ভাবর ও তরাই এর মধ্যে পার্থক্য

ভাবর (Bhavar) :
পশ্চিমে সিন্ধু নদ থেকে পূর্বে তিস্তা নদী পর্যন্ত শিবালিক পার্বত্যঞ্চলের পাদদেশ বরাবর অবস্থিত সংকীর্ণ নুড়ি পাথরময় ভূমিভাগকে ভাবর বলে। উত্তর ভারতের অন্যতম ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ গঙ্গা সমভূমি। এই সমভূমি অঞ্চলের উত্তর প্রান্তের ভূমির নাম ভাবর। অঞ্চলটি হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে অবস্থিত। অর্থাৎ হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে অসংখ্য নদী শিবালিক অঞ্চলের পাদদেশে নেমে এসেছে। এইসকল নদীগুলি প্রাকৃতিকভাবেই অধিক পরিমাণে ক্ষয়প্রবণ এবং এদের বহন ক্ষমতাও অনেকাংশে বেশী । উচ্চতাহ্রাস জনিত কারণে এরা এই অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নুড়ি, পাথর বা ট্যালাস জমা করতে থাকে, যা সঞ্চিত হয়ে কালক্রমে ভাবরের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাবর ভূমিভাগ নুড়ি-পাথর দ্বারা গঠিত হওয়ায় অঞ্চলটি অত্যন্ত সচ্ছিদ্র প্রকৃতির। এই অঞ্চলে ছোট ছোট নদীগুলি ভূমি ভাগ সচ্ছিদ্র হওয়ার কারণে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। যে নদীগুলি এই অঞ্চলে নুড়ি-পাথরের মধ্য দিয়ে ভূ-ভাগের ভিতরে প্রবেশ করে সেগুলিই আবার তরাই অঞ্চলে ফল্গুধারার মত আত্মপ্রকাশ করে। এই ভূমিতে নুড়ি, পাথর বেশি থাকে বলে এটি অনুর্বর অঞ্চল ফলে চাষবাস খুব ভালো হয় না।

তরাই (Terai) :
ভাবর অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তে ভূ-গর্ভস্থ নদীগুলি যেখানে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেখানকার 15 থেকে 30 কিমি প্রশস্ত সাতস্যাতে জলাভূমিকে সাধারণভাবে তরাই বলা হয়। তরাই হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত জলাভূমি, তৃণভূমি, সাভানা ও অরণ্যময় বলয় অঞ্চল। এটি হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণে এবং গাঙ্গেয় সমভূমির উত্তরে অবস্থিত। অঞ্চলটি পশ্চিমে যমুনা নদী ধরে ভারতের হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড থেকে পূর্বে উত্তরপ্রদেশ ও বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্বাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, ভুটান ও আসামে এ অঞ্চলটির কিয়দংশ ডুয়ার্স নামে পরিচিত।

তরাই অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত হিমালয়ের পাথর, নুড়ি আর ক্ষয়প্রাপ্ত মাটিতে তৈরি বনময় ভাবর অঞ্চল। তরাই অঞ্চলের মাটিতে কাদা ও বালির পর্যায়ক্রমিক স্তর দেখা যায়। এখানকার ভৌমজলপৃষ্ঠ উচ্চ হওয়ায় অনেক ঝোরা ও জলভূমি দেখা যায়। তরাই অঞ্চলের নদীগুলিতে বর্ষাকালে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা হয়।

ভাবর ও তরাই এর মধ্যে পার্থক্যঃ
ভাবর ও তরাই হলো দুই ধরনের অঞ্চল যা সাধারণত নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা যায়। এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১. ভাবর হলো নদীর তীরবর্তী উঁচু এলাকা যা সারা বছর পানিতে ডুবে থাকে না। ভাবর সাধারণত নদীর পলি দ্বারা গঠিত হয়। ভাবর এলাকায় সাধারণত ঘাস, লতাপাতা ও ছোট গাছপালা জন্মে।

অন্যদিকে, তরাই হলো নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকা যা সারা বছর পানিতে ডুবে থাকে। তরাই সাধারণত নদীর পলি ও বালি দ্বারা গঠিত হয়। তরাই এলাকায় সাধারণত জলাভূমি, বন ও তৃণভূমি দেখা যায়।

২. ভাবর এলাকায় সাধারণত ঘাস জন্মায় যা গবাদি পশুর জন্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, ভাবর এলাকায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প গড়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, তরাই এলাকায় সাধারণত জলাভূমি, বন ও তৃণভূমি দেখা যায়। এসব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী বাস করে। এছাড়াও, তরাই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা যায়।

৩. উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাবর অঞ্চল দেখা যায়। অন্যদিকে, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি নদীর তীরবর্তী এলাকায় তরাই অঞ্চল দেখা যায়।

৪. হিমালয়ের নদীগুলি ভাবর অংশে এসে নুড়ি, পাথর, কাকরের স্থুপে হারিয়ে যায়। অন্যদিকে, ভাবর অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া নদীগুলি তরাই অঞ্চলে এসে ফাল্গুনধারার মতো আত্মপ্রকাশ করে।

৫. ভাবর ভূমিতে নুড়ি, পাথর বেশি থাকে বলে এটি অনুর্বর অঞ্চল। চাষবাস খুব ভালো হয় না। অন্যদিকে, ভাবরের তুলনায় তরাই উর্বরতা বেশি তাই এই অঞ্চলে চা বাগান দেখা যায়।

৬. ভাবরের গড় বিস্তার ৮ থেকে ১৬ কিমি। অন্যদিকে, তরাইয়ের গড় বিস্তার ২০ থেকে ৩০ কিমি।