Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

অর্থ ও মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য

অর্থ ও মুদ্রা

অর্থ (Money) :
সাধারণভাবে, অর্থ হলো কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বা সেবা গ্রহণ বা ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের উপাদান। অর্থ প্রধানত বিনিময়ের মাধ্যম, আয়-ব্যয়ের একক, মজুত দ্রব্যর মূল্য এবং বিভিন্ন সেবার পরিশোধের মান হিসেবে কাজ করে। যে কোনো উপাদান বা যাচাইযোগ্য স্মারক এ কাজগুলো করে থাকলে তা অর্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থের চারটি প্রধান কাজ হল:

বিনিময়ের মাধ্যম: অর্থ একটি সাধারণ মাপকাঠি যা পণ্য এবং পরিষেবার জন্য বিনিময় করা যেতে পারে। এটি লেনদেনকে সহজ এবং দক্ষ করে তোলে।

মূল্যের একক: অর্থ মূল্যের একটি পরিমাপ হিসাবে কাজ করে। এটি বিভিন্ন পণ্য এবং পরিষেবার মূল্য তুলনা করতে সহায়তা করে।

মজুত দ্রব্যর মূল্য: অর্থ মজুত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যবসাগুলিকে তাদের পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।

বিনিময়যোগ্যতা: অর্থ একটি নির্দিষ্ট দেশে বিনিময়যোগ্য। এটি ব্যবসাগুলিকে তাদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলি অন্যান্য দেশে বিক্রি করতে সহায়তা করে।

মুদ্রা (Currency) :
মুদ্রা পণ্য বা সেবা আদানপ্রদানের জন্য একটি বিনিময় মাধ্যম। এটি অর্থের একটি ধরন। অর্থ হচ্ছে সেই সকল বস্তু যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কারেন্সি জোন বা মুদ্রা এলাকা হচ্ছে একটি দেশ বা এলাকা যেখানে একটি নির্দিষ্ট মুদ্রাই অর্থনীতির প্রধান বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কার্যকারিতার ভিত্তিতে মুদ্রা বলতে আমরা বুঝি, ‘মুদ্রা একটি বিনিময় মাধ্যম, যা সবার নিকট গ্রহণীয় এবং যা মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে’। এই সংজ্ঞা থেকে আমরা বুঝতে পারি, মুদ্রা নিম্নলিখিত কর্ম সম্পাদন করে :

বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ যেকোনো লেনদেন করার জন্য মুদ্রা ব্যবহার করা যায়। যেমন: একটি বই কীনতে তুমি টাকা ব্যবহার কর। এখানে টাকা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মুদ্রার এটা সবচেয়ে প্রধান কাজ। সঞ্চয়ের ভাণ্ডার হিসাবে কাজ করে অর্থাৎ তুমি যখন ভবিষ্যতের জন্য কোনো সঞ্চয় করতে চাও, তখন টাকার মাধ্যমে এই সঞ্চয় করতে পার। টাকার অস্তিত্ব না থাকলে তোমার সঞ্চয়ের কাজটি খুবই দুরূহ হয়ে যেত। মূল্যের পরিমাপক হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ যেকোনো অর্থনৈতিক পণ্য বা সেবার মূল্য কত এটা নির্ধারণ করা টাকার একটি কাজ।

টাকার অস্তিত্ব আছে বলেই আমরা খুব সহজে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা নির্ধারণ করতে পারি, একটা বইয়ের মূল্য ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে পারি, এক কেজি চালের মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করতে পারি। এতে করে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সহজসাধ্য হয়ে যায়।

অর্থ ও মুদ্রার মধ্যে পার্থক্যঃ
অর্থ ও মুদ্রা দুটি ভিন্ন ধারণা, যদিও এগুলি প্রায়শই একসাথে ব্যবহৃত হয়। নিচে অর্থ ও মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

অর্থশাস্ত্রের ‘অর্থ’ এবং মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য করা হয়। ইংরেজিতে বললে, Money এবং Currency এক কথা নয়। ইংরেজি Money বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে অর্থ। Currency বাংলা প্রতিশব্দ টাকা বা মুদ্রা । কাগজের টাকাকে ইংরেজিতে নোট বা বিল (আমেরিকা) এবং মুদ্রাকে কয়েন বলা হয়। নোট আর মুদ্রা মিলিয়ে বাংলায় Currency বলা যেতে পারে: টাকাপয়সা ।

Money শব্দটা রোমান দেবী জুনোর ডাক নাম মনেতা থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। এই দেবীর মন্দিরের আশেপাশে নাকি মুদ্রা বা মুদ্রিত হতো। Currency শব্দটা এসেছে ল্যাটিনমূলক ফরাসি ক্রিয়া, Courir থেকে, যার অর্থ দৌড়ানো। একই ক্রিয়া থেকে কুরিয়ার (সার্ভিস), কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স। কাগজের টাকা এবং ধাতব মুদ্রা উভয়কেই মুদ্রা বলা হয় বাংলায়। সেদিক থেকে Currency এর বাংলা প্রতিশব্দ মুদ্রা।

অর্থ হল সেই জিনিস যার মাধ্যমে বিনিময় কর্ম, পরিমাণ-নির্ধারণ ও আর্থিকতার সংরক্ষণ হয়ে থাকে; কিন্তু একে আইনতঃ বাধ্যতামূলক বিনিময়-মাধ্যমরূপে চুড়ান্ত স্থিরীকৃত করা জরুরী নয়। যেমন চেক, প্রাইজ-বন্ড্ প্রভৃতি দস্তাবেজ ও প্রতিশ্রুতিপত্র দ্বারা লোকেরা পণ্য বিনিময় করে থাকে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি তার প্রাইজ-বন্ড দ্বারা কোন মূল্য আদায় করতে চায় এবং প্রাপক তার প্রাপ্য অধিকার এ বন্ডের মাধ্যমে নিতে রাজী না হয়, তাহলে তাকে তা নেওয়ার জন্য আইনতঃ বাধ্য করা যেতে পারে না।

অন্যদিকে, কারেন্সী বা মুদ্রা সেই অর্থের নাম, যাকে আইনগতভাবে অন্তর্দেশীয় বিনিময়-মাধ্যমরূপে নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন ডলার, টাকা প্রভৃতি কারেন্সীনোট। যদি কেউ টাকার মাধ্যমে কোন কিছুর মূল্য আদায় করে, তবে প্রাপককে তা নিতে আইনতঃ বাধ্য করা যাবে।

অর্থ এবং মুদ্রা উভয়ই অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থ লেনদেন এবং বিনিময়ের জন্য একটি সহজ উপায় প্রদান করে। অন্যদিকে, মুদ্রা অর্থের একটি নির্দিষ্ট রূপ যা পণ্য এবং পরিষেবা কেনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

Exit mobile version