ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য

অর্থনীতিঃ

অর্থনীতি বলতে এমন একটি শাস্ত্রকে বোঝায়, যা সীমিত সম্পদ ও আয় নিয়ে অসীম অভাব পূরণের নিমিত্তে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করে। স্যামুয়েলসনের মতে, ব্যক্তি ও সমাজ অর্থ বা অর্থ ছাড়া কেমন করে দুষ্প্রাপ্য উৎপাদনশীল সম্পদকে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য উৎপাদনের কাজে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করে এবং কীভাবে সমাজ ও জনসাধারণের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভোগের নিমিত্তে উক্ত সম্পদ বণ্টিত হয়, তা নিয়ে অর্থনীতি আলোচনা করে।

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতিঃ

এখন আমরা ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির সংজ্ঞা প্রদানের বলা উচিত যে, ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি কথাটি মূলত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর এ প্রতিষ্ঠান বলতে সাধারণত বাণিজ্যিক তথা উৎপাদনকারী, বিক্রয়কারী, বিপনণকারী ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকেই বোঝায়। সুতরাং, কোন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বা উদ্দ্যেশ্যাবলী অর্জনের নিমিত্তে এর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যেসব ব্যবস্থাপকীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় সেগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক তত্তে¡র পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ও প্রয়োগ সম্ভাব্যতা নির্ণয় সম্পর্কে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাকেই ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি বলে।

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্যঃ

অনেকেই ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতিকে পৃথক একটি শাস্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। তাদের মতে, ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি সাধারণ অর্থনীতিরই একটি অংশমাত্র। প্রকৃতপক্ষে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ অর্থনীতির সাথে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির কিছু মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পার্থক্যগুলো নিন্মরুপ-

১. অর্থনীতি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নীতিমালার কাঠামো নিয়েই আলোচনা করে । অন্যদিকে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি উক্ত নীতিমালার বাস্তব প্রায়োগিক রূপরেখা কীরূপ হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করে।

২. ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য এমনই যে এর বিষয়বস্তু কেবল ব্যষ্টিক অর্থনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে অর্থনীতি বলতে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় প্রকার অর্থনীতিকেই বোঝায়।

৩. সাধারণ ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন উৎপাদন ও উপকরণাদির মধ্যে আয়ের বণ্টন নিয়ে আলোচনা করা হয়। অর্থাৎ ভূমির খাজনা, শ্রমের মজুরি, মূলধনের সুদ, সংগঠনের জন্য মুনাফা ইত্যাদি বিষয়াদিই ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। অন্যদিকে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি কেবল মুনাফা বণ্টনসংক্রান্ত তত্ত¡ নিয়েই প্রধানত আলোচনা করে থাকে।

৪. ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মুনাফা সর্বাধিককরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু সাধারণ অর্থনীতি বিশেষ কোন উদ্দেশ্য অর্জনের পথ নির্দেশ করে না। এটি কেবলমাত্র অর্থনৈতিক চলকগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।

৫. সাধারণ অর্থনীতি হলো বর্ণনামূলক। অন্যদিকে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি হলো উদ্দেশ্যমূলক।

৬. সাধারণ অর্থনীতিতে অতীত পরিসাংখ্যিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত তত্ত্বসমূহ আলোচিত হয়। অন্যদিকে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতিতে অতীত পরিসাংখ্যিক তথ্যের ভিত্তিতে বর্ণিত তত্ত্বসমূহ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে কীরূপ ধারণ করতে পারে তাও নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালানো হয়।