রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্য

রসে মতানে (Roche Moutonnee):

রসে মতানে একটি French শব্দ। রসে মতানে কথাটির অর্থ হল ভেড়ার মস্তক / মাথা। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট একদিক মসৃণ ও অপরদিক অমসৃণ উঁচু ঢিবির মত ভূমিরূপকে রসে মতানে বলে ৷ অর্থাৎ হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, রসে মতানে হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অনেক সময় উপত্যকার মধ্যে উঁচু ঢিবির মতো কঠিন শিলাখন্ডের ওপর দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয় ।

অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে হিমবাহের প্রবাহের দিকে অর্থাৎ প্রতিবাত ঢালে শিলাখন্ডটি মসৃণ ও চকচকে হয়ে ওঠে এবং বিপরীত দিকটি বা অনুবাত ঢালে উৎপাটন প্রক্রিয়ায় অমসৃণ ও খাঁজকাটা হয়ে যায় । পার্বত্য হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে শক্ত শিলাখন্ডে গঠিত একদিকে মসৃণ এবং আর এক দিকে এবড়োখেবড়ো এইরকম শিলাখন্ড বা ঢিবিকে রসে মতানে বলা হয় ।

ড্রামলিন (Drumlin):

বহিঃবিধৌত সমভূমিতে বা তার কাছে হিমবাহ ও জলধারাবাহিত বিভিন্ন আকৃতির ক্ষয়জাত পদার্থগুলি সঞ্চিত হয়ে উল্টানো নৌকা বা চামচের আকৃতির ঢিবি গড়ে তোলে ৷ এই ধরনের ভূমিরূপকে ড্রামলিন বলে ৷ অর্থাৎ হিমবাহ ও হিমবাহগলিত জলধারার মিলিত সঞ্চয় কার্যের ফলে হিমবাহের পাদদেশে বহিঃধৌত সমভূমিতে বা তার কাছে যেসব ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ড্রামলিন হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপের নিদর্শন ।

হিমবাহ গলে গেলে তার নীচে হিমবাহের সঙ্গে বয়ে আনা বালি ও কাদার সঙ্গে বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি-পাথর অবক্ষেপ হিসাবে সঞ্চিত হলে তাদের একসঙ্গে বোল্ডার হিমকর্দ বলা হয় । স্তুপিকৃত বোল্ডার হিমকর্দ অনেক সময়ে সারিবদ্ধ টিলা বা ছোটো ছোটো স্তুপের আকারে বিরাজ করে । ভূ-পৃষ্ঠের উপর এদের দেখতে অনেকটা উলটানো নৌকা বা উলটানো চামচের মতো আকৃতির হয় । এই চামচের মতো আকৃতির ভূমিরূপকে ড্রামলিন বলা হয়।

রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্যঃ

রসে মতানে ও ড্রামলিন উভয়ই হিমবাহ গঠিত সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ হলেও উভয়ের মধ্যেই পার্থক্য বিদ্যমান। নিচে রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১। রসে মতানে একটি French শব্দ। রসে মতানে কথাটির অর্থ হল ভেড়ার মস্তক / মাথা। অন্যদিকে, ড্রিমলিন একটি Gaelic শব্দ। ড্রিমলিন কথাটির অর্থ হল ঢিবি।

২। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট একদিক মসৃণ ও অপরদিক অমসৃণ উঁচু ঢিবির মত ভূমিরূপকে রসে মতানে বলে ৷ অন্যদিকে, বহিঃবিধৌত সমভূমিতে বা তার কাছে হিমবাহ ও জলধারাবাহিত বিভিন্ন আকৃতির ক্ষয়জাত পদার্থগুলি সঞ্চিত হয়ে উল্টানো নৌকা বা চামচের আকৃতির ঢিবি গড়ে তোলে ৷ এই ধরনের ভূমিরূপকে ড্রামলিন বলে ৷

৩। হিমবাহ যেদিকে প্রবাহিত হয় রসে মতানের সেই দিকে মসৃণ হয় এবং হিমবাহের প্রবাহের বিপরীত দিকে রসে মতানের অমসৃণ অংশ গঠিত হয়। অন্যদিকে, হিমবাহ যেদিকে প্রবাহিত হয় সেই দিকে ড্রিমলিনের অমসৃণ অংশের সৃষ্টি হয় এবং হিমবাহের প্রবাহের বিপরীত দিকে ড্রিমলিনের মসৃণ অংশ গঠিত হয়।

৪। রসে মতানে সাধারণত উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। অন্যদিকে, ড্রামলিন সাধারণত পার্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলে দেখা যায়,

৫। রসে মতান দেখতে উঁচু টিলার মতো হয়। অন্যদিকে, ড্রামলিন ডিম ভরতি ঝুড়ির মতো দেখতে হয়।

৬। রসে মতানে সাধারণত এককভাবে অবস্থান করে। অন্যদিকে, ড্রামলিন ঝাঁকে ঝাঁকে অবস্থান করে। একসঙ্গে বহু ড্রামলিন অবস্থান করলে দূর থেকে সেই ভূমিরূপকে ডিম ভর্তি ঝুড়ির মত দেখায়।

৭। রসে মতানের উচ্চতা ড্রামলিনের তুলনায় বেশি হয়। রসে মতানের উচ্চতা হয় সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ মিটার। অন্যদিকে ড্রামলিনের উচ্চতা হয় সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার।