প্রোটোপ্লাজম ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে পার্থক্য

সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm):

সাইটোপ্লাজম হচ্ছে কোষের ভেতরে বেশির ভাগ অংশ জুড়ে অবস্থিত স্বচ্ছ, সমসত্ব, জেলি-সদৃশ পদার্থ। সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে অবস্থিত কোষের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট সজীব বস্তুসমূহকে একত্রে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু বলা হয় । সাইটোপ্লাজমের ৮০ শতাংশই পানি এবং সাধারণত বর্ণহীন।
১৮৬২ সালে বিজ্ঞানী রুডলফ ভন কলিকার সর্বপ্রথম সাইটোপ্লাজম শব্দটি ব্যবহার করেন। কোষের অধিকাংশ কার্যাবলি সাইটোপ্লাজমেই সম্পাদিত হয়। সাইটোপ্লাজমে ক্যালসিয়াম আয়নের আসা-যাওয়া বিপাক ক্রিয়ার সংকেত হিসেবে সংঘটিত হয়। উদ্ভিদকোষে কোষগহবর ঘিরে সাইটোপ্লাজমের নড়াচড়াকে সাইটোপ্লাজমিক স্ট্রীমিং বলে। সাইটোপ্লাজম এর কাজ :

  1. বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বিক্রিয়া বা বিপাক সাইটোপ্লাজমে ঘটে।
  2. কোষের গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  3. বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গানুর কাজে সমন্বয় সাধন ঘটায়।
  4. প্রোটোজোয়ার গমনে সাহায্য করে। যেমন – অ্যামিবা

প্রোটোপ্লাজম (Protoplasm):

কোষের অভ্যন্তরে অংশ অর্ধস্বচ্ছ আঠালো এবং জেলির ন্যায় অর্ধতরল,কলয়ডালধর্মী সজীব পদার্থকে প্রোটোপ্লাজম বলে।প্রোটোপ্লাজমই কোষের তথা দেহের সকল মৌলিক জৈবিক কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে।এ জন্যই প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভিত্তি বলা হয়। দ্য প্রোটোপ্লাজম এটি কোষের জীবন্ত উপাদান। এই কাঠামোটি প্রথম 1839 সালে প্রাচীর থেকে পৃথক তরল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এটি স্বচ্ছ, সান্দ্র এবং এক্সটেনসিবল পদার্থ হিসাবে বিবেচিত হত। এটি কোনও কাঠামো হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যার কোনও আপাত সংগঠন নেই এবং অসংখ্য অর্গানেলস রয়েছে। প্রোটোপ্লাজম কোষের পুরো অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা প্লাজমা ঝিল্লির অভ্যন্তরে পাওয়া যায়। তবে কিছু লেখক প্রোটোপ্লাজমের মধ্যে কোষের ঝিল্লি, নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

প্রোটোপ্লাজম ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে পার্থক্যঃ

সাইটোপ্লাজম এবং প্রোটোপ্লাজমের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হ’ল সাইটোপ্লাজমের নিউক্লিয়াস থাকে না তবে প্রোটোপ্লাজমের নিউক্লিয়াস থাকে এর কাঠামো। নিচে পার্থক্য দেখানো হলো-

১। একটি কোষের কোষপর্দার ভিতরে ভ্যাকুওল বাদে সমগ্র অংশ কে প্রোটোপ্লাজম বলে। অন্যদিকে প্রোটোপ্লাজমের ভিতরে নিউক্লিয়াস বাদে সমগ্র অংশ কে সাইটোপ্লাজম বলে।

২। প্রোটোপ্লাজম এর তিনটি অংশ- কোষঝিল্লি, নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম। অন্যদিকে সাইটোপ্লাজমের দুটি অংশ- সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু ও মাতৃকা।

৩। প্রোটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াস থাকায় বংশগতির ধারক ও বাহক। অন্যদিকে সাইটোপ্লাজমের বংশগতির ধারক ও বাহক নয়।

৪। পরিবেশ অনুযায়ী জেলি থেকে তরলে এবং তরল থেকে জেলিতে পরিবর্তিত হতে পারে। অন্যদিকে বস্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, সাইটোপ্লাজম কোষের সোল-জেল হিসেবে আচরণ করে।

৫। প্রোটোপ্লাজম জীবনের আধার হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে সাইটোপ্লাজম কোষীয় অঙ্গাণুর আধার হিসেবে কাজ করে।