গ্রানাইট ও মার্বেলের মধ্যে পার্থক্য

গ্রানাইট (Granite):

গ্রানাইট উদবেধী আগ্নেয় শিলার অন্তর্গত। একে পাতালিক শিলা ও বলে। গ্রানাইট শিলার কনা গুলি প্রায় সমান আকৃতি র হয় বলে একে সম আকৃতির কনা যুক্ত শিলা বলা হয়। এতে সিলিকার পরিমান খুব বেশি পরিমানে (৬০%এর বেশি) থাকে বলে এটি একটি আম্লিক শিলা। গ্রানাইট হল আগ্নেয় শিলা যা উচ্চ চাপের অবস্থার অধীনে গভীর গভীরতায় গলিত ম্যাগমা শীতল হওয়ার ফলে এবং তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে হ্রাসের ফলে গঠিত হয়েছিল। শিলা গঠনের এই অবস্থার অধীনে, এর স্ফটিককরণ আরও সম্পূর্ণরূপে ঘটে।

অতএব, সমস্ত গ্রানাইটগুলির একটি উচ্চারিত দানাদার কাঠামো রয়েছে। শস্যের আকারের উপর নির্ভর করে, গ্রানাইটগুলি মোটা-দানাযুক্ত (1 মিলিমিটারের বেশি শস্যের আকার), মাঝারি দানাযুক্ত (0.25 থেকে 1 মিমি পর্যন্ত) এবং সূক্ষ্ম শস্য (0.25 মিমি বেশি নয়) ভাগ করা হয়।

মার্বেল (Marble):

মার্বেল পাথর হলো এক ধরনের ক্রিসটালাইন মেটামরফিক পাথর, যা বহুযুগ ধরে মাটির তলায় তৈরি হয়। খেলার মার্বেল আর মার্বেল পাথর এক জিনিস নয়। সাধারণত খেলার মার্বেল হয় কাচের, বিভিন্ন রঙের কাচ গলিয়ে বানানো হয়। অন্যদিকে মার্বেল পাথর হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি। মার্বেল পাথরের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম কার্বনেট। শামুক ও ঝিনুকের খোলসও ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি। এর সংকেত CaCO3। মার্বেল সাধারণত হালকা রঙের একটি শিলা। যখন এই পাথর বিশুদ্ধ থাকে, তখন সাদা রঙের হয়। বিভিন্ন খনিজ উপাদানের মিশ্রণের ফলে এর রং নীল, ধূসর, গোলাপি, হলুদ, সবুজ বা কালো রঙের হতে পারে। যে সব দেশে মার্বেল পাথর বেশি পাওয়া যায় সেসব দেশগুলোর মধ্যে ইতালি, চীন, ভারত ও স্পেন উল্লেখযোগ্য।

ভাস্কর্য নির্মাণে সাদা মার্বেল পাথরের কদর সবচেয়ে বেশি। গ্রিক ও রোমানদের অনেক দেব-দেবী ও ফারাওদের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত রাজকীয় সমাধি তাজমহল নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে মাকরানা নামের হোয়াইট মার্বেল। এ ছাড়া সৌদি আরবে অবস্থিত মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে মূল কাবা শরিফের চারপাশে তাওয়াফ চত্বরের দেড় শ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে আছে মার্বেল পাথরের টাইলস।

মোজাইক তৈরিতেও মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়। কংক্রিটের ফ্লোরের ওপর মার্বেল পাথরকুচি (৬ মিমির ছোট), সিমেন্ট, সাদা পাউডার, পানি নিরোধক এজেন্ট ইত্যাদি আনুপাতিক হারে মিশিয়ে যে ফ্লোর ফিনিশ তৈরি করা হয় তাকে মোজাইক বলে। মার্বেল পাথর অতিরিক্ত আলো ও তাপ শোষণ করতে পারে। তাই শোবারঘরে মার্বেল পাথরের টাইলস ব্যবহার করলে অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

গ্রানাইট ও মার্বেলের মধ্যে পার্থক্যঃ

মার্বেল পাথর হলো এক ধরনের ক্রিসটালাইন মেটামরফিক পাথর, যা বহুযুগ ধরে মাটির তলায় তৈরি হয়। গ্রানাইট ও মার্বেলের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। গ্রানাইট অপেক্ষাকৃত শক্ত আভ্যন্তরীন সূক্ষ্ম ছিদ্র বেশী তাপে ও চাপে প্রসারিত হয় না। অন্যদিকে, মার্বেল গ্রানাইটের চেয়ে নরম পাথর অভ্যন্তরীন সূক্ষ্ম ছিদ্র কম তাপ ও চাপে প্রসারিত হয়।

২। মার্বেল প্যাটার্ন বৈচিত্র্যময়, লাইন প্যাটার্ন ধারালো হয়, এবং রঙ পরিবর্তন সমৃদ্ধ হয়। অন্যদিকে, গ্রানাইটগুলি স্পার্কযুক্ত এবং কোন স্পষ্ট প্যাটার্ন নেই, তবে রঙটি সাধারণত সাদা এবং ধূসর, খুব একক।

৩। গ্রানাইটে নখের আঁচড় পড়ে না, খোঁচালে দাগ পড়ে না। অন্যদিকে, মার্বেলে নখের আঁচড় পড়ে যায়, সামান্য খোঁচাতে এটির সারফেস নষ্ট হয়ে যায়

৪। টেক্সচার গ্রানাইট দেখতে মার্বেলের মতো চকচকে নয়, মার্বেলের তুলনায় দাম কম। অন্যদিকে, মার্বেল বেশ চকচকে ও সুন্দর দেখতে, গ্রানাইটের চেয়ে মার্বেলের দাম বেশি।

৫। গ্রানাইটে কার্বনিক এসিড দিলে কিছুই হয় না। ভিক্সল ও ট্রিক্সল এবং অন্যান্য ফ্লোর ক্লিনার দিয়ে এটি পরিষ্কার করা যায়। অন্যদিকে, মার্বেলে কার্বনিক এসিড দিলে এটি পুড়ে যায়। ভিক্সল ও ট্রিকলসহ বাজারে পাওয়া যায়- এমন সব ফ্লোর ক্লিনার দিয়ে এটি পরিষ্কার করতে গেলেই এতে দাগ পড়ে যায়।

৬। গ্রানাইট হল হাজার বছর ধরে পরিবর্তন হয়ে চলা পাথর। এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়ে চলছে। হয়তো এটা চোখে পড়ছে না। তবে সেটি প্রতিনিয়ত ঘটছে। অন্যদিকে, মার্বেল হাজার বছর ধরে তাপে ও চাপে পরিবর্তিত হওয়া পাথর। এটি পরিবর্তন হবার কোন সম্ভাবনা নেই।