হীরক ও গ্রাফাইটের মধ্যে পার্থক্য

হীরক (Diamond) :
হীরক হল সর্বাপেক্ষা মূল্যবান একটি রত্ন যা গহনা তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়। বর্ণহীন এ রত্নটি একটি মাত্র বিশুদ্ধ উপাদান কার্বন থেকে সৃষ্ট। [১] অন্য ভাষায় হীরক কার্বনের একটি বিশেষ রূপ মাত্র। হীরাকে প্রতিটি কার্বন পরমাণুর sp3 সংকরণ হয়। এতে প্রতিটি কার্বন পরমাণু অপর চারটি কার্বন পরমাণু দ্বারা চতুস্তলকীয়ভাবে পরিবেষ্টিত ও বন্ধনযুক্ত। এভাবে একটি অতিবৃহৎ ত্রিমাত্রিক অণুর সৃষ্টি হয় যা হীরকরূপে দেখা যায়। যেহেতু প্রতিটি কার্বন পরমাণুর সব যোজ্যতা ইলেকট্রন অপর চারটি কার্বন পরমাণুর সাথে বন্ধন সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ এতে কোন মুক্ত বা সঞ্চালনশীল ইলেকট্রন থাকে না সেহেতু হীরক বিদ্যুৎ অপরিবাহী।

হীরক খণ্ডকে টুকরা করতে হলে অসংখ্য শক্তিশালী কার্বন (C–C) বন্ধন ছিন্ন করতে হয়। এ কারণে হীরক অত্যন্ত শক্ত এবং প্রকৃতপক্ষে সব বস্তুর মধ্যে কঠিনতম। প্রতিটি কার্বন পরমাণু অপর চারটি কার্বন পরমাণুর সাথে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকায় হীরক রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়।

গ্রাফাইট (Graphite) :
গ্রাফাইট হচ্ছে অঙ্গার বা কার্বনের একটি রূপ[১] এর স্ফটিক ষট-কৌনিক আকৃতির। এটা সাধারণত স্তরীভূত, আঁশযুক্ত, দানাদার এবং নিবিড় পিণ্ড আকারে বা মাটির পিণ্ড আকারে পাওয়া যায়। গ্রাফাইটের কঠিনতা ১.০-২.০ এবং আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.৯-২.৩। এটি তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী। এতে কার্বনের পরিমাণ ৯৫% – ৯৬%। কাগজে ঘষলে এর কালো দাগ পড়ে বলে পেন্সিলের শীষরূপে ব্যবহার করা হয়। পারমাণবিক চুল্লীতে বিক্রিয়ার গতি মন্থর করার জন্য গ্রাফাইট ব্যবহার করা হয়।

গ্রাফাইটে কার্বন পরমাণুসমূহ সমতলীয় স্তরাকারে অবস্থিত। প্রতিটি কার্বন পরমাণু অপর তিনটি কার্বন পরমাণুর সাথে বন্ধন সৃষ্টি করে। এভাবে ছয়টি পরমাণু একটি সুষম ষড়ভুজের সৃষ্টি করে, প্রতি স্তরে ষড়ভুজ জালের সৃষ্টি হয়, কার্বন পরমাণুসমূহ এ জালের প্রতিটি কোণে অবস্থিত। পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থিত এ ধরনের অসংখ্য শিট বা স্তরের মধ্যে কোনাে রাসায়নিক বন্ধন না থাকায় এরা একে অন্যের উপর দিয়ে চলাচল করতে পারে, এ কারণে গ্রাফাইট নরম ও পিচ্ছিল।

হীরক ও গ্রাফাইটের মধ্যে পার্থক্যঃ
হীরক এবং গ্রাফাইট উভয়ই কার্বন দিয়ে তৈরি, তবে তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তা নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১. হীরকের কার্বন পরমাণুগুলি একটি টেট্রাহেড্রাল কাঠামোতে সাজানো থাকে, যার অর্থ প্রতিটি পরমাণু চারটি অন্যান্য পরমাণুর সাথে যুক্ত থাকে। এই কাঠামোটি হীরাকে তার উচ্চ শক্তি এবং কঠোরতা দেয়।

অন্যদিকে, গ্রাফাইটের কার্বন পরমাণুগুলি ষড়ভুজ কাঠামোতে সাজানো থাকে, যার অর্থ প্রতিটি পরমাণু তিনটি অন্যান্য পরমাণুর সাথে যুক্ত থাকে। এই কাঠামোটি গ্রাফাইটকে তার নরমতা এবং বিদ্যুৎ পরিবাহিতা দেয়।

২. হীরা একটি কঠিন, স্বচ্ছ পদার্থ। এটি প্রায় সবচেয়ে শক্ত প্রাকৃতিক পদার্থ। অন্যদিকে, গ্রাফাইট একটি নরম, কালো পদার্থ। এটি একটি ভাল বিদ্যুৎ এবং তাপ পরিবাহক।

৩. হীরা একটি দুর্দান্ত তাপ এবং বিদ্যুৎ অন্তরক। এটি অত্যন্ত রাসায়নিকভাবে প্রতিরোধী। অন্যদিকে, গ্রাফাইট একটি ভাল বিদ্যুৎ এবং তাপ পরিবাহক। এটি অত্যন্ত মসৃণ এবং চকচকে।

৪. হীরা মূলত অলঙ্কার এবং শিল্পকর্মে ব্যবহৃত হয়। এটি কাটার, ঘষা এবং ড্রিলিংয়েও ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, গ্রাফাইট কাগজ, পেন্সিল, লিথোগ্রাফিক প্লেট এবং পিচ্ছিলকারক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি পারমাণবিক চুল্লি এবং ইলেকট্রনিক্সেও ব্যবহৃত হয়।

৫. হীরাতে C-C বন্ডের দৈর্ঘ্য হল 154pm। অন্যদিকে, গ্রাফাইটে C-C বন্ডের দৈর্ঘ্য হল 141.5pm।

৬. ডায়মন্ডের একটি কঠোর সমযোজী বন্ধন নেটওয়ার্ক রয়েছে যা ভাঙ্গা কঠিন। অন্যদিকে, গ্রাফাইট বেশ নরম এবং এর স্তরগুলি সহজেই আলাদা করা যায়।

৭. হীরা এবং গ্রাফাইট একই পদার্থের দুটি ভিন্ন রূপ। অন্যদিকে, হীরা গ্রাফাইটের উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রার অধীনে গঠিত হয়।