ব্যাপন ও অভিস্রবনের মধ্যে পার্থক্য

ব্যাপন(Diffusion):

একই তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপে কোনো পদার্থের অধিকতর ঘন স্থান থেকে কম ঘন স্থানে বিস্তার লাভ করার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। সহজ ভাষায় বলা যায় যে, উচ্চ ঘনত্বের অঞ্চল থেকে নিম্ন ঘনত্বের অঞ্চলে ডিফিউশনকে/ব্যাপনকে কণার এলোমেলো আন্দোলন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ডিফিউশন/ব্যাপন হল উচ্চ ঘনত্বের অঞ্চল থেকে নিম্ন ঘনত্বের অঞ্চলে অণু বা পরমাণুর নেট চলাচল। যথা-

ক্লোরিন বাতাসের চেয়ে প্রায় ২.৫ গুণ ভারী। কিন্তু আপনি যদি একটা ঘরের মধ্যে ক্লোরিন গ্যাস পূর্ণ পাত্র খুলে দেন তাহলে দেখবেন এক সময় সমস্ত ঘরের মধ্যে Cl2 গ্যাস সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরের প্রত্যেক অংশের বায়ু পরীক্ষা করলে দেখা যাবে সব জায়গায় বাতাস এবং ক্লোরিনের অনুপাত সমান। উচ্চ ঘনত্বের স্থান থেকে নিম্ন ঘনত্বের স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ গ্যাসের অণুগুলোর মধ্যে ব্যাপন ঘটে। এটিই হচ্ছে ব্যাপন প্রক্রিয়া।

অভিস্রবন(Osmosis):

ভিস্রবণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দ্রাবকের অণুগুলি কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা উচ্চতর দ্রাবক ঘনত্বের অঞ্চলের দিকে ব্যাপিত হওয়া, তাকেই অভিস্রবণ বলে। সহজ ভাষায় বলা যায় যে, একই দ্রব ও দ্রাবকবিশিষ্ট দুটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক করা হলে দ্রাবকের নিম্ন ঘনত্ববিশিষ্ট দ্রবণ থেকে উচ্চ ঘনত্ববিশিষ্ট দ্রবণের দিকে ব্যাপিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অভিস্রবণ বলে।

যদি একটা শুকনা কিসমিসকে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখি তাহলে সেটি ফুলে উঠে। এটি কিসমিস দ্বারা পানি শোষণের কারণে ঘটে এবং পানি শোষণ অভিস্রবণ দ্বারা ঘটে। অভিস্রবণও এক প্রকার ব্যাপন। অভিস্রবণ কেবলমাত্র তরলের ক্ষেত্রে ঘটে এবং একটি অর্ধভেদ্য পর্দা অভিস্রবণের সময় দুটি তরলকে পৃথক করে রাখে। এটিই হচ্ছে অভিস্রবন প্রক্রিয়া।

ব্যাপন ও অভিস্রবনের মধ্যে পার্থক্য:

একই তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপে কোনো পদার্থের অধিকতর ঘন স্থান থেকে কম ঘন স্থানে বিস্তার লাভ করার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপন ও অভিস্রবনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল, বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পরার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। দুইটি ভিন্ন ঘনত্ব বিশিষ্ঠ দ্রবণ যদি একটি অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা আলাদা করা থাকে। অন্যদিকে তাহলে কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে অধিক ঘনত্বের দ্রবণের দিকে দ্রাবক অনুর স্থানান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অভিস্রবণ বলে।

২। ভিন্ন প্রকৃতির দ্রবণের মধ্যেও ব্যাপন ঘটতে পারে। অন্যদিকে কেবলমাত্র সমপ্রকৃতির দ্রবণের মধ্যে অভিস্রবণ ঘটে।

৩। ব্যাপন প্রক্রিয়ায় পদার্থের গতিশীল অনুকূলে বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের দিকে যায়। অন্যদিকে অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় দ্রাবক অনু কম ঘনত্ব যুক্ত স্থান থেকে বেশি ঘনত্বের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

৪। ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোন পর্দার প্রয়োজন হয়না, এটি মুক্ত অবস্থায় ঘটে। অন্যদিকে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া অর্ধভেদ্য বা প্রভেদক ভেদ্য পর্দার প্রয়োজন হয়।

৫। ব্যাপন একটি ভৌত প্রক্রিয়া। অন্যদিকে অভিস্রবণ একটি ভৌত প্রক্রিয়া হলেও রাসায়ানিক প্রভাব বিদ্যমান।