Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য

মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু

মৌসুমী জলবায়ু (Monsoon Climate):

মেীসুমি বায়ু শব্দটি ইংরেজি শব্দ হল Monsoon। মৌসুমী কথাটির উৎপত্তি আরবি শব্দ মৌসিম (Mousim) থেকে যার অর্থ হল ঋতু বা কাল। যে জনবায়ু শীতকালে এবং গ্রীষ্মকালে পরস্পর বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয় সেই বায়ুপ্রবাহকে মৌসুমী বায়ু বলে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে জল ও স্থলভাগে দিন ও রাত্রির উত্তাপের তারতম্যের জন্য যে বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয় তাই মৌসুমি বায়ু এবং যে অঞ্চল বা দেশের ওপর দিয়ে এ বায়ুপ্রবাহিত হয় সেসব দেশের জলবায়ুকে মৌসুমে জলবায়ু বলে। এ জলবায়ু শীতকালে স্থলভাগ হতে জলভাগের দিকে গ্রীষ্মকালে জলভাগ হতে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। এজন্য গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিবহুল এবং শীতকালে প্রায় বৃষ্টিহীন থাকে। এতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অধিক এবং আদ্রতা বৃদ্ধি পায়।

মৌসুমী জলবায়ু সাধারণ ১০° থেকে ৩০° উত্তর অক্ষাংশে এবং ১০° থেকে ৩০° দক্ষিণ অক্ষাংশে বিস্তৃত। আঞ্চলিক বিন্যাসের দিক থেকে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ-পূর্ব চীন ও জাপানের দক্ষিণাংশ এ জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু (Mediterranean Climate):

উপক্রান্তীয় মহাদেশগুলোর পশ্চিমপ্রান্তে যে জলবায়ু বিরাজ করে, তাকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। আর ঐ অঞ্চলকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল বলা হয়। অর্থাৎ সাধারনত উভয় গোলার্ধে ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে মহাদেশগুলির পশ্চিম অংশে যে জলবায়ু দেখা যায়, তাকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশ গুলিতে এই জলবায়ুর বিস্তার ও প্রভাব সব থেকে বেশি বলে একে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলা হয়ে থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গত দিক থেকে অন্য জলবায়ুর থেকে সম্পূর্ন আলাদা। এই জলবায়ু অঞ্চলে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য কোন জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায় না।

ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশ সমূহ, যেমন – ইউরোপের স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, ফ্রান্স, গ্রিস প্রভৃতি দেশে; আফ্রিকার মরক্কো, টিউনেশিয়া, লেবানন, আলজেরিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার তুর্কি, লেবানন, ইস্রায়েল ও সিরিয়ায় এই জলবায়ু দেখা যায়।

মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্যঃ

ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হচ্ছে মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য। এই মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর কিছু গুরুত্বপূর্ন পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১। মৌসুমি জলবায়ু ১০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দেখা যায়। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দেখা যায়।

২। মৌসুমি জলবায়ু ভারত, বাংলাদেশ ও দক্ষিন ও পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোতে বেশি লক্ষ্য করা যায় । অন্যদিকে,ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু সাধারণত ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশ গুলিতে দেখা যায়। যেমন – ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্স।

৩। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মকালে বিপরীত মুখী উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুতে শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু ও গ্রীষ্মকালে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়।

৪। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে প্রধান চারটি ঋতুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । যথা – শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে কেবল দুটি ঋতুর দেখা যায়। যথা – শীত ও গ্রীষ্ম

৫। মৌসুমি জলবায়ুর গ্রীষ্মকাল হয় আর্দ্র এবং শীতকাল হয় শুষ্ক । অন্যদিকে, ভূমধসাগরীয় জলবায়ুর গ্রীষ্মকাল হয় শুষ্ক এবং শীতকাল হয় আর্দ্র।

৬। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কিছু স্থানীয় বায়ু প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। যেমন – আঁধি, কালবৈশাখী। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলেও স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের প্রাধান্য দেখা যায় । যেমন – মিস্ট্রাল, সিরক্কো

৭। মৌসুমি জলবায়ুতে মোট বৃষ্টিপাতের ৮০% থেকে ৯০% বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে যে টুকু বৃষ্টিপাত হয় তার বেশির ভাগ শীতকালে হয়ে থাকে।

৮। মৌসুমি জলবায়ুতে প্রধানত দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে । অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মূলত শীতকালে দক্ষিন- পশ্চিম, পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

৯। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায় এবং শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে। অন্যদিকে, ভূমধসাগরীয় জলবায়ুতে শীতকালের দুই তিন মাস ব্যতিত সারা বছর রৌদ্র উজ্জ্বল মেঘমুক্ত আবহাওয়া বিরাজ করে । গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে ২১ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এবং শীতকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।

১০। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে পর্নমোচী বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায়। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে সাধারণত গুল্ম জাতীয় ও ঝোপঝাড়ের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।

Exit mobile version