Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

প্রবেশন ও প্যারোল এর মধ্যে পার্থক্য

প্রবেশন ও প্যারোল

প্রবেশন (Probation):

প্রবেশন অর্থ “পরীক্ষাকাল”। প্রবেশন বলতে কোন অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে, কারারুদ্ধ না রেখে বা কোন প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ প্রদান করাকে বোঝায়। অর্থাৎ প্রবেশন শব্দটি কিশোর অপরাধীদের ক্ষেত্রে জড়িত। কিশোররা সাজাপ্রাপ্ত হলে তাদের জেলখানায় না নিয়ে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে রেখে সংশোধন করানো হয় যাতে ভবিষ্যতে আর অপরাধ না করে। প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে আইনের সাথে সংঘর্ষে বা সংস্পর্শে আসা শিশু-কিশোরেরা বা অন্য কোন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রথম ও লঘু অপরাধে দায়ে কারাগারে বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে না রেখে আদালতের নির্দেশে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং শর্ত সাপেক্ষে তার পরিবার ও সামাজিক পরিবেশে রেখে কৃত অপরাধের সংশোধন ও তাকে সামাজিকভাবে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হয়।

প্রবেশন একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। এটি অপরাধীর বিশৃঙ্খল ও বেআইনি আচরণ সংশোধনের জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত কর্ম পদ্ধতি। এখানে অপরাধীকে পুনঃঅপরাধ রোধ ও একজন আইনমান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার জন্য সহায়তা করা হয়।

প্যারোল (Parole):

যখন একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী কে নির্দিষ্ট কারণে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আইনের নজরদারিতে সাময়িক সময় এর জন্য ‍মুক্তি প্রদান করা হয়। ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের যেমন বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং আপন ভাই বোন মারা গেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যাবে।

ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ ছাড়াও কোন আদালতের আদেশ কিংবা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্যারোলে মুক্তি দেয়া প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনায় প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দিবেন। বন্দীকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরাধীনে রাখতে হবে।

মুক্তির সময়সীমা কোন অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার অধিক হবে না তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার মুক্তির সময়সীমা হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন। কোন বন্দী জেলার কোন কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক থাকলে ওই জেলার অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে মঞ্জুরকারীকর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। অপরদিকে কোনো বন্দি নিজ জেলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক না থেকে অন্য জেলায় অবস্থিত কোন কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক থাকলে গন্তব্যের দুরুত্ব বিবেচনা করে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন।

তবে উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূরত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর এর ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন।

প্রবেশন ও প্যারোল এর মধ্যে পার্থক্যঃ

প্রবেশন ও প্যারোল উভয়ই আইন ও আদালতের সাথে জড়িত থাকলেও এ দুটির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। নিচে প্রবেশন ও প্যারোল এর সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে-

১। প্রবেশন বলতে কোন অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে, কারারুদ্ধ না রেখে বা কোন প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ প্রদান করাকে বোঝায়। অন্যদিকে, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী কে নির্দিষ্ট কারণে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আইনের নজরদারিতে সাময়িক সময় এর জন্য ‍মুক্তি প্রদান করা হয়।

২। প্রবেশন প্রক্রিয়াতে একজন আসামী কে কারাগারে প্রদান করা হয়না। বরং আদালতের বাইরে থেকেও সেই আসামীকে আদালত এর বিশেষ বিধিনিষেধ গুলো মেনে চলতে হয়। অন্যদিকে, প্যারোল এর দিক থেকে একজন আসামীর ‍মুক্তির আগের সময়কে বোঝানো হয়। যেখানে একজন আসামীকে দেওয়া নিয়ম অমান্য করলে তাকে পুনরায় আটক করা হয়।

৩। প্রবেশন হলো আসামীদের কারাগারে বন্দি করার বিকল্প একটি উপায়। অন্যদিকে, প্যারোল হলো, একজন আসামীকে কারাগার এর মধ্যে বন্দি করে রাখার বিকল্প একটি উপায়।

4। একজন আসামীর আচরনগত দিক বিবেচনা করে আদালত কর্তৃক জরিমানা কে প্রবেশন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে, প্যারোল এর মাধ্যমে একজন আসামী তার স্থায়ী বা সমসাময়িক বন্দি থেকে মুক্তি পায়।

Exit mobile version