ইসতিসনা এবং সালামের মধ্যে পার্থক্য

সালাম (Salam):

সালাম হলো পণ্যের আগাম ক্রয়-বিক্রয়। এটি সাধারণত কৃষিক্ষেত্র ও কুটিরশিল্পে বিনিয়োগের বেলায় ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক সম্মত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরিয়ত অনুমোদিত পণ্য অগ্রিম বিক্রি করাকে বাই সালাম বলা হয়। বাই সালামের বৈশিষ্ট্য হলো, অগ্রিম ক্রয়, আগে দাম পরে পণ্য। পণ্যের দাম চুক্তির সময় দিতে হয়।

এই পদ্ধতিতে অর্থায়নের সময় পণ্যের অস্তিত্ব থাকতে পারবে না। পণ্যের নাম, বিবরণ, পরিমাণ, গুণাগুণ, আকার ও দাম সুস্পষ্টভাবে চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হয়। সরবরাহের সময় ও স্থান আগে থেকে জানা থাকতে হবে। পণ্য পরিমাণযোগ্য, ওজনযোগ্য, গণনাযোগ্য ও পরিমাপযোগ্য হতে হবে।

ইসতিসনা (Istisna):

ইসতিসনা মানে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোনো জিনিস নির্মাণ বা উৎপাদন করে দেওয়ার জন্য কোনো দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। অর্থাৎ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে বা কিস্তিতে সম্মত মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রেতার আদেশে নির্দিষ্ট পণ্য তৈরি করে বিক্রি করাকে বাই ইসতিসনা বলা হয়। এই লেনদেনে পণ্য অস্তিত্ব লাভ করার আগেই বিক্রি করা হয়। বাই ইসতিসনার বৈশিষ্ট্য হলো, পণ্যের দাম অগ্রিম/এককালীন/কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। উৎপাদন ব্যয় নির্বাহের জন্য পণ্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করা যায়। উৎপাদনকাজ শুরু হলে চুক্তি বাতিল করা যায় না। পণ্য কোথায়, কিভাবে, কার খরচে সরবরাহ হবে, তা চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে দায়ী পক্ষের ওপর নির্দিষ্ট জরিমানা আরোপ করা যাবে- এমন শর্ত চুক্তিতে রাখা যাবে।

আবাসিক ভবন নির্মাণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাই ইসতিসনা একটি উপযোগী বিনিয়োগ পদ্ধতি। যদি কোনো গ্রাহক একখণ্ড জমির মালিক হন এবং বাড়ি নির্মাণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় তাহলে ব্যাংক বা বিনিয়োগদাতা ইসতিসনার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারে। একইভাবে আধুনিক বহু প্রকল্প পরিচালনায় এটি উপযোগী বিনিয়োগ পদ্ধতি।

ইসতিসনা এবং সালামের মধ্যে পার্থক্যঃ

ইসতিসনার এই পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রেখে ইসতিসনা এবং সালামের মাঝে কয়েকটি পার্থক্য রয়েছে যা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে নিম্নরূপ-

১. ইসতিসনা সর্বদা এমন জিনিসের উপর হয় যা তৈরী করার প্রয়ােজন হয়। অন্যদিকে, সালাম সকল জিনিসেই হতে পারে, চাই তা তৈরি করার প্রয়ােজন হােক কিংবা না হােক।

২. সালামে মূল্য সম্পূর্ণভাবে অগ্রিম পরিশােধ করা অপরিহার্য। অন্যদিকে, ইসতিসনায় তা অপরিহার্য নয়।

৩. সালাম চুক্তি যদি একবার সংঘটিত হয়ে যায়, তাহলে তাকে একতরফা বাতিল করা যাবে না। অন্যদিকে, ইসতিসনা চুক্তিতে দ্রব্য তৈরি শুরুর পূর্বে বাতিল করা যায়।

৪. সালামে পরিশােধের তারিখ ধার্য করা ক্রয়-বিক্রয়ের অন্যতম অংশ। অন্যদিকে, ইসতিসনায় পরিশােধের তারিখ ধার্য করা অপরিহার্য নয়।