কচ্ছপ ও কাছিমের মধ্যে পার্থক্য

কচ্ছপ (Tortoise):

কচ্ছপ এক ধরনের সরীসৃপ প্রানী যারা জল এবং ডাঙা দুই জায়গাতেই বাস করে । এদের শরীরের উপরিভাগ শক্ত খোলসে আবৃত থাকে যা তাদের শরীরকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রক্ষা করে। কচ্ছপ পৃথিবীতে এখনও বর্তমান এমন প্রাচীন প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে কচ্ছপের প্রায় ৩০০ প্রজাতি পৃথিবীতে রয়েছে, এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি মারাত্মক ভাবে বিলুপ্তির পথে রয়েছে।

কচ্ছপ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিবর্তন করতে পারে। এদের শরীরের উপরিভাগ শক্ত খোলসে আবৃত থাকে, যা এদের শরীরকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রক্ষা করে। খোলসের ওপরের অংশকে (Carapace) ক্যারাপেস এবং নিচের অংশকে (Plastron) প্লাস্ট্রন বলে। এরা কয়েক সেন্টিমিটার থেকে দুই মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। কচ্ছপ সাধারণত দিবাচর প্রাণী। দলবদ্ধ থাকতে এরা পছন্দ করে না। একাকী জীবনেই এরা অভ্যস্ত।

কচ্ছপের অনেক প্রজাতি পানিতে বা পানির আশপাশে বাস করলেও ডাঙায় ডিম ছাড়ে। এদের খোলসের ওপরের অংশে যে সমকেন্দ্রবিশিষ্ট রিং থাকে তা থেকে এদের বয়স সম্পর্কে একটি ধারণা করা যায়; যেমনটা গাছের ক্ষেত্রে তাদের বর্ষবলয়ে দেখা যায়।

ডাঙায় বসবাসকারী বেশির ভাগ কচ্ছপ তৃণভোজী। এরা ঘাস, আগাছা, পাতা, ফুল ও ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। যদিও কিছু সর্বভুক কচ্ছপও এই পরিবারে আছে। পোষ্য কচ্ছপ সাধারণত ঘাস, পাতা, আগাছা ও কিছু প্রজাতির ফুল খায়।

কাছিম (Turtles):

পৃথিবীর প্রায় সকল সমুদ্রেই এদের বিস্তৃতি রয়েছে এবং এরা বাসা বানানোর জন্য সাধারণত তুলনামূলক উষ্ম অঞ্চল পছন্দ করে। খাবার গ্রহণ, বিপরীত লিংগের সাথে মিলন থেকে শুরু করে সকল আনুষঙ্গিক কাজই সাগরে করলেও ডিম পাড়ার সময়ে স্ত্রী কাছিমকে দ্বীপে আসতেই হয়। এরা ডিম পাড়ার সময়ে খুব নির্জন স্থান বেছে নেয় এবং যদি সেখানে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখে তাহলে সাথে সাথে ডিম পাড়া বন্ধ করে মা কাছিম আবার সাগরে ফেরত চলে যায়।

ডিম পাড়ার সময় বালিতে গর্ত করে ডিম পাড়ে এবং শেষ হবার সাথে সাথে বালি দিয়ে ঢেকে দেয় যাতে করে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই বাচ্চাগুলো আবার সাগরে চলে যেতে পারে। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার জন্য মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে। কুমিরের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার সামান্য হেরফের হলে লিঙ্গের রূপান্তর অর্থাৎ পুরুষ থেকে স্ত্রী কিংবা স্ত্রী থেকে পুরুষ হলেও এদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা পরিলক্ষিত হয়না। গড়ে ৬০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে বাচ্চাগুলো সাগরে পাড়ি জমায়। বলে রাখা ভাল যে, পুরুষ কাছিম একবার ডিম ফুটে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার পরে আর কখনো দ্বীপে ফেরত আসেনা, সমগ্র জীবনচক্র তার সাগরেই কেটে যায়।

কচ্ছপ ও কাছিমের মধ্যে পার্থক্যঃ

কচ্ছপ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিবর্তন করতে পারে। কচ্ছপ ও কাছিমের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১। কচ্ছপ হলো স্থলজ প্রাণী। এরা বেশিরভাগ সময় স্থলেই কাটায়। অন্যদিকে, কাছিম হলো জলজ প্রাণী। এরা পানিতে থাকতেই পছন্দ করে।

২। কচ্ছপ স্থলে থাকে বলে এর কোষগুলো গম্বুজযুক্ত এবং গোলাকার। অন্যদিকে, কাছিমের কোষগুলো পাতলা এবং পানিতে চলাচলের উপযোগী। এছাড়াও সহজে সাঁতার কাটার জন্য কাছিমের কোষ গুলো হলো স্ট্রীমলাইন্ড।

৩। কচ্ছপের পিছনের পা বড় হওয়ায় এটি সহজেই ভারী কচ্ছপের অতিরিক্ত ওজন বহন করতে পারে। অন্যদিকে, কাছিমের পা গুলো ফ্লিপার বা ওয়েব্ড হওয়ায় এরা সহজেই পানিতে চলাচল করতে পারে।

৪। কচ্ছপের খোলস গম্বুজ আকৃতির। অন্যদিকে, কাছিমের খোলস সমতল ও সুষম আকৃতির।

৫। কচ্ছপ অধিকাংশই তৃনভোজী, তবে কোন কোনটি মাংস পছন্দ করে। অন্যদিকে, কাছিম ফল-ফুল, শাক-সবজি এবং মাংস অর্থাৎ সর্বভূক।