে। সমস্ত সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বাধিক জনঘনত্ববিশিষ্ট দেশ হল মোনাকো; এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৮,৫৮৯ জনের বাস। মঙ্গোলিয়া বিশ্বের সর্বাপেক্ষা কম জনঘনত্ববিশিষ্ট রাষ্ট্র। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা বিশ্বের সর্বাধিক জনঘনত্ববিশিষ্ট শহর; এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৩,০৭৯ লোকের বাস।

মানুষ-জমি অনুপাত (People-land Ratio):

কোন দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ও মোট কার্যকর জমির অনুপাতকে মানুষ-জমি অনুপাত বলে। মানুষ বলতে এখানে মানুষের কর্মদক্ষতা, জ্ঞান, বুদ্ধি, কৌশল ও সংগঠন প্রভৃতি সাংস্কৃতিক গুণাবলির সমন্বয়কে বােঝায়। আবার, কার্যকরী জমি বলতে সেইসব জমিকে বােঝায় যা মানুষের কাজে লাগে এবং যা থেকে মানুষ সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে। জমি থেকে মানুষ কেবল কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদন বা সম্পদ আহরণ করে না, ভূগর্ভ থেকে খনিজ সম্পদও উত্তোলন করে। জমি বলতে এখানে জমির আয়তন, ক্ষেত্রফল, ভূগর্ভের খনিজ সম্পদ, জমির উপরিভাগের বাতাস, সূর্যকিরণ, ভূগর্ভের ও ভূপৃষ্ঠের জল প্রভৃতিসহ ত্রিমাত্রিক অবস্থানকে বােঝায়।

মানুষ-জমি অনুপাত নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ভূমির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বহনক্ষমতা এবং মানুষের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন—এই তিনটি বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্যঃ

জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। তাই জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১। কোন দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ও মোট আয়তনের অনুপাতকে সেই দেশ বা অঞ্চলের জনঘনত্ব বলে। অন্যদিকে, কোন দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ও মোট কার্যকর জমির অনুপাতকে মানুষ-জমি অনুপাত বলে।

২। জনঘনত্ব=মোট জনসংখ্যা÷মোট জমির পরিমাণ। অন্যদিকে, মানুষ-জমি অনুপাত=মোট জনসংখ্যা÷মোট কার্যকর জমির পরিমাণ।

৩। জনঘনত্ব হল মানুষ ও জমির মধ্যে পরিমাণগত সম্পর্ক। অন্যদিকে, মানুষ-জমি অনুপাত হলো মানুষ ও জমির মধ্যে গুণগত সম্পর্ক।

৪। জনঘনত্ব থেকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বা মানুষের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে কোনাে আভাস পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, মানুষ-জমি অনুপাত থেকে কোনাে দেশ বা অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

৫। জনঘনত্ব পরিমাপের ক্ষেত্রে কোন দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ও মোট জমির পরিমাণকে বিবেচনা করা হয়, জমির কার্যকারীতা সম্পর্কে কোন হিসাব এখানে অন্তর্ভুক্ত হয় না। অন্যদিকে,মানুষ-জমি অনুপাত পরিমাপের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র কার্যকর জমির পরিমাণ বিবেচনা করা হয়, যে জমি ব্যবহারের অনুপযোগী তা এক্ষেত্রে হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না।

৬। দেশের মােট জনসংখ্যা সম্পর্কে কোনাে ধারণা করা না গেলেও জনবণ্টনের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে। অন্যদিকে, জনসংখ্যার কেন্দ্রীভবন ও বিকেন্দ্রীভবন। সম্পর্কে ধরাণা করা যেতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

৭। মানুষের কার্যকারিতা-জনঘনত্বে কার্যকর জমির ও কর্মদক্ষ মানুষকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অন্যদিকে, মানুষ-জমি অনুপাতে কার্যকর জমি ও তার উৎপাদন ক্ষমতা এবং কর্মদক্ষ মানুষ ও তার সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।