Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

সংস্কৃত এবং হিন্দির মধ্যে পার্থক্য

সংস্কৃত এবং হিন্দির

সংস্কৃত ভাষা:

সংস্কৃত ভাষার সঠিক নাম: संस्कृता वाक्, সংস্কৃতা বাক্, পরবর্তীকালে প্রচলিত অপর নাম: संस्कृतभाषा সংস্কৃতভাষা, “পরিমার্জিত ভাষা”) হল একটি ঐতিহাসিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা এবং হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের পবিত্র দেবভাষা। এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান দুই বিভাগের একটি “শতম” ভুক্ত ভাষা। বর্তমানে সংস্কৃত ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার অন্যতম এবং উত্তরাখণ্ড রাজ্যের অন্যতম সরকারি ভাষা।

ধ্রুপদী-সংস্কৃত এই ভাষার প্রামাণ্য ভাষা প্রকার। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত পাণিনির ব্যাকরণে এই প্রামাণ্যরূপটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপে লাতিন বা প্রাচীন গ্রিক ভাষার যে স্থান, বৃহত্তর ভারতের সংস্কৃতিতে সংস্কৃত ভাষার সেই স্থান। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,“ বহুধাবিভক্ত ভারত ছোটো ছোটো রাজ্যে কেবলই কাড়াকাড়ি হানাহানি করেছে, সাধারণ শত্রু যখন দ্বারে এসেছে সকলে এক হয়ে বিদেশীর আক্রমণ ঠেকাতে পারেনি। এই শোচনীয় আত্মবিচ্ছেদ ও বহির্বিপ্লবের সময়ে ভারতবর্ষে একটিমাত্র ঐক্যের মহাকর্ষশক্তি ছিল, সে তার সংস্কৃত ভাষা।

হিন্দি ভাষা:

ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, মানুষের কথিত ভাষার ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবারের অন্তর্গত ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষা উপ-পরিবারের একটি শাখার নাম− ভারতীয়-আর্য ভাষা। এই শাখার উপশাখা হলো পূর্ব মধ্যাঞ্চলীয় ভাষা। মূলত স্থানীয় প্রাকৃতজনের ভাষার (অনার্য ভাষা) সংমিশ্রণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের মিশ্র ভাষার উদ্ভব হয়। এই সূত্রে বর্তমান ভারতের পূর্ব-মধ্যাঞ্চলে হিন্দি ভাষার উদ্ভব ঘটে।

ভারতেবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদের নাম সিন্ধু। ভারতবর্ষে আগত আর্যরা এই নদকে সিন্ধু নামে অভিহিত করতো। কিন্তু প্রাচীন পারসিক ভাষা ভাষীরা এর উচ্চারণ করতো ছেন্দু বা ছিন্দু উচ্চারণ করতো। কালক্রমে এই উচ্চারণ বিকৃত হয়ে হিন্দু বা হেন্দু নামে অভিহিত হতে থাকে। বেদে পঞ্চনদ প্রদেশের ‘সপ্তসিন্ধু’র কথা জানা যায়। কিন্তু প্রাচীন পারশিক ভাষায় রচিত আবেস্তায় পাওয়া যায় ‘হপ্‌ত হেন্দু’। পারশ্যের লোকদের কাছ থেকে গ্রিকরা ভারতবর্ষ সম্পর্কে অবগত হয়। এই সময় গ্রিকদের উচ্চারণে পারশ্য হিন্দ হয়ে যায়। এই সূত্রে পুরো ইউরোপে অন্যান্য ভাষায় ভারতবর্ষের নাম হয়ে যায় ইন্দো (indo)। এই শব্দের সূত্রে ইংরেজি ভাষায় ভারতের নাম হয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয়, প্রাচীন ভারতের কোনো ভাষাতেই হিন্দ বা ইন্দো শব্দ পাওয়া যায় না।

ভারতবর্ষে আগত মুসলমান সেনানায়করা যখন সিন্ধু জয় করেন, তখন তাঁরা এই জয়কে হিন্দুস্তান জয় হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। কালক্রমে মুসলমান শাসকরা দিল্লি এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল দখল করার পর, ওই অঞ্চলকেও তাঁরা হিন্দুস্তানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। এই সময় এই অঞ্চলে স্থানীয় অধিবাসীদের ভাষাকে হিন্দুস্থানী ভাষা হিসেবে পরিচিয় দিয়েছেন।

সংস্কৃত এবং হিন্দির মধ্যে পার্থক্য:

“পরিমার্জিত ভাষা”) হল একটি ঐতিহাসিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা এবং হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের পবিত্র দেবভাষা। সংস্কৃত এবং হিন্দির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। সংস্কৃতের একটি পৌরাণিক পটভূমি রয়েছে এবং বিশ্বাস করা হয় যে এটি বিশ্বের অন্যান্য ধ্রুপদী ভাষা আসার অনেক আগেই বিকশিত হয়েছিল। অন্যদিকে, হিন্দি সংস্কৃতের চেয়ে অনেক ছোট এবং এটি শুধুমাত্র 18 শতকে স্বীকৃত হয়েছিল।

২। হিন্দির তুলনায় সংস্কৃতের আরও জটিল ব্যাকরণ এবং রচনা কাঠামো রয়েছে।

৩। হিন্দির তুলনায় বিজ্ঞান ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে সংস্কৃতের উপস্থিতি অনেক বেশি।

৪। অতীতে সংস্কৃতের ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব ছিল। অন্যদিকে, আজকের পরিস্থিতিতে হিন্দি সংস্কৃতের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক ও সামাজিক ওজন বহন করে।

৫। সংস্কৃত ভাষাভাষীদের সংখ্যা কমে গেছে। অন্যদিকে, হিন্দির ভাষাভাষীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

Exit mobile version