Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

প্রাপ্তি ও প্রদান এবং আয়-ব্যয় হিসাবের মধ্যে পার্থক্য

প্রাপ্তি ও প্রদান এবং আয়-ব্যয় হিসাব

প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব (Receipts and Payments Account):
কোন নির্দিষ্ট সময়ে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকার নগদ আদান-প্রদান সংক্রান্ত লেনদেনসমূহ সাজিয়ে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাকে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব বলে। অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহ মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত না হলেও বিভিন্ন উৎস থেকে নগদ টাকা পায় এবং বিভিন্ন ব্যয়ের খাতে প্রদান করে থাকে। এ সকল নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান সংক্ষিপ্তাকারে শ্রেণীবদ্ধ করে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। সুতরাং প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নগদান বই একই প্রকৃতির।

এটি অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের চ‚ড়ান্ত হিসাবের প্রথম ধাপ। সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে এ হিসাব প্রস্তুত করা হয়। এ হিসাব হতে নির্দিষ্ট সময়ের প্রাপ্তি ও প্রদানের পরিমাণ এবং নগদ তহবিলের পরিমাণ জানা যায়।

আয়-ব্যয় হিসাব (Income-Expenditure Account):
কান নির্দিষ্ট সময় শেষে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মকান্ডের ফলাফল নির্ণয়ের উদ্দেশ্য উক্ত সময়ের মুনাফাজাতীয় আয় ও ব্যয়সমূহ নিয়ে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাকে আয়-ব্যয় হিসাব বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত না হলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নানাবিধ আর্থিক কার্যাবলী সম্পাদন করতে হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা আয় এবং তা ভিন্ন ভিন্ন খাতে ব্যয় করে থাকে। এ সকল লেনদেন হতে প্রতিষ্ঠানের হিসাবসমূহ শেষে আর্থিক ফলাফল নিরূপণ করা প্রয়োজন। তাই অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের অবস্থা জানার জন্য যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাকে আয়-ব্যয় হিসাব বলে।

ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান লাভ বা ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুত করে। কিন্তু অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান লাভ-লোকসান হিসাবের পরিবর্তে একই উদ্দেশ্য এবং একই পদ্ধতিতে আয়-ব্যয় হিসাব প্রস্তুত করে। আয়-ব্যয় হিসাবে সংশ্লিষ্ট সময়ের মুনাফা জাতীয় ব্যয়সমূহ ডেবিট দিকে এবং মুনাফা জাতীয় আয়সমূহ ক্রেডিট দিকে লেখা হয়। সংশ্লিষ্ট সময়ের বকেয়া মুনাফাজাতীয় ব্যয় ও অনাদায়ী মুনাফাজাতীয় আয় এ হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। আয়-ব্যয় হিসাবের ডেবিট দিকের যোগফল ক্রেডিট দিকের যোগফলের চেয়ে বেশী হলে যে উদ্বৃত্ত হয় তাকে আয়াতিরিক্ত ব্যয় বলে যা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নীট ক্ষতির সমার্থক। পক্ষান্তরে উক্ত হিসাবের ক্রেডিট দিকের যোগফল ডেবিট দিকের যোগফলের চেয়ে বেশী হলে যে উদ্বৃত্ত হয় তাকে ব্যয়াতিরিক্ত আয় বলা হয় যা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নীট লাভের অনুরূপ।

প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব এবং আয়-ব্যয় হিসাবের মধ্যে পার্থক্যঃ

প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব এবং আয়-ব্যয় হিসাব অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলেও, এদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। নিচে তা দেখানো হয়েছে-

১. কোন নির্দিষ্ট সময় শেষে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নগদ ও ব্যাংক উদ্বৃত্ত জানার জন্য ঐ সময়ের নগদ প্রাপ্তি ও প্রদানসমূহ সংক্ষিপ্ত আকারে সাজিয়ে যে হিসাব প্রস্তুত করে তখন তাকে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব বলে।

অন্যদিকে, কোন নির্দিষ্ট সময় শেষে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মকান্ডের ফলাফল নির্ণয়ের উদ্দেশ্য উক্ত সময়ের মুনাফা জাতীয় আয় ও ব্যয়সমূহ নিয়ে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাকে আয়-ব্যয় হিসাব বলে।

২. যেহেতু প্রাপ্তি ও প্রদান হিসবে যাবতীয় নগদ লেনদেনসমূহ হিসাবভুক্ত করা হয় সেহেতু এটি একটি সম্পত্তিবাচক হিসাব। অন্যদিকে, যেহেতু আয়-ব্যয় হিসাবে যাবতীয় মুনাফাজাতীয় লেনদেনগুলো হিসাবভুক্ত করা হয়, সেহেতু এটি একটি নামিক হিসাব।

৩. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের ডেবিট দিকে সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তি এবং ক্রেডিট সকল প্রকার নগদ প্রদান লিখতে হয়। অন্যদিকে, আয়-ব্যয় হিসাবের ডেবিট দিকে যাবতীয় মুনাফা জাতীয় ব্যয় এবং ক্রেডিট দিকে যাবতীয় মুনাফা জাতীয় আয় লিখতে হয়।

৪. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের ডেবিট পাশে প্রারম্ভিক উদ্বৃত্ত বা নগদ তহবিল নিয়ে হিসাব লিখন শুরু হয়। আয়-ব্যয় হিসাবে প্রারম্ভিক উদ্বৃত্ত হিসাবভুক্ত করা হয় না। এ হিসাব যে কোন মুনাফা জাতীয় আইটেম নিয়ে শুরু হতে পারে।

৫. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের ডেবিট দিকে সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তি এবং ক্রেডিট সকল প্রকার নগদ প্রদান লিখতে হয়। অন্যদিকে, আয়-ব্যয় হিসাবের ডেবিট দিকে যাবতীয় মুনাফা জাতীয় ব্যয় এবং ক্রেডিট দিকে যাবতীয় মুনাফাজাতীয় আয় লিখতে হয়।

৬. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবে চলতি বছরের নগদ লেনদেন ছাড়াও পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী বছরের প্রাপ্তি ও প্রদান সংক্রান্ত লেনদেনগুলোও হিসাবভুক্ত করা হয়। অন্যদিকে, আয়-ব্যয় হিসাবে শুধু চলতি বছরের মুনাফাজাতীয় লেনদেনগুলো হিসাবভুক্ত করা হয়।

৭. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবে বকেয়া ও অনগদ লেনদেন যেমন- বকেয়া বেতন, বকেয়া চাঁদা ও অবচয় হিসাবভুক্ত করা হয় না। অন্যদিকে, আয়-ব্যয় হিসাবে বকেয়া আয়-ব্যয় ও মুনাফা জাতীয় অনগদ লেনদেন হিসাবভুক্ত করা হয়।

৮. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবে কোন সমন্বয়কারী বিষয় যেমন- বকেয়া আয় ও ব্যয়, অবচয় ইত্যাদি অর্ন্তভুক্ত করা হয় না। অন্যদিকে, আয়-ব্যয় হিসাবে সমন্বয়কারী বিষয় যেমন- বকেয়া আয় ও ব্যয়, অবচয়, ইত্যাদি অর্ন্তভুক্ত করা হয়।

৯. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব সর্বদা ডেবিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে। অন্যদিকে, আয়-ব্যয় হিসাব ডেবিট বা ক্রেডিট যে কোন উদ্বৃত্ত প্রকাশ করতে পারে।

Exit mobile version