হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথিকের মধ্যে পার্থক্য

হোমিওপ্যাথিক (Homeopathy):

“হোমিওপ্যাথি” শব্দটি হ্যানিম্যান তৈরি করেছিলেন এবং ১৮০৭ সালে প্রথম মুদ্রণে প্রকাশিত হয়েছিল। স্কটিশ চিকিৎসক এবং রসায়নবিদ উইলিয়াম কুলেনের জার্মান ভাষায় একটি মেডিকেল গ্রন্থ অনুবাদ করার সময় হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে ধারণা করেছিলেন। ম্যালেরিয়া নিরাময়ের জন্য সিনকোনার ব্যবহার সম্পর্কিত কুলেনের তত্ত্ব সম্পর্কে সন্দেহাতীত হলেন, হ্যানিম্যান কী ঘটবে তা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষভাবে কিছু ছাল খেয়েছিলেন। তিনি জ্বর, কাঁপুনি এবং জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করেছেন: ম্যালেরিয়ার মতোই লক্ষণগুলি। এ থেকে হ্যানিম্যান বিশ্বাস করেছিলেন, যে সমস্ত কার্যকর ওষুধগুলি থেকে চিকিৎসা করা হয়।

হোমিওপ্যাথি হল একটি ছদ্মবৈজ্ঞানিক বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি ১৭৯৬ সালে জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান আবিষ্কার করেন। হোমিওপ্যাথ নামে পরিচিত এর চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন যে পদার্থ সুস্থ মানুষের মধ্যে একটি রোগের উপসর্গ সৃষ্টি করে সেই একই পদার্থ অসুস্থ মানুষের মধ্যে একই ধরনের উপসর্গ নিরাময় করতে পারে; এই মতবাদকে বলা হয় সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার, বা “সদৃশ সদৃশকে আরোগ্য করে”। হোমিওপ্যাথিক ঔষধকে রেমিডি বলা হয় এবং হোমিওপ্যাথিক ডায়োলেশন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায়, নির্বাচিত পদার্থ বারবার মিশ্রিত করা হয় যতক্ষণ না চূড়ান্ত পণ্যটি রাসায়নিকভাবে দ্রবণীয় থেকে আলাদা হয়।

প্রায়শই মূল পদার্থের একটি অণুও পণ্যটিতে থাকার আশা করা যায় না। প্রতিটি ডায়োলেশনে হোমিওপ্যাথ ঔষধটিকে আঘাত করতে পারে অথবা ঝাঁকি দিতে পারে, এই দাবী করে যে পাতলা পদার্থটি অপসারণের পরে মূল পদার্থটি মনে রাখে। চিকিৎসকরা দাবি করেন যে এই ধরনের প্রস্তুতকৃত ঔষধ, রোগীকে খাওয়ার পরে, রোগের চিকিৎসা বা নিরাময় করতে পারে। এলোপ্যাথির মাধ্যমে বহু রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত ফলাফল নিয়ে আসা যায় কিন্তু ৫০% ক্রনিক রোগই এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় নির্মূল হয় না। তরুন রোগের ক্ষেত্রে এলোপাথির চেয়েও দ্রুত ফলাফল দেয় হোমিওপ্যাথি।

এলোপ্যাথিক (Allopathic):

এলোপ্যাথিক চিকিৎসা, অথবা এলোপ্যাথি, একটি প্রাচীন শব্দ যা বিজ্ঞান-ভিত্তিক, আধুনিক চিকিৎসাকে সংজ্ঞায়িত করতে ব্যবহৃত হয়। শব্দটির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, শব্দটি বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে অস্টিওপ্যাথিক ওষুধের সাথে বিপরীতে ব্যবহৃত হয়।

হোমিওপ্যাথ এবং অন্যান্য বিকল্প ওষুধের প্রবক্তাদের মধ্যে, “এলোপ্যাথিক ঔষধ” এখন চিকিৎসা অনুশীলনের বিস্তৃত শ্রেণীকে বোঝায় যাকে কখনও কখনও পশ্চিমা ওষুধ, বায়োমেডিসিন, প্রমাণ-ভিত্তিক ওষুধ, বা আধুনিক ওষুধ বলা হয়। এই বর্ণনাটি ব্যবহার করা অব্যাহত ছিল। হোমিওপ্যাথি ছিল না এমন কিছু বর্ণনা করার জন্য। বলে যে “যদিও অনেক আধুনিক থেরাপিকে অ্যালোপ্যাথিক যুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বোঝানো যেতে পারে (যেমন, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য একটি রেচক ব্যবহার করে), স্ট্যান্ডার্ড মেডিসিন কখনই এলোপ্যাথিক নীতির প্রতি আনুগত্য দেয়নি” এবং “অ্যালোপ্যাথ” লেবেলটিকে “অত্যন্ত উপহাসমূলক বলে মনে করা হয়েছিল।

নিয়মিত ওষুধ দ্বারা বেশিরভাগ আধুনিক বিজ্ঞান-ভিত্তিক চিকিৎসা চিকিৎসা (উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন এবং কেমোথেরাপিউটিকস) স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের অ্যালোপ্যাথির সংজ্ঞার সাথে খাপ খায় না। হেই অসুস্থতা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করুন, বা একটি অসুস্থতার কারণ দূর করে উপশম করুন।

হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথিকের মধ্যে পার্থক্যঃ

হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথিক দুটিই রোগ নিরাময়ের বাহক হলেও উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথিকের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। এলোপ্যাথির মাধ্যমে বহু রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত ফলাফল নিয়ে আসা যায়। অন্যদিকে, ৫০% ক্রনিক রোগই এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় নির্মূল হয় না। তরুন রোগের ক্ষেত্রে এলোপাথির চেয়েও দ্রুত ফলাফল দেয় হোমিওপ্যাথি।

২। এলোপ্যাথিক ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়ার ফলে আরো দুরারোগ্য রোগের জন্ম হয়। যেমন ব্যথার ঔষধ খেলে কিডনি নষ্ট হতে থাকে। অন্যদিকে, হোমিওপ্যাথির তেমন কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। অর্থাৎ ব্যথার জন্য হোমিও ঔষধ খেলে আপনার কিডনি নষ্ট হবে না।

৩। বহু রোগ রয়েছে যেগুলির মূলত কোন এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নেই। সেসব ক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা আন্দাজ অনুমান ভিত্তিক চিকিৎসা দিয়ে থাকে, তাই রোগ কিছুটা কমলে একেবারে রোগ কখনই সাড়ে না, এই যেমন – আইবিএস, পাইলস, ফিস্টুলা, ভেরিকোসিল, স্পার্মাটোসিল ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্যদিকে, সার্জারী বহির্ভুত ৯০% রোগের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি একাই কভার করে যা একক ভাবে অন্যকোন চিকিৎসা পদ্ধতি করতে পারে না।

৪। এলোপ্যাথিক ঔষধ ইতর শ্রেণীর জীবজন্তুর উপর পরিক্ষিত এবং মানব শরীরে বহু পার্শপ্রতিক্রিয়া জন্ম দিয়ে থাকে। অন্যদিকে, হোমিও ঔষধ মানব শরীরে পরীক্ষিত। ফুর্মলা অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগ সেরে যায়।

৫। এলোপ্যাথির চিকিৎসা শাস্ত্রের নিজস্ব কোন সংবিধান নেই। প্রতিনিয়ত গবেষণা করে করে এলোপ্যাথি দিন দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে । অন্যদিকে, হোমিওপ্যাথির নিজস্ব সংবিধান এবং ঔষধের প্রয়োগ প্রণালী রয়েছে। ২০০ বছর আগে যে ঔষধটি যেভাবে ফল দিতো আজও সেই হোমিও ঔষধটি সেভাবেই ফল দিচ্ছে।

৬। এলোপ্যাথিক ঔষধের সংখ্যা অনেক কম। অন্যদিকে, হোমিওপ্যাথির যে পরিমান ঔষধ রয়েছে তার চার ভাগের এক ভাগ ঔষধও এলোপ্যাথি আজ পর্যন্ত আবিস্কার করতে পারেনি