তড়িৎচালক বল ও বিভব প্রভেদের মধ্যে পার্থক্য

তড়িৎচালক বল (Electromotive Force ):

তড়িৎচালক বল হচ্ছে Electromotive Force বা সংক্ষেপে ইএমএফ (EMF)। পরিবাহীর পরমাণুগুলোর ঋণাত্বক কণিকা বা ইলেকট্রনসমূহকে স্থানচ্যুত করতে যে বল বা চাপের প্রয়োজন, সে বল বা চাপকে তড়িৎচালক বল (Electromotive Force) বা ইএমএফ বলে । অন্যভাবে বলা যায়; প্রত্যেকটি তড়িৎ উৎসেরই দুটি প্রান্ত থাকে, একটি উচ্চ বিভব প্রান্ত বা ধনাত্মক প্রান্ত এবং অপরটি নিম্ন বিভব প্রান্ত বা ঋণাত্মক প্রান্ত। তড়িৎ উৎসের কাজ হচ্ছে ধনাত্মক চার্জ বাহককে ঋণাত্মক প্রান্ত থেকে নিয়ে ধনাত্মক প্রান্তে জমা করা বা ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্তের মধ্যে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করা।

এ বিভব পার্থক্যই বহিবর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তড়িৎ উৎসের প্রান্তদ্বয়ের বিভব পার্থক্য সর্বোচ্চ হয়। একে উৎসের তড়িৎচালক বল (Electromotive force) বলে। অন্যভাবে বলা যায়, একক ধনাত্মক চার্জকে ঋণাত্নক প্রান্ত থেকে নিয়ে ধনাত্মক প্রান্তে জমা করতে তড়িৎ উৎসের যে শক্তি ব্যয় হয় তাকে ঐ উৎসের তড়িৎচালক বল বলে।

বিভব প্রভেদ (Potential difference):

তড়িৎক্ষেত্রের একটি বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে একটি একক বিচ্ছিন্ন ধনাত্বক আধানকে নিয়ে যেতে যে পরিমান কার্য করতে হয় তাকে ঐ দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভব প্রভেদ বলে। বিভব প্রভেদের একক ভোল্ট [V]. 1 কুলম্ব ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে আনতে যদি 1 জুল কার্য করা হয়, তাহলে ওই দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভব-প্রভেদ হবে 1 ভোল্ট ।

তড়িৎচালক বল ও বিভব প্রভেদের পার্থক্যঃ

তড়িৎচালক বল হচ্ছে Electromotive Force বা ইএমএফ (EMF)। পরিবাহীর পরমাণুগুলোর ঋণাত্বক কণিকা। তড়িৎচালক বল ও বিভব প্রভেদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। মুক্ত বর্তনীতে তড়িৎ কোষের দুই মেরু ধনাত্মক ও ঋণাত্মক মেরুর মধ্যেকার বিভব পার্থক্য কে তড়িৎচালক বল বলে। অন্যদিকে, আবদ্ধ বর্তনীতে তড়িৎ কোষের দুই মেরুর মধ্যে বিভব পার্থক্যের মানকে বিভব প্রভেদ বলে।

২। তড়িৎচালক বল পোটেনশিওমিটার এর সাহায্যে মাপা হয়। অন্যদিকে, বিভব প্রভেদ ভোল্ট মিটার এর সাহায্যে মাপা হয়।

৩। তড়িৎচালক বলের মান বিভব প্রভেদ এর মান অপেক্ষা বেশি হয়। অন্যদিকে, বিভব প্রভেদ এর মান তড়িৎচালক বলের মান অপেক্ষা কম হয়।

৪। তড়িৎচালক বল হল বিভব প্রভেদ এর কারণ। অন্যদিকে, বিভব প্রভেদ হল তড়িৎচালক বলের ফল।

৫। তড়িৎ চালক বলের S.I একক হল ভোল্ট। অন্যদিকে, বিভব পার্থক্যের S.I একক হল কুলম্ব।

৬। তড়িৎ চালক বল বর্তনীর রোধের ওপর নির্ভর করে না। অন্যদিকে, বর্তনীর দুই বিন্দুর মধ্যেকার বিভব প্রভেদ ওই দুই বিন্দুর রোধের ওপর নির্ভর করে।