জাঙ্গল ও লবণাম্বু উদ্ভিদের মধ্যে পার্থক্য

জাঙ্গল উদ্ভিদ (xerophytes)

জাঙ্গল উদ্ভিদ ও মরুভূমির অথবা মরুপ্রায় অঞ্চলের বালুকাময় মাটিতে অথবা পাহাড়-পর্বতের পাথুরে মাটিতে জলের পরিমাণ অত্যন্ত কম। এইরকম মাটিতে যে ধরনের গাছপালা জন্মায়, তাদের জাঙ্গল উদ্ভিদ (Xerophytes) বলে। অর্থাৎ যে সমস্ত উদ্ভিদ বৃষ্টিপাতের তুলনায় অধিক বাষ্পীভবন যুক্ত বা স্বল্প আর্দ্রতা যুক্ত মৃত্তিকায় শুষ্ক পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে ওই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে নিজেদের জীবন চক্র সম্পূর্ণ করে, তাদের জেরোফাইট বা জাঙ্গল উদ্ভিদ বলা হয়।

ওপেন হাইমার এর মতে, যে সব উদ্ভিদ পরিবেশের জলের অভাব কে সাফল্যের সঙ্গে আয়ত্ত্ব করার জন্য নিজেদের দেহের অঙ্গ সংস্থান, শারীর স্থান ও শারীর বৃত্তিয় পরিবর্তনের মাধ্যমে বসবাস করে তারাই জাঙ্গল উদ্ভিদ।

লবণাম্বু উদ্ভিদ (Halophytes):

লবণাম্বু উদ্ভিদ ও সাধারণ উদ্ভিদের জীবনধারণের পক্ষে অনুপযুক্ত, খুব বেশি পরিমাণে খনিজ লোনা মাটিতে অথবা লােনা জলে যেসব উদ্ভিদ স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করে, সেইসব উদ্ভিদকে বলা হয় লবণাম্বু উদ্ভিদ (Halophytes )। প্রচুর পরিমাণে অজৈব লবণ যথা- সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট যুক্ত লবণাক্ত মাটিতে এই উদ্ভিদগুলি বিস্তারলাভে সক্ষম।

লবণাম্বু হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ যা সাধারণত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনা বা লবণাক্ত জল বা পানিতে জন্মায়। ম্যানগ্রোভ (Mangrove) জাতীয় উদ্ভিদই হলো লবণাম্বু উদ্ভিদ। যেমন- সুন্দরী (Heritiera fomes), গরান, গেঁওয়া (Excoecaria agallocha), কেওড়া (Sonneratia apetala) ইত্যাদি।

জাঙ্গল ও লবণাম্বু উদ্ভিদের মধ্যে পার্থক্যঃ

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদ গোষ্ঠীকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করেছেন, যার অন্যতম দুটি হল জাঙ্গল উদ্ভিদ ও লবনাম্বু উদ্ভিদ। নিচে জাঙ্গল ও লবনাম্বু উদ্ভিদের পার্থক্য আলোচনা করা হলো-

১। যে সমস্ত উদ্ভিদ জল সঙ্কট যুক্ত পরিবেশে জন্মায় ও বড় হয়, তাদের জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইট বলে। যেমন – ফণীমনসা, ঘৃতকুমারী, বাবলা, আকন্দ, ক্যাকটাস ইত্যাদি। অন্যদিকে, সমুদ্র উপকূলবর্তী লবণাক্ত জলাসিক্ত পরিবেশে যে বিশেষ শ্রেণির উদ্ভিদ প্রজাতি দেখা যায়, তাদের লবনাম্বু বা হ্যালোফাইট উদ্ভিদ বলে। যেমন – সুন্দরী, গরান, হেতাল, গোলপাতা ইত্যাদি।

২। জাঙ্গল উদ্ভিদ মরু বা মরু জলবায়ু যুক্ত শুষ্ক পরিবেশে জন্মায়। অন্যদিকে, হ্যালোফাইট শ্রেণীর উদ্ভিদ লবণাক্ত আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মায়।

৩। কম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস, অধিক বাষ্পীভবন এবং মাটিতে প্রকট জলাভাব যুক্ত পরিবেশে জাঙ্গল উদ্ভিদ জন্মগ্রহণ করে। অন্যদিকে, প্রচুর পরিমাণে অজৈব লবণাক্ত যুক্ত কাদামাটি ও লবণাক্ত জলের উপকূলীয় ও নদী মোহনায পরিবেশে লবণাম্বু উদ্ভিদ জন্মায়।

৪। জেরোফাইট শ্রেণীর উদ্ভিদ গুলি ক্ষণস্থায়ী থেকে দীর্ঘমেয়াদী জীবনচক্র বিশিষ্ট হয়। এরা একবর্ষজীবী বা বহুবর্ষজীবী হয়। অন্যদিকে, হ্যালোফাইট শ্রেণীর উদ্ভিদ গোষ্ঠী দীর্ঘমেয়াদী জীবনচক্র বিশিষ্ট হয়ে থাকে।

৫। জেরোফাইট জাতীয় উদ্ভিদ জলের প্রাপ্যতা অনুযায়ী কোশের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটায়। এরা কোশের মধ্যে জল সঞ্চয় করে রাখে। অন্যদিকে, হ্যালোফাইট জাতীয় উদ্ভিদের কোশ নির্দিষ্ট আকারের হয় এবং কোশগুলি পুরু ও শক্ত প্রাচীর দ্বারা আবদ্ধ থাকে।

৬। বাষ্পমোচন ও প্রস্বেদন রোধ করার জন্য জাঙ্গল উদ্ভিদের পাতাগুলি কাঁটায় পরিণত হয়। পাতাগুলি রোম ও মোমের আস্তরণ দিয়ে ঢাকা থাকে যাতে অতিরিক্ত জল শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে। অন্যদিকে, লবণাম্বু উদ্ভিদের পাতাগুলি পুরু কিউটিকল যুক্ত, মোমের মত মসৃণ এবং পাতাগুলি ছোট ও চামড়ার মতো শক্ত হয়।

৭। জেরোফাইট শ্রেণীর উদ্ভিদ গুলি বীরুৎজাতীয়। অন্যদিকে, হ্যালোফাইট শ্রেণীর উদ্ভিদ গুলি বেঁটে ও গম্বুজ আকারের এবং এগুলি বীরুৎ ও কাষ্ঠ ল প্রকৃতির হয়।