সাবান ও ডিটারজেন্টের মধ্যে পার্থক্য

সাবান (Soap):

সাবান হলো উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবন। সাবান মুলত কোন কিছু ধোয়া, গোসল করা এবং পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও সাবান টেক্সটাইল শিল্পে পিচ্ছিলকারক (লুব্রিকেন্ট) হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেসব সাবান পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মূলত উদ্ভিজ্জ অথবা প্রাণীজ তেল এর গাঢ় ক্ষারীয় দ্রবণ থেকে নিষ্কাশন করা হয় (তেল বা চর্বিতে তিন মোল ফ্যাটি অ্যাসিড এক মোল গ্লিসারল এর সাথে সংযুক্ত থাকে)। সোডিয়াম আয়ন পানির প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ফ্যাটি এসিডের আয়ন ময়লা বা তৈলাক্ত পদার্থের কণার দিকে আকৃষ্ট হয়। এ সময় তেলের অণুর চারদিকে ফ্যাটি এসিডের অণুগুলো ভিড় করে পানির সঙ্গে বিক্রিয়া না করেই পানির ওপর ভেসে ওঠে। এতে কাপড় থেকে তৈলাক্ত পদার্থ বা ময়লা মুক্ত হয় এবং কাপড় পরিষ্কার হয়। পাশাপাশি কাপড় নাড়াচাড়া করলে বা ঘষা দিলে তেল ও ময়লা আরো সহজে কাপড় থেকে পৃথক হয়ে যায়।

শরীর পরিষ্কার রাখা সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন। শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে নানা রকম সংক্রামক রোগ ও চর্মরোগ হতে পারে। শুধু পানি দিয়ে ধুলেই ত্বক পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের ময়লা, ধুলা ও তৈলাক্ত ভাব দূর হয়। গোসল করার সময় আমরা যে সাবান ব্যবহার করি, তাকে সাধারণ সাবান বলে। অনেক সময় একে ‘বিউটি বার’ও বলা হয়। এ ধরনের সাবান ক্ষারীয় প্রকৃতির। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য এ ধরনের সাবান উপযুক্ত। শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করা উত্তম। ডিওডরেন্ট বা গন্ধনাশক সাবান বলে আরেক ধরনের সাবান আছে, যাতে ব্যাকটেরিয়ানাশক উপাদান থাকে। এ সাবান শরীরের গন্ধ দূর করে। মুখের ত্বকে অবশ্য এ সাবান ব্যবহার করা যায় না। তবে ঘামের গন্ধ দূর করার জন্য ডিওডরেন্ট সাবান বেশ উপকারী।

ডিটারজেন্ট (Detergent):

উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম বা পটাসিয়াম লবণ হলো সাবান। ডিটারজেন্টের গঠন অনেকটা সাবানের মত । এর অণুর একটি অংশ জল অনুরাগী এবং অপরটি জল বিরাগী । এগুলি কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের হাইড্রোকার্বন থেকে তৈরি হয় । হাইড্রোকার্বনের অংশটি জল বিরাগী এবং জল অনুরাগী অংশটি সালফেট বা সালফোনেট দিয়ে গঠিত । ওয়াশিং পাউডারে প্রায় 10-30% ডিটারজেন্ট থাকে । ডিটারজেন্টে সোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম সিলিকেট মেশানো হয়, কারণ এরা ডিটারজেন্টকে শুষ্ক রাখে । ডিটারজেন্টের সঙ্গে সোডিয়াম ট্রাইপলি ফসফেট বা সোডিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে একে ক্ষারীয় করলে এর ময়লা পরিষ্কারের ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যায় । ডিটারজেন্টের কার্বক্সি মিথাইল সেলুলোজ উপাদানটি জলের মধ্যে ময়লার অণুগুলিকে প্রলম্বিত রাখে । ব্লিচিং পদার্থ হিসাবে সোডিয়াম পারবোরেট মেশালে শুভ্রতা বাড়ে ।

সাবানের পরিবর্তে জামা-কাপড় কাচা বা ধোয়ার জন্য বহুল পরিমাণে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে । সমস্ত ডিটারজেন্ট কিন্তু একই সংযুক্তি থাকে না । প্রচলিত দুটি সিন্থেটিক ডিটারজেন্ট হল— (1) দীর্ঘ শৃঙ্খল সোডিয়াম অ্যালকিল সালফেট (CH3 – (CH2)10 – CH2 – SO-4Na+) এবং (2) দীর্ঘ শৃঙ্খল সোডিয়াম অ্যালকিল বেঞ্জিন সালফানেট (CH3 – (CH2)11 – C6H4 – SO-3Na+) । বর্তমানে দ্বিতীয় ডিটারজেন্টটি বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে । ডিটারজেন্টের কার্যকরী মূলক (R -OSO₃Na).

সাবান ও ডিটারজেন্টের মধ্যে পার্থক্যঃ

সাবান ও ডিটারজেন্ট উভয়ে ময়লা পরিষ্কারক হিসাবে ব্যবহৃত হলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। সাবান ও ডিটারজেন্টের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হলো-

১। উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম বা পটাসিয়াম লবণ হলো সাবান। অন্যদিকে, দীর্ঘ কার্বন শিকল যুক্ত অ্যালকাইল বেনজিন সালফোনিক এসিডের সোডিয়াম লবণ হলো ডিটারজেন্ট।

২। সাবান জলীয় মাধ্যম ছাড়া কাজ করতে পারে না। অন্যদিকে, ডিটারজেন্ট জলীয় ও অজলীয় উভয় মাধ্যমে কাজ করতে পারে।

৩। সাবানের ডিজারজেন্টের চেয়ে কম শক্তিশালী পরিষ্কারক। অন্যদিকে, ডাটারজেন্ট অত্যন্ত শক্তিশালী পরিষ্কারক।

৪। সাবান খর পানিতে নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে, খর পানিতে ক্রিয়া: ডিটারজেন্ট খর পানিতে অত্যন্ত সক্রিয়।

৫। প্রাকৃতিক তেল অথবা চর্বিকে সোডিয়াম বা পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্বারা উৎপন্ন করে সাবান তৈরি করা হয়। অন্যদিকে, দনারিকেল তেলকে হাইড্রোজেনেশন বা সোডিয়াম বিজারণ দ্বারা ডিটারজেন্ট তৈরি করা হয়।

৬। সাবান এর কার্যকরী মূলক ( R -COONa / K)। অন্যদিকে, ডিটারজেন্টের কার্যকরী মূলক (R -OSO₃Na).