বাষ্পায়ন এবং স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্য

স্ফুটানাঙ্কঃ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে স্ফুটানাঙ্ক হলো একটি তাপমাত্রা যাতে পৌঁছালে তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয়। অতঃএব, যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে তাকে উক্ত পদার্থের ‘স্ফুটানাঙ্ক’ বলা হয়। অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থের বাষ্পীয় চাপ এক বায়ুমণ্ডল (1 atm) চাপের সমান হয় এবং তরলটি বুদবুদসহ ফুটতে থাকে,তাকে সেই তরল পদার্থের স্ফ‌ুটনাঙ্ক বলে। তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তরলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে থাকলে এক পর্যায়ে তাপমাত্রা স্থির হয়ে যায়। এর পর আর তাপ প্রয়োগ করলেও তাপমাত্রার কোন পরিবর্তন হয়না। একটি নির্দিষ্ট সময় পর অর্থাৎ যতক্ষণে সম্পূর্ণ তরল বাষ্পে পরিণত হয় ততক্ষণ পর আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই স্থির তাপমাত্রাটিই হল স্ফুটানাঙ্ক। প্রকৃতপক্ষে এই স্থির তাপমাত্রায় যে তাপ প্রয়োগ করা হয় তা কেবল তরল থেকে পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি তরলের স্ফুটনাংক দেওয়া হল:

তরলের নাম – স্ফুটনাঙ্ক

ইথাইল – ৭৮°C
বেঞ্জিন – ৮০°C
জল – ১০০°C
গ্লিসারিন – ২৯০°C
পারদ – ৩৫৭°C
তরল হাইড্রোজেন- ২৫৩°C
তরল অক্সিজেন – ১৮৩°C
ইথার – ৩৫°C
অ্যাসিটোন – ৫৬°C
ক্লোরোফর্ম – ৬১°C

বাষ্পীভবনঃ

বাষ্পীভবন বা যৌগের বাষ্পীকরণ হল পদার্থকে তরল পর্যায় থেকে বাষ্পে পর্যায়ে রূপান্তর । বাষ্পীভবনের দুটি প্রকার রয়েছে:
(১) বাষ্পে পরিনত
(২) ফুটন ।

বাষ্পীভবন একটি পাত্রে ঘটে, যেখানে ফুটন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাষ্পীভবন হ’ল তরল পর্যায় থেকে বাষ্প পর্যায়ে রূপান্তর । বাষ্পীভবন হবার সময় প্রদত্ত চাপে স্ফুটনাংকের নীচের তাপমাত্রায় ঘটে। বাষ্পীভবন পৃষ্ঠতলে ঘটে। বাষ্পীভবন তখনই ঘটে যখন কোনও পদার্থের বাষ্পের আংশিক চাপ ভারসাম্যের বাষ্পের চাপের চেয়ে কম থাকে । উদাহরণস্বরূপ, ক্রমাগত নিম্ন চাপের কারণে, দ্রবণ থেকে বের করে দেওয়া বাষ্পগুলি শেষ পর্যন্ত একটি ক্রায়োজেনিক তরলকে নীচে ফেলে রাখে।

ফুটন এছাড়াও তরল পর্যায় থেকে গ্যাস পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে রূপান্তর হয়। তবে ফুট্ন তরল পৃষ্ঠের নীচে একপ্রকার বাষ্প বুদবুদ হিসাবে বাষ্পের গঠন করে। উদ্বেগ ঘটে যখন পদার্থের ভারসাম্যীয় বাষ্পের চাপ পরিবেশগত চাপের চেয়ে বেশি বা সমান হয়। যে তাপমাত্রায় ফুটন্ত ঘটে তা হল ফুটন তাপমাত্রা। ফুটন তাপমাত্রা পরিবেশের চাপের সাথে পরিবর্তিত হয়।

বাষ্পায়ন এবং স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্যঃ

বাষ্পায়ন এবং স্ফুটন বাষ্পীভবনেরই অংশ কিন্তু বাষ্পায়ন এবং স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্য আছে। বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের পার্থক্য নিম্নরূপ—

১। বাষ্পায়ন সব উষ্ণতায় ঘটে। অন্যদিকে প্রমাণ চাপে, স্ফুটন একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ঘটে।

২। বাষ্পায়ন খুব ধীরে হয়, উষ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়নের হার বাড়ে। অন্যদিকে স্ফুটনে অতি দ্রুত গতিতে বাষ্পায়ন হতে থাকে। যতক্ষণ স্ফুটন হয়, ততক্ষণ তরলের উষ্ণতা বাড়ে না স্থির থাকে।

৩। বাষ্পায়নে প্রয়োজনীয় লীন তাপ তরল নিজেদের থেকে সংগ্রহ করে, ফলে তরলের উষ্ণতা কমে। অন্যদিকে স্ফুটনে প্রয়োজনীয় লীনতাপ, তরলটি প্রযুক্ত তাপ থেকে সংগ্রহ করে, তাই তরলের উষ্ণতা একই থাকে।

৪। তরলের সমস্ত অংশ থেকে বাষ্পায়ন হয় না। বাষ্পায়ন তরলের শুধু অপর দল থেকেই হয়। অন্যদিকে স্ফুটন তরলের সমস্ত অংশ থেকে হয়।

৫। বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ উষ্ণতার উপর নির্ভর করে। যেমন- ঘরের উষ্ণতায় জলের বাষ্পায়নের জন্য লীন তাপ অনেক বেশী। উষ্ণতা যত বাড়ে লীন তাপ কত কমে। অন্যদিকে স্ফুটনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তরলের নির্দিষ্ট লীনতাপ আছে। যেমন- জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালোরি।

৬। যেকোনো চাপে বাষ্পায়ন হয়। অন্যদিকে স্ফুটনে তরলের উপরের বাষ্প চাপ বাইরে বায়ুর চাপের সমান হয়।