জন্মহার ও মৃত্যুহার এর মধ্যে পার্থক্য

জন্মহার ও মৃত্যুহার কোনো দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক। কোনো দেশের জন্মহার ও মৃত্যুহার বিভিন্ন কারনের উপর নির্ভর করে। কোনো নিদিষ্ট সংখ্যক মানুষ নিদিষ্ট সময়ে যত জন শিশুর জন্ম দেয়, তার হারকে জন্মহার বলা হয়। জন্মহার ও মৃত্যুহার এর মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

জন্মহার (Birth Rate) :
কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে এবং নির্দিষ্ট একটি বছরে প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মোট সংখ্যাকে জন্মহার বলে। মানুষের মরণশীলতার কারণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, সন্তান জন্মের মাধ্যমে তা পূরণ হয়। সাধারণত ১৫ বছর থেকে শুরু করে ৪৫ বা ৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের প্রজনন ক্ষমতা থাকে। প্রজননশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো স্থুল জন্মহার বা Crude Birth Rate। এ পদ্ধতিতে কোনো বছরে জন্মলাভকারী সন্তানের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে নির্ণয় করা হয়। স্থুল জন্মহার নির্ণয়ের জন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে জন্মলাভকারী সন্তান সংখ্যা জানা আবশ্যক।
স্থুল জন্মহার নির্ণয় করা হয় নিম্নরূপ সূত্রানুযায়ী-
স্থুল জন্মহার = কোনো বছরে জন্মলাভ করা সন্তানের মোট সংখ্যা ÷ বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা × ১০০০

সাধারণ জন্মহার নির্ণয় করা হয় নিম্নোক্তভাবে
সাধারণ জন্মহার = নির্দিষ্ট বছরে জন্মলাভকারী সন্তান ÷ নির্দিষ্ট বছরে প্রজননক্ষম নারীর সংখ্যা × ১০০০

মৃত্যুহার (Death Rate) :
কোনো একটি দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যার মধ্যে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বয়সের যত লোক মারা যায় তাকে মৃত্যুহার বলে। মানুষ মাত্রই মরণশীল হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার কম হলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মৃত্যুহার পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো স্থুল মৃত্যুহার বা Crude Death Rate। নির্দিষ্ট কোনো বছরে মৃত্যুবরণকারীদের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে স্থুল মৃত্যুহার পাওয়া যায়। স্থুল মৃত্যুহার নির্ণয়ের জন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে মৃত্যুর সংখ্যা জানা থাকা প্রয়োজন।

স্থুল মৃত্যুহার নির্ণয় করা হয় নিম্নোক্তভাবে-
স্থুল মৃত্যুহার = কোনো বছরে মৃত্যুবরণকারী মোট সংখ্যা ÷ বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা × ১০০০

জন্মহার ও মৃত্যুহার এর মধ্যে পার্থক্যঃ

১. কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে এবং নির্দিষ্ট একটি বছরে প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মোট সংখ্যাকে জন্মহার বলে। অন্যদিকে, কোনো একটি দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যার মধ্যে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বয়সের যত লোক মারা যায় তাকে মৃত্যুহার বলে।

২. জন্মহারের পরিমান বৃদ্ধি পেলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, অন্যদিকে মৃত্যু হার বাড়লে জনসংখ্যা হ্রাস পায়।

৩. উচ্চ জন্মহার অনিয়ন্ত্রিত জন্মহারকে নির্দেশ করে। নিম্ন জন্মহার উন্নত আর্থ-সামাজিক চরিত্রকে প্রকাশ করে। অন্যদিকে, অন্যদিকে উচ্চ মৃত্যুহার অনুন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতিফলক এবং নিম্ন মৃত্যুহার চিকিৎসা ব্যবস্থার সূলভ বিকাশকে ইঙ্গিত করে।

৪. প্রজননশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো স্থুল জন্মহার বা Crude Birth Rate। অন্যদিকে, মৃত্যুহার পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো স্থুল মৃত্যুহার বা Crude Death Rate।

৫. স্থুল জন্মহার = কোনো বছরে জন্মলাভ করা সন্তানের মোট সংখ্যা ÷ বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা × ১০০০। অন্যদিকে, স্থুল মৃত্যুহার = কোনো বছরে মৃত্যুবরণকারী মোট সংখ্যা ÷ বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা × ১০০০

৬. জন্মহারের প্রকৃতি বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। যথা – শিক্ষার মান, মাথাপিছু আয়, পরিবার পরিকল্পনা, অবসর সময়, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার প্রভৃতি। অন্যদিকে, মৃত্যুহার কোন দেশের বয়স-লিঙ্গ পিরামিড ও লিঙ্গ অনুপাতকে পরিবর্তিত করে।