থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েডের মধ্যে পার্থক্য

থাইরয়েড(Thyroid):

থাইরয়েড হলো থাইরয়েড গ্রন্থি। এই গ্রন্থিটা আমাদের গলার সামনের দিকে প্রজাপতির মতো থাকে। এর দুটো লুপাস থাকে। এর কাজ হলো থাইরয়েড হরমোন সৃষ্টি করা। হরমোনের বিষয়ে আমরা জানি। একে বলা হয়, মাস্টার অব মেটাবলিজম। অর্থাৎ আমাদের শরীরে যত রকমের ক্রিয়া-বিক্রিয়া হচ্ছে, আমাদের খাবারের ক্রিয়া-বিক্রিয়া হচ্ছে, এটি এই মেটাবলিজমটা নিয়ন্ত্রণ করে। এই মাস্টার গ্রন্থি থাইরয়েড। এর মানে, অনেক বড় একটি ভূমিকা রয়েছে।

এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে। পিটুটারি ও হাইপোথেলামাস থেকে। হাইপোথেলামাস থেকে পিটুইটারি, পিটুইটারি থেকে থাইরয়েড। থাইরয়েড হরমোনের কাজ হলো শরীরের বিপাককে ব্যবস্থাপনা করা। আমরা যে আয়োডিন খাচ্ছি, এটি দিয়ে থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয়। আয়োডিনের ঘাটতির জন্য যেটি হয়, একে গয়েটার বলা হয়। আয়োডিন সমৃদ্ধ লবণের অভাবে দেখা যাচ্ছে, গলা ফুলে যাচ্ছে, গলগণ্ড হচ্ছে। তবে এটি এখন কমে গেছে। কারণ, এখন আয়োডিনসমৃদ্ধ লবণ বাজারে এসেছে।

থাইরয়েডের সমস্যাগুলোকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হলো, হরমোনের আধিক্য, আরেকটি হলো হরমোন কম বের হওয়া। আরেকটি হলো থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। ফুলে যাওয়ার গলগণ্ডের কারণে হতে পারে। অথবা একটি টিউমারের কারণে হতে পারে। একটি নডিউল হতে পারে, আবার ক্যানসারও হতে পারে। এগুলো হলো ফুলে যাওয়া। সুতরাং কারো যদি ফোলা থাকে, এটি আধিক্যর জন্য হতে পারে আবার কমের জন্য হতে পারে। আবার কখনো সিম্পল এডিনোমার জন্য হতে পারে। প্রচলিতগুলো হলো, হরমোনের আধিক্যের জন্য। অথবা হরমোন কমের জন্য। অর্থাৎ হাইপার থাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম। হাইপার মানে বেশি, হাইপো মানে কম। এটি থাইরয়েডের ক্ষেত্রেও হতে পারে।

প্যারাথাইরয়েড(Parathyroid):

প্যারা শব্দের অর্থ হলো নিকটে। মানব শরীরে গলায় থাইরয়েড গ্রন্থির নিকটেই ৪টি ছোট ছোট গ্রন্থি থাকে- যাদেরকে একত্রে প্যারা থাইরয়েড গ্রন্থি বলে। এরাও শরীরের হরমোন গ্রন্থির অংশ। যেখান থেকে প্যারা হরমোন নামক হরমোন নি:সৃত হয়। এই বিশেষ হরমোন আমাদের শরীরের অতি প্রয়োজনীয় কিছু লবনের (যেমন- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সুস্থ সবল হাঁড় গঠনের জন্য একান্ত আবশ্যকীয়। তাছাড়াও আয়নিত ক্যালসিয়াম রক্তে অবস্থান করে মাংসপেশী ও স্নায়ুর কাজকে স্বাভাবিক রাখে। রক্তে আয়নিত ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম বা বেশি হলে মাংসপেশী ও স্নায়ু সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

তাই যখনই রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা খুব কমে যায়, তখন থাইরয়েড গ্রন্থি অধিক পরিমাণে প্যারাথরমোন নামক হরমোন নি:সৃত করে। এই হরমোনের প্রভাবে কিডনী অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম রি-এবজরবসন (শোষণ) করে এবং হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বের করে রক্তে ক্যালসিয়াম এর মাত্রা ঠিক রাখে।

থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েডের মধ্যে পার্থক্য:

থাইরয়েড হলো থাইরয়েড গ্রন্থি। এই গ্রন্থিটা আমাদের গলার সামনের দিকে প্রজাপতির মতো থাকে। থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েডের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। থাইরয়েড একটি বৃহত ড্যাক্টলেস গ্রন্থি যা বিপাকের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে বৃদ্ধি এবং বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে হরমোন তৈরি করে এবং গোপন করে। অন্যদিকে প্যারাথাইরয়েড থাইরয়েডের পাশের গ্রন্থি যা দেহে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

২। থাইরয়েড ল্যাঙ্কেক্সের ঠিক নীচে, শ্বাসনালীর সামনে অবস্থিত। অন্যদিকে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিগুলি তার পাশের দিকের থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যাপসুলের সাথে শারীরিকভাবে সংযুক্ত থাকে।

৩। থাইরয়েড এ একটি মাত্র আছে শরীরে থাইরয়েড গ্রন্থি। অন্যদিকে প্যারাথাইরয়েড এ দেহে চারটি প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি রয়েছে।

৪। থাইরয়েড একটি প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি। অন্যদিকে প্যারাথাইরয়েড হ’ল একটি চালের শস্য আকারের গ্রন্থি।

৫। থাইরয়েড গ্রন্থির রঙ বাদামী-লাল। অন্যদিকে প্যারাথাইরয়েডের রঙ সরিষা-হলুদ।

৬। থাইরয়েড গ্রন্থি দ্বারা উত্পাদিত দুটি হরমোন হ’ল ট্রায়োডোথোথেরিন (টি 3) এবং থাইরক্সিন (টি 4)। অন্যদিকে প্যারাথাইরয়েড হরমোন (পিটিএইচ) প্যারাথাইরয়েড দ্বারা উৎপাদিত হয়।

৭। থাইরয়েড হরমোন শরীরে বিপাকের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে প্যারাথাইরয়েড হরমোনগুলি রক্তে ক্যালসিয়াম আয়নগুলির ঘনত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে।