মোট সুদ ও নীট সুদের মধ্যে পার্থক্য

মোট সুদ (Gross interest)ঃ

নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গৃহীত ঋণের জন্য ঋণ গ্রহীতা ঋণ দাতাকে যে বাড়তি অর্থ প্রদান করে তাকে মোট সুদ বলে। মোট সুদের মধ্যে চারটি উপাদান থাকে :

                  ক. নীট বা বিশুদ্ধ সুদ   
                  খ. ঝুঁকি বহনের বীমা 
                  গ. ঋণ আদায় সংক্রান্ত অসুবিধার বিনিময় মূল্য 
                  ঘ. ব্যবস্থাপনার পুরস্কার

নীট সুদ (Net Interest)ঃ

মোট সুদের একটি অংশ হলো নীট সুদ। ঋণ দাতার অপরাপর প্রত্যাশিত আনুষঙ্গিক প্রাপ্তি বিবেচনার বাইরে রেখে কেবল ঋণ হিসাবে গৃহীত আর্থিক মূলধন ব্যবহারের বিনিময়ে যে সুদ ঋণ গ্রহীতা ঋণ দাতাকে দেয়, তাকে নীট সুদ বলে। মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতা আছে। সেই উৎপাদন ক্ষমতার জন্য মূলধন ব্যবহারকারী নীট মূল্য বা সুদ প্রদান করে। মোট সুদ থেকে ঋণ দান সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক ব্যয়, যেমন − ঝুঁকি বহনের ব্যয় ও আদায় সংক্রান্ত অসুবিধার মূল্য − এসব বাদ দেওয়ার পর যে সুদ থাকে, তাকে নীট সুদ বলা হয়। যেমন − কোন ঋণ দাতা ১০ হাজার টাকা মোট সুদ হিসাবে পেলে সেই ১০ হাজার টাকাই নীট সুদ হিসাবে বিবেচ্য নয়। ধরা যাক, ঋণ দাতার আনুষঙ্গিক ব্যয় হলো ৪ হাজার টাকা। সেই ১০ হাজার টাকা থেকে আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসাবে ৪ হাজার টাকা বাদ দিলে ৬ হাজার টাকা হবে নীট সুদ।

মোট সুদ ও নীট সুদের মধ্যে পার্থক্যঃ

মোট সুদ ও নীট সুদের সংজ্ঞা থেকে তাদের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট সময় অন্তে ঋণগ্রহীতা ঋণ দাতাকে আসলের অতিরিক্ত যে মোট অর্থ প্রদান করে, তা হলো মোট সুদ। অপরদিকে মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতাকে কেবল বিবেচনায় রেখে যে অর্থ প্রদান করা হয়, তাকে নীট সুদ বলে। মোট সুদ ও নীট সুদের পার্থক্যগুলো, যা সংজ্ঞা থেকে উপলদ্ধি করা যায়, সেগুলো হলো −

১। মোট সুদ একটি প্রসারিত ধারণা। অন্যদিকে নীট সুদ মোট সুদেরই একটি অংশ।

২। মোট সুদের মধ্যে নীট সুদ ছাড়াও আনুষঙ্গিক কিছু ব্যয় বা প্রাপ্তি বিবেচনা করা হয়। যেমন, ঋণ দাতার পারিশ্রমিক, ঝুঁকি বহনের মুনাফা, নগদ অর্থ হাত ছাড়া করার ফলে সৃষ্ট অসুবিধাজনিত ব্যয় এসব বাবদ বাড়তি কিছু অর্থ নীট সুদের সাথে যোগ হওয়ার পর মোট সুদ পাওয়া যায়। অন্যদিকে নীট সুদ হলো এসব আনুষঙ্গিক ব্যয় ব্যতিরেকে বিশুদ্ধ সুদ।

৩। সময়, পরিস্থিতি ও স্থান ভেদে মোট সুদ ভিন্ন হতে পারে। কারণ আনুষঙ্গিক ব্যয় বিভিন্ন
প্রেক্ষিতে বিভিন্ন হয়। অন্যদিকে একটি দেশে সর্বত্র নীট সুদ একই থাকতে পারে।

৪। মোট সুদের একটি অংশ হিসাবে নীট সুদ বিবেচিত হওয়ায় মোট সুদের তুলনায় নীট
সুদ কম হয়।

৫। মোট হলো সমাগ্রিক বিষয়। অন্যদিকে নীট সুদ মোট সুদের অংশ মাত্র।