নিষেক ও দ্বি-নিষেকের মধ্যে পার্থক্য

নিষেক (Fertilization):

যে পদ্ধতিতে পুংগ্যামেট এবং স্ত্রীগ্যামেট স্থায়ীভাবে মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) কোশ জাইগােট গঠন করে নতুন জীব সৃষ্টি করে, তাকে নিষেক (Fertilization) বলে। অর্থাৎ বিসদৃশ দুটি জননকোষ অর্থাৎ স্ত্রীগ্যামেট তথা ডিম্বানুর সঙ্গে পুংগ্যামেটের যৌন মিলনকে নিষেক বলে। নিষেকক্রিয়া হল গ্যামিটদ্বয়ের মিলনের মাধ্যমে একই প্রজাতির নতুন একটি জীব উৎপাদন। প্রাণীর ক্ষেত্রে শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং প্রকারান্তরে ভ্রুণ তৈরি করে।

প্রাণীর প্রজাতির উপর নির্ভর করে নিষেক স্ত্রী- প্রজাতির দেহের ভিতরে অন্তঃনিষেক প্রকিয়ায় বা দেহের বাইরে বহিঃনিষেক প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। নতুন প্রাণ তৈরি হবার সম্পূর্ণ এ প্রক্রিয়াকে প্রোক্রিয়েশন এবং এর জন্য প্রজাতিসমূহের কার্যাবলীকে প্রজনন বলে।

দ্বি-নিষেক (Double Fertilization):

দ্বি-নিষেক হলো ফুল উৎপাদনকারী (সপুষ্পক উদ্ভিদ ) উদ্ভিদের একটি জটিল নিষেক পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় দুটি পুং গ্যামেট (শুক্রাণু) এর সঙ্গে একটি স্ত্রী-গ্যামেটোফাইট অংশগ্রহণ করে । এটা শুরু হয় যখন একটি পরাগরেণু স্ত্রী স্তবকের গর্ভমুণ্ডে পতিত হয় । পরাগ রেণু তারপর আর্দ্রতা এবং পুষ্টি গ্রহণ শুরু করে , অতপর একটি পরাগ টিউব গঠিত হয় যা নলের মাধ্যমে ডিম্বাশয় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পরাগ টিউবের সম্মুখ প্রান্ত তারপর ডিম্বাশয়ের ডিম্বকরন্ধ্রের মাধ্যমে ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে। পরাগ টিউব মেগাগ্যামেটোফাইটের মধ্যে দুটি পুং গ্যামেট (শুক্রাণু) মুক্তির জন্য মূলত অগ্রসর হয়।

এন্ডোস্পার্ম গঠনে অবদান রাখা দুটি কেন্দ্রীয় মাতৃনিউক্লিয়াস একই একক মায়োটিক বস্তু হিসেবে মাইটোসিস দ্বারা উদ্ভূত হয়, যা ডিম্বাণুর জন্ম দেয়। জেনেটিক গঠনে ট্রিপ্লয়েড এন্ডোস্পার্মের মাতৃঅবদান ভ্রূণের দ্বিগুণ। নিটালস,যা একটি অপুষ্পক বীজ উদ্ভিদগণ, তাতেও দ্বি-নিষেক প্রক্রিয়া শনাক্ত করা হয়েছে।

নিষেক ও দ্বি-নিষেকের মধ্যে পার্থক্যঃ

দ্বি-নিষেক হলো ফুল উৎপাদনকারী (সপুষ্পক উদ্ভিদ ) উদ্ভিদের একটি জটিল নিষেক পদ্ধতি। নিষেক ও দ্বি-নিষেকের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১। যে পদ্ধতিতে পুংগ্যামেট এবং স্ত্রীগ্যামেট স্থায়ীভাবে মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) কোশ জাইগােট গঠন করে নতুন জীব সৃষ্টি করে, তাকে নিষেক বলে। অন্যদিকে, একইসাথে ডিম্বাণুর সাথে একটি শুক্রাণুর মিলন এবং সেকন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে অপর একটি শুক্রাণুর মিলনকে দ্বি-নিষেক বলে।

২। নিষেকে সুপষ্পক উদ্ভিদ ঘটে। অন্যদিকে, দ্বি-নিষেকে শুধু আবৃতজীবি উদ্ভিদ ঘটে।

৩। নিষেকে একটি পুংগ্যামেটের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, দ্বি-নিষেকে দুটি পুংগ্যামেটের প্রয়োজন হয়।

৪। নিষেকের ফলে শুধু ভ্রুণের উৎপত্তি হয়। অন্যদিকে, দ্বি-নিষেকে ভ্রুন ও শস্য টিস্যু উৎপন্ন হয়।