তরঙ্গ ও শব্দের মধ্যে পার্থক্য

তরঙ্গ (Wave):

পুকুর বা জলাশয়ের পানিতে এক টুকরো ঢিল ফেললে চারিদিকে পানির ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। সমুদ্রের সৈকতে বা বিশাল জলাশয়ের পাড়ে পানির ঢেউ আছড়ে পড়ে। এই ঢেউ বিজ্ঞানের ভাষায় তরঙ্গ। আমাদের চারিদিকে বিভিন্ন রকম তরঙ্গের মধ্যে একটি হলো পানির তরঙ্গ। অন্যান্য তরঙ্গ হলো শব্দ তরঙ্গ, আলোক তরঙ্গ, বেতার তরঙ্গ, বিভিন্ন ধরনের তাড়িতচুম্বকীয় তরঙ্গ ইত্যাদি। তরঙ্গের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চারিত হয়। পুকুরের তরঙ্গ সম্পর্কে আমাদের কিছু ধারণা আছে সত্য, কিন্তু বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গের পর্যাপ্ত এবং সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে তরঙ্গ সম্পর্কে আমাদের আরও কিছু জানা দরকার। শব্দ এক রকম তরঙ্গ। যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন কোনো জড় মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ বলে।

শব্দ (sound):

শব্দ এক প্রকার শক্তি। বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ সৃষ্টি হয়। শব্দ সঞ্চারণের জন্য জড় মাধ্যম প্রয়োজন। জড় মাধ্যমের মধ্যে কোন বস্তুর কম্পন হলে মাধ্যমের কণাগুলো আন্দোলিত হয়ে তরঙ্গের সৃষ্টি করে। এই তরঙ্গ জড় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত হয়ে আমাদের কানে প্রবেশ করে। কানের মধ্যে বিভিন্ন যান্ত্রিক কৌশলের মাধ্যমে মস্তিষ্কে শব্দের অনুভুতি সৃষ্টি হয়। আমরা শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শ্রবণ প্রক্রিয়ার উত্তেজনা হিসাবেও দেখা যায় যা শব্দের উপলব্ধির ফলস্বরূপ। এক্ষেত্রে শব্দ একধরনের সংবেদন।

তরঙ্গ ও শব্দ এর মধ্যে পার্থক্যঃ

তরঙ্গ ও শব্দ বৈশিষ্ট্য গত দিক থেকে উভয়ের মধ্যে কিছু মিল থাকলেও, এদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে তরঙ্গ ও শব্দ পার্থক্য দেখানো হলো-

১. কোনো জড় মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ বলে। অন্যদিকে শব্দবিজ্ঞান হলো আন্তঃশৃঙ্খলা বিজ্ঞান যা কম্পন, শব্দ, শ্রবণাতীত শব্দ এবং অবশ্রাব্য শব্দসহ গ্যাস, তরল এবং কঠিনের মধ্যে যান্ত্রিক তরঙ্গ অধ্যয়নের বিষয়।

২. মাধ্যমের কণার স্পন্দন গতির ফলে তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, অর্থাৎ শব্দের উৎস বস্তুর কম্পন।

৩. মাধ্যমের কণাগুলো সাম্য অবস্থান থেকে উপরে নিচে অথবা সামনে পেছনে স্পন্দিত হতে থাকে। তরঙ্গ মাধ্যমের মধ্য
দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় না। অন্যদিকে মাধ্যমের ঘনত্ব এবং চাপের মধ্যে একটি জটিল সম্পর্কের দ্বারা। তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত এই সম্পর্কটি মাধ্যমের মধ্যে শব্দের গতি নির্ধারণ করে।

৪. তরঙ্গ মাধ্যমের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি ও তথ্য সঞ্চারণ বা স্থানান্তর করে। অন্যদিকে শব্দ তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতি (ঘনত্ব, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদি)-এর ওপর নির্ভরশীল।

৫. তরঙ্গের কণাগুলো বিভিন্ন বেগে স্পন্দিত হয়। স্পন্দনের বেগ পর্যায়ক্রমে কমে বাড়ে। কিন্তু তরঙ্গ সুষম বেগে
সঞ্চারিত হয়। অর্থাৎ কণাগুলোর স্পন্দন গতি এবং তরঙ্গ বেগ এক নয়। অন্যদিকে শব্দের তীব্রতা তরঙ্গের বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক।