হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্য

হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack):

করোনারি ধমনির মধ্যে যখন একটি ব্লক তৈরি হয়, তখন হার্ট অ্যাটাক হয়। এই ধমনিগুলোর মধ্য দিয়ে রক্ত কার্ডিয়াক পেশি পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। যেহেতু হৃৎপিণ্ড একধরনের পেশি, সুতরাং তার কাজের জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত। যখন করোনারি ধমনিতে ব্লকেজ তৈরি হয়, হৃৎপিণ্ডে প্রয়োজনীয় রক্ত আসা বন্ধ হয়ে যায় বলে হার্ট অ্যাটাক হয়। যদি ধমনিগুলোর ব্লকেজ দ্রুত অপসারণ করা না যায়, তাহলে হৃৎপেশি মরে যেতে শুরু করে।

হার্ট অ্যাটাকের সময়ে প্রচণ্ড বুকব্যথার অনুভূতি হয়। এর সঙ্গে বুকে প্রচণ্ড চাপ, বুক দুই পাশ থেকে চেপে আসা ইত্যাদি সমস্যা অনুভূত হয়। কেউ কেউ বাম কাঁধ, বাম বাহু থেকে শুরু করে শরীরের বাম দিকের ওপরের অংশেও ব্যথা অনুভব করতে পারেন। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে যেমন হয়, হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড তেমন হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দেয় না।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (Cardiac Arrest):

হৃৎপিণ্ড যখন হৃৎকম্পন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তখন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। হৃৎপিণ্ডে হঠাৎ গোলযোগের ফলে এটি হয় এবং এর ফলে হার্টবিট অনিয়মিত হতে শুরু করে। হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে এর প্রাথমিক পার্থক্য এটাই যে হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃৎপেশিতে রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেলেও হার্টবিট থেমে যায় না।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে যেহেতু হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়, তাই প্রথমেই মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায় না। অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া না গেলে, এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার মানুষের মাত্র কয়েক মিনিটেই মৃত্যু হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্যঃ

হার্ট অ্যাটাকের সময়ে প্রচণ্ড বুকব্যথার অনুভূতি হয়। এর সঙ্গে বুকে প্রচণ্ড চাপ, বুক দুই পাশ থেকে চেপে আসা ইত্যাদি। হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে, পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় না। বরং তা কাজ করতে থাকে। কিন্তু তার একটি অংশের মধ্যে দিয়ে রক্ত চলাচল বাঁধা পায়। ধমনীতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে।

২। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাত করে চেতনা হারিয়ে ফেলতে পারে। এর আগে কিছু পূর্ব সতর্ক বার্তাও দিতে পারে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। বুকে হালকা চিনচিনে ব্যথা হতে পারে, শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, অস্বস্তি অনুভব করা এবং ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে।

অন্যদিকে, হার্ট অ্যাটাকের সময়ও এ ধরনের সমস্যাগুলোই দেখা দিবে। তবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মত এতটা তীব্র নাও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো।

৩। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদযন্ত্র সক্রিয় থাকবে যা তিনি অনুভব করতে পারবেন। অন্যদিকে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হদস্পন্দনই থেমে যাবে।

৪। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন অঙ্গে রক্তা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। খুব দ্রুত রোগীকে সিপিআর (কৃত্তিম উপায়ে অক্সিজেন দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করা) না দিলে অথবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলেও রোগী মারাও যেতে পারে।

অন্যদিকে, কার্ডিয়াক অ্যাটাক হলে দেশের মাঝে থাকা ধমণীগুলো নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে। শুরুতে প্রাথমিক অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ না হলেও এর কার্যকারিতে কমে আসতে থাকে। দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়া না হলে মারা যেতে পারেন রোগী।

৫। হাসপাতালের বাইরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়া ৯০ শতাংশ রোগীরই পরিণতি হয় মৃত্যু। অন্যদিকে, হার্ট অ্যাটাক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মত ততটা গুরুত্ব না হলেও এক্ষেত্রে যদি আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি সময় চিকিৎসকের সামনে হাজির করা না যায় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে।