আত্মসুখবাদ ও পরসুখবাদের মধ্যে পার্থক্য

আত্মসুখবাদ (Self-hedonism):

যে মতবাদ মনে করে, যে ব্যক্তির নিজের সুখই মুখ্য অপরের সুখ গৌণ এবং নিজের জন্য সর্বাধিক সুখ অন্বেষণ করার ব্যাপারটি আত্মসুখবাদ নামে পরিচিত। এ মতবাদ ব্যক্তির নিজের সুখকে বড় করে দেখে। ব্যক্তি পরের জন্য যে সমস্ত কাজ পরিচালনা করে না কেন তার ভিতরে নিজের স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। আত্ম সুখবাদকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- স্থুল আত্ম সুখবাদ, সূক্ষ্ম আত্ম সুখবাদ।

পরসুখবাদ (Para-hedonism):

পরসুখবাদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন জেরেমী বেন্থাম, জন স্টুয়ার্ট মিল ও হেনরি সিজউইক। এসব চিন্তাবিদ তাদের যুক্তিসমূহ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পােষণ করলেও তাদের বক্তব্যের বিষয়বস্তু একই। নৈতিক চাপের জন্য আত্মসুখী মানুষ পরার্থপর হয়ে ওঠে। ব্যোম নৈতিক চাপের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাঁর মতে এই চাপ মূলতঃ বাহ্যিক। মিল মনে করেন, যে নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষ পরার্থপর হয়, তা বাহ্যিক শাসন হতে আসতে পারে না। অন্তরের নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষ পরার্থপর হয়। মানুষের অন্তরে আছে মমত্ববোধ, আত্মসংযম, কর্তব্যবোধ, অপরের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার বাসনা। একেই তিনি অন্তর নিয়ন্ত্রণ বলেন। এর জন্য অন্যের দুঃখ দেখলে মানুষ দুঃখ পায়। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে অপরকে সুখী করতে চেষ্টা করে, বা অপরের সুখ কামনা করে।

আত্মসুখবাদ ও পরসুখবাদের মধ্যে পার্থক্যঃ

সব মানুষেরই সুখের অন্বেষণ ও দুঃখকে পরিহার করা উচিৎ। নৈতিক সুখবাদের প্রধানত দুটি রূপ রয়েছে। আত্মসুখবাদ ও পরসুখবাদের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১। যে ব্যক্তির নিজের সুখই মুখ্য অপরের সুখ গৌণ এবং নিজের জন্য সর্বাধিক সুখ অন্বেষণ করে তাকে আত্মসুখবাদ বলে। অন্যদিকে, মানুষের অন্তরে আছে মমত্ববোধ, আত্মসংযম, কর্তব্যবোধ, অপরের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার বাসনা। একেই তিনি অন্তর নিয়ন্ত্রণ বলেন। এর জন্য অন্যের দুঃখ দেখলে মানুষ দুঃখ পায় তাকে পরসুখবাদ বলে।

২। আত্মসুখবাদ অনুসারে প্রতিটি মানুষের কেবল তার নিজের সর্বাধিক পরিমাণ সুখ কামনা করা উচিৎ। অন্যদিকে, পরসুখবাদ অনুসারে সর্বাধিক সংখ্যক লােকের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ সুখ আমাদের কামনা করা উচিৎ।

৩। সুখের প্রকৃতি সম্পর্কে মতভেদের ফলে আত্ম সুখবাদের প্রাচীন রূপের মধ্যে দুটি ভিন্ন ধারা পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে, পরসুখবাদ সুখের পরিমাণ নির্ধারণ করতে গিয়ে তিন রকমের পরসুখবাদের সৃষ্টি হয়েছে।

৪। আত্মসুখবাদের প্রবর্তক প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাস এবং আধুনিক যুগের সমর্থক হবস, ম্যান্ডেভিলে। অন্যদিকে, পরসুখবাদের প্রবর্তক জেরেমী বেনথাম, জন স্টুয়ার্ট মিল ও হেনরী সিজউইক।