পুষ্টি ও পরিপাকের মধ্যে পার্থক্য

পুষ্টি:

পুষ্টি হলো জীবের একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি এমন প্রক্রিয়া হিসাবেও সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যার মাধ্যমে জীবগুলি খাদ্য গ্রহণ করে, হজম করে, শোষণ করে, পরিবহন করে। শোষণের পরে খাদ্য উপাদানগুলো দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধি জন্য নতুন কোষ গঠন করে। সুতরাং যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত হয়ে দেহে শোষিত হয় তাকেই পুষ্টি বলে।

আমাদের প্রত্যেকে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদানগুলির সাথে সুষম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করা জরুরি কারন পুষ্টিকর খাদ্য দেহে তাপ উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ও রক্ষাণাবেক্ষণ করে। উদ্ভিদ মাটি ও পরিবেশ থেকে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি , শরীরবৃত্তীয় কাজ ও প্রজননের জন্য যেসব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে তাই উদ্ভিদ পুষ্টি৷ উদ্ভিদের পুষ্টির উৎস বায়ুমণ্ডল, জল ও মাটি৷ এর ধরন দুটি,

ম্যাক্রোউপাদান : ১০টি ৷ যথা :- N , K, P, Ca, Mg, C, H, O, Fe এবং S
মাইক্রোউপাদান: ৬টি ৷ যথা :- Zn, Mn, Mo, B, Cu এবং Cl

পরিপাক:

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রাণীর ভুক্ত, অদ্রবণীয়, অশোষণীয়, জটিল খাদ্য নির্দিষ্ট উৎসেচকের প্রভাবে আর্দ্র-বিশ্লেষিত হয়ে দ্রবণীয়, শোষণীয়, সরল খাদ্যে পরিণত হয়, তাকে পরিপাক বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে, জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু উৎসেচকের সহায়তায় ভেঙে জীব দেহের বিপাকক্রিয়ার ব্যবহারযোগ্য সরল, দ্রবণীয় ও শোষণযোগ্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়, তাকে পরিপাক বলে। পরিপাকের দ্বারা খাদ্য বস্তু ভেঙ্গে ক্ষুদ্র অণুযুক্ত জলে দ্রবণীয় খাদ্য বস্তুতে পরিনত হয় এবং তরল আকারে রক্ত ও প্লাজার মধ্যে শোষিত হতে পারে। কিছু প্রাণীর মধ্যে, এই ক্ষুদ্র পদার্থগুলি ছোট ছোট অণুর আকারে রক্ত প্রবাহে শোষিত হয়।

পরিপাক একটি ভাঙ্গন মূলক পদ্ধতি যা প্রায়ই খাদ্যের ভাগাভাগির উপর ভিত্তি করে দুটি প্রক্রিয়াতে বিভক্ত হয়: যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক পরিপাক। যান্ত্রিক পরিপাক হল বৃহৎ খাদ্য কণাকে ছোট আকারে খাদ্যের কণায় পরিণত করা যা পরবর্তীতে পাচক উৎসেচক দ্বারা অ্যাক্সেস করতে পারে। রাসায়নিক পরিপাক হল উৎসেচকের দ্বারা খাদ্য বস্তুকে ছোট অণুতে পরিণত করা এবং তা দেহে শোষিত হয়।

পুষ্টি ও পরিপাকের মধ্যে পার্থক্য:

আমাদের প্রত্যেকে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদানগুলির সাথে সুষম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করা জরুরি। পুষ্টি ও পরিপাকের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। পুষ্টি একটি জটিল শারীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়া অর্থাৎ বহিঃউৎস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ পূর্বক দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধনের সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে পুষ্টি বলে। অন্যদিকে কঠিন ও জটিল খাদ্য গ্রহণকারী প্রাণীরা যে প্রক্রিয়ায় খাদ্য কে সরল ও কোষের শোষণ উপযোগী করে তাকে পরিপাক বলে।

২। খাদ্য গ্রহণ , পরিপাক , পরিশোষন আত্তীকরণ ও নিঃসরণ পুষ্টি প্রক্রিয়ার অংশ। অন্যদিকে পরিপাক পুষ্টির অংশ।

৩। পরিশোষিত খাদ্য সারের বিপাকীয় প্রক্রিয়া পুষ্টির অংশ। অন্যদিকে পরিপাক একটি বিপাক বহির্ভূত প্রক্রিয়া।

৪। খাদ্য গুনের সাথে পুষ্টি প্রক্রিয়া সম্পর্কিত । অন্যদিকে খাদ্য গুন যাইহোক পরিপাক হলেই পুষ্টি সাধন হবে এমন নয়।

৫। পুষ্টির মুল কার্যাবলী কোষের অভ্যন্তরে প্রোটপ্লাজমে সংঘটিত হয়। অন্যদিকে কোষীয় খাদ্য গহ্বর ,সিলেস্টেরন , পরিপাকনালী ইত্যাদি স্থানে খাদ্য পরিপাক ঘটে।