বিধেয় ও বিধেয়কের মধ্যে পার্থক্য

বিধেয় (Predicate):

“বিধেয়” শব্দটি ভাষাবিজ্ঞান ও এর উপক্ষেত্র গুলোতে দুইভাবে উপস্থাপন করা হয়। প্রথম সংজ্ঞা মতে, বাক্যে উদ্দেশ্য ব্যতীত বাকি সবকিছুকে বিধেয় বলে। দ্বিতীয় সংজ্ঞা মতে, বিধেয় হলো বাক্যের শুধুমাত্র মূল ক্রিয়াপদ অথবা বাক্যাংশের বিধেয়সূচক অভিব্যক্তি। “সুমন বল খেলে” উদাহরণটিতে প্রথম সংজ্ঞামতে বল খেলে অংশটি বিধেয় আর দ্বিতীয় সংজ্ঞামতে একই বাক্যের ক্রিয়াপদ খেলে শব্দটি বিধেয়, যেখানে সুমন ও বল হলো বাক্যের সূচি। এই দুটি সংজ্ঞার মধ্যে পার্থক্য বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে।

বিধেয় বাক্যের কর্তৃপদ তথা উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল। বিধেয় সাধারণত বাক্যের শেষের দিকে বসে। তবে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের অবস্থান বদলে যেতে পারে।

বিধেয়ক (Predicables):

কোন যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদের সঙ্গে উদ্দেশ্য পদের সম্পর্কের ফলে সম্ভাব্য বিভিন্ন ধরনের যেসব সম্বন্ধের সূত্রপাত ঘটে সেসব সম্বন্ধকে বিধেয়ক বলে। আপনারা বিধেয়ক কি তা যদি আরো সহজভাবে বুঝতে চান তাহলে বলতে হবে, বিধেয়ের সঙ্গে উদ্দেশ্যের বিভিন্ন প্রকার সম্বন্ধই হলো বিধেয়ক। উপরের বিধেয়কের সংজ্ঞাটি এরিস্টটল ও পরফিরির দেয়া। বিধেয়কের সংজ্ঞাটিকে পরিষ্কার এবং বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে সংজ্ঞাটি এরকম হবে-শ্রেণীবাচক বিধেয় পদ সমম্বয়ে কোন ইতিবাচক যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদের সাথে উদ্দেশ্য পদের যেসব সম্পর্ক হতে পারে সে সম্পর্কসমূহকে বিধেয়ক বলে। যেমন- ‘সব গরু হয় প্রাণী’। এ যুক্তিবাক্যটিতে উদ্দেশ্য পদ হলো গরু আর বিধেয় পদ হলো প্রাণী।

বিধেয় ও বিধেয়কের মধ্যে পার্থক্যঃ

বিধেয় ও বিধেয়কের মাঝে কিছু শাব্দিক মিল থাকলেও এরা অভিন্ন নয়। বিধেয় ও বিধেয়কের মধ্যে পার্থক্যগুলো নিম্নে দেখানো হয়েছে-

১। কোন যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বর্ণনা করা হয় তাকে বিধেয় বলে। অন্যদিকে কোন যুক্তিবাক্যে বিধেয়ের সঙ্গে উদ্দেশ্যের বিভিন্ন প্রকার সম্বন্ধকে বিধেয়ক বলে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একটি বিধেয় পদ তখনই বিধেয়ক হবে যখন উদ্দেশ্য পদের সাথে সম্বন্ধের দিক থেকে তাকে বিচার করা যাবে।

২। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই ধরনের বাক্যেই বিধেয় থাকে। অন্যদিকে, বিধেয়ক থাকে শুধুমাত্র সদর্থক বাক্যে। কারণ নেতিবাচক যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য পদটি বিধেয় পদটি সম্পর্কে কোন স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে না বলে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদটির মধ্যে কোন সম্পর্কও স্থাপিত হয় না।

৩। কোন বিশিষ্ট পদকে যুক্তিবাক্যের বিধেয় হিসাবে অবস্থান দেয়া যেতে পারে। অন্যদিকে, কোন যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদটি যদি বিশিষ্ট পদ হয় তবে সে যুক্তিবাক্যের বিধেয়ক থাকেনা।

৪। বিধেয় একটি পদ কিন্তু বিধেয়ক কোন পদ নয় এটি উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যকার সম্পর্কের নাম।

৫। বিধেয়ের কোন প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ নাই। অন্যদিকে, বিধেয়কের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে।