আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্য

আবহবিকার (Weathering):

আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন উষ্ণতা, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের উপরের খনিজ একই স্থানে থেকে যান্তিক এবং রাসায়নিক ভাবে চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে আবহবিকার বলে। অর্থাৎ আবহবিকার শব্দটি এসেছে আবহাওয়া (Weather) থেকে। আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের (যেমন—উয়তা, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত, এবং বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাস) সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চূর্ণবিচূর্ণ এবং রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিয়ােজিত হলে, তাকে আবহবিকার (weathering) বলে। আবহবিকার সংঘটিত হয়- যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও জৈবিক পদ্ধতিতে। তাই আবহবিকারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

১. যান্ত্রিক আবহবিকার,

২. রাসায়নিক আবহবিকার ও

৩. জৈবিক আবহবিকার

পুঞ্জিত ক্ষয় (Mass wasting):

অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর আবহবিকার প্রাপ্ত চূর্ণবিচূর্ণ শিলারাশি ধীর গতিতে ভূমির ঢাল বরাবর উপর থেকে নিচে নেমে আসার প্রক্রিয়াকে পুঞ্জিত ক্ষয় বলে। অর্থাৎ পুঞ্জিত ক্ষয় বলতে ভূমিভাগ থেকে মৃত্তিকা ও শিলাজাত পদার্থের আলগা হয়ে পড়া এবং অভিকর্ষীয় বলের প্রভাবে নিম্নে পতিত হওয়াকে বোঝায়। এই পদার্থসমুহের প্রবাহ বা অধঃপতন এদের অবস্থান এবং অভিকর্ষ শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যদিও জল, বরফ বা বাতাসের উপসস্থিতিতে এই পতন দ্রুততর হয়। এছাড়া পুঞ্জিত ক্ষয়ের ক্ষেত্রে ভূমিঢালের কৌনিক মান, আবহবিকার প্রাপ্ত পদার্থের আকার ও আয়তন, উদ্ভিদের প্রভাব, মানুষের কার্যাবলী বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ভূ বিজ্ঞানী শার্প এর মত অনুসারে পুঞ্জিত ক্ষয় কে প্রধানত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. ধীর প্রবাহ

২. দ্রুত প্রবাহ

.৩. ধ্বস

৪. অবনমন

আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্যঃ

অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর আবহবিকার প্রাপ্ত চূর্ণবিচূর্ণ শিলারাশি ধীর গতিতে ভূমির ঢাল বরাবর উপর থেকে নিচে নেমে আসে। আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন উষ্ণতা, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত দ্বারা শিলার বিকার বা চরিত্র গত পরিবর্তনের ঘটনাকে আবহবিকার বলে। অন্যদিকে,
অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর আবহবিকার প্রাপ্ত শিলা চূর্ণ পূঞ্জাকারে ধীরগতিতে উপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসার ঘটনাকে পুঞ্জিত ক্ষয় বলে।

২। আবহবিকার অত্যন্ত ধীর গতিতে ঘটে থাকে। অন্যদিকে, পুঞ্জিত ক্ষয় ধীর অথবা দ্রুত উভয় গতিতেই ঘটে থাকে।

৩। আবহবিকারের ফলে পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটে। অন্যদিকে, পুঞ্জিত ক্ষয়ে পদার্থের ভৌতধর্মের পরিবর্তন ঘটলেও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটে না।

৪। আবহবিকার প্রাপ্ত পদার্থ সমূহ একই স্থানে থাকে এবং পদার্থের অবস্থানের কোন পরিবর্তন ঘটে না। অন্যদিকে, পুঞ্জিত ক্ষয়ে পদার্থ সমূহের অবস্থানের স্থানান্তর ঘটে এবং পদার্থ সমূহ ধীর গতিতে উপর থেকে নিচে নামতে থাকে।

৫। আবহবিকার হল ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়। অন্যদিকে, পুঞ্জিত ক্ষয়‌ হল আবহবিকারের পরবর্তী পর্যায় বা নগ্নীভবনের প্রাথমিক পর্যায়।

৬। আবহবিকারের নিয়ন্ত্রক সমূহ হল আবহাওয়ার উপাদান যেমন বায়ুপ্রবাহ, সূর্যালোক, সূর্যের উষ্ণতা, মেঘাচ্ছন্নতা, তুষার পাত, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি। অন্যদিকে, পুঞ্জিত ক্ষয়ের নিয়ন্ত্রক সমূহ হল পৃথিবীর অভিকর্ষক বল এবং বিভিন্ন বহির্জাত শক্তি যেমন জলপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্র তরঙ্গ ইত্যাদি।