Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

বীর্য এবং শুক্রাণুর মধ্যে পার্থক্য

বীর্য (semen):

বীর্য (semen) একপ্রকার জৈবিক তরল যা যৌনসঙ্গমের শেষ পর্যায়ে চরম সুখানুভূতি সৃষ্টির সঙ্গে পুরুষাঙ্গ হতে নিঃসৃত হয়। শুক্রাণূ সমৃদ্ধ পুরুষের বীর্যে নারীর ডিম্ব নিষিক্ত হলে জরায়ুতে মানব ভ্রূণের সৃষ্টি হয়। কেবল যৌনসঙ্গম নয়, যৌনানন্দ লাভের জন্য হস্তমৈথুনের মাধ্যমেও বীর্যস্খলন করা হয়ে থাকে। এছাড়া স্বপ্নদোষ মাধ্যমে বীর্যপাত হয়ে থাকে। বীর্য নানা নামে পরিচিত যার মধ্যে রয়েছে শুক্র, ধাতু বীর্যরস ইত্যাদি। বীর্য এক প্রকার অঘনীভূত, ঈষৎ ক্ষারীয়, আঠালো জেলির ন্যায় জৈব তরল যা সাধারণত স্পার্মাটোজোয়া ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। এটি সাধারণত কোন জীব প্রজাতির পুরুষ কিংবা উভলিঙ্গ প্রাণির অন্ডকোষ থেকে উৎপন্ন হয় এবং ঐ প্রজাতির স্ত্রী লিঙ্গের প্রাণির জরাযুতে সৃষ্ট হওয়া ডিম্বাণু নিষিক্ত করার ক্ষমতা রাখে। মানুষের ক্ষেত্রে, বীর্যরসে স্পার্মাটোজোয়া ছাড়াও অন্যান্য একাধিক উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এসব উপাদানের মধ্যে প্রোটিওলাইটিক ও অন্যান্য এনজাইম এবং ফ্রুক্টোজের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। এই উপাদানগুলো মূলত দেহের বাইরে বা দেহাভ্যন্তরে স্পার্মাটোজোয়ার টিকে থাকা নিশ্চিত করে এবং এদেরকে ‘সাঁতরানোর’ বা চলাচলের জন্য একটি নিরাপদ মাধ্যমের যোগান দেয়। শ্রোণীচক্রে অবস্থিত সেমিনাল ভেসিকল নামক অঙ্গ থেকে বীর্য উৎপন্ন হয়। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বীর্য নিঃসরণ ঘটে তাকে বীর্যপাত বলে।

শুক্রাণু (Sperm):

শুক্রাণু (Sperm) বলতে জীবের পুংজননকোষকে বোঝানো হয়। শুক্রাণু যখন ডিম্বাণু কোষকে নিষিক্ত করে তখন জাইগোট সৃষ্টি হয় যা মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মধ্যদিয়ে পরবর্তিতে ভ্রূণ গঠন করে এবং একসময় শিশু জীবে পরিনত হয়। স্তন্যপায়ী প্রানীতে শুক্রাণু শুক্রাশয়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং শিশ্নের মাধ্যমে বীর্যের সাথে বের হয়ে আসে। এছাড়া সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগধানীর পরাগরেনুতে শুক্রাণু অবস্থান করে। মানব শুক্রাণু হ্যপ্লয়েড কোষ অর্থাৎ এতে ক্রোমোসোমের সংখ্যা এর উৎপাদক কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক। মানব শুক্রাণুতে ২৩টি ক্রোমোসোম থাকে যা ডিম্বাণুর ২৩টি ক্রোমোসোমের সাথে যুক্ত হয়ে ২x২৩ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট ডিপ্লয়েড জাইগোট সৃষ্টি করে। শুক্রাণুর আকার বিভিন্ন জীবে বিভিন্ন হয়ে থাকে এবং এটি শুক্রাণুর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট যার মাধ্যমে একটি জীব থেকে অন্য জীবকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। শুক্রাণুতে বিদ্যমান ক্রোমোসোমগুলো জীবের বৈশিষ্টের বাহক জিন বহন করে যা জীব থেকে তার বংশধরের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।

বীর্য এবং শুক্রাণুর মধ্যে পার্থক্যঃ

শুক্রাণু এবং বীর্যের মধ্যে প্রাথমিক পার্থক্য হ’ল শুক্রাণু হ’ল প্রকৃত যৌন কোষ, তবে বীর্য হল তরল পদার্থ যেখানে শুক্রাণু থাকে। নিচে পার্থক্য দেখানো হলো-

১। বীর্যে দুটি অংশ থাকে- শুক্রাণু এবং তরল (“সেমিনাল প্লাজমা”)। শুক্রাণু খালি চোখে দেখা যায়না। যা আপনি দেখতে পারেন তাহল বীর্য। তাই, বীর্য এবং শুক্রাণু একই নয়।

২। শুক্রাণু একটি পুরুষ প্রজনন কোষ। অন্যদিকে বীর্য পুরুষের প্রজনন তরল, যা স্থগিতাদেশে বীর্য ধারণ করে।

৩। শুক্রাণু প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয় দ্বারা উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে বীর্য পুরুষ প্রাণী এবং হার্মাপ্রোডাইট দ্বারা উৎপাদিত হয়।

৪। শুক্রাণু একটি মাইক্রোস্কোপিক সেল যা লম্বা লেজযুক্ত ডিম্বাকৃতির আকারের মাথা ধারণ করে। অন্যদিকে বীর্য একটি স্নিগ্ধ তরল, যা সাধারণত সাদা ধূসর বর্ণের হয়।

৫। শুক্রাণু বীর্যের একমাত্র সেলুলার উপাদান। অন্যদিকে বীর্য হ’ল শুক্রাণুর তরল বাহক।

৬। শুক্রাণু নিষেকের জন্য একই প্রজাতির একটি ডিমের কোষে একটি পুরুষের জিনগত তথ্য বহন করে। অন্যদিকে বীর্য শুক্রাণু বহন করে তাদের পুষ্টি জোগায় এবং তাদের গতিশীলতা বজায় রাখে।

Exit mobile version