মূল্যায়ন ও পরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য

মূল্যায়ন ও পরীক্ষাকে বর্তমানে একই প্রত্যয়যুক্ত বলে মনে করা হলেও উভয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। নিচে মূল্যায়ন ও পরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

মূল্যায়ন ( Evaluation ) :
মূল্যায়ন শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল , কোন কিছুর উপর মূল্য (Value ) আরােপ করা। মূল্যায়ন হচ্ছে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন বা ক্রম পরিবর্তন এবং শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য পরিমাপ। ধরা যাক , একজন শিক্ষক গণিত বিষয়ে কোন শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব পরিমাপ করে তাকে নম্বর দিলেন ৯৫ এবং তিনি গণিত বিষয়ে তার অগ্রগতি পরিমাপ করার পর মন্তব্য করলেন , শিক্ষার্থী গণিতে খুব ভাল, এটি হল মূল্যায়ন।

পরীক্ষা (Examination) :
কোনো ধারণাকে সমর্থন, খণ্ডন বা যাচাই করার জন্য কার্যপ্রণালীকে পরীক্ষা বলে। পরীক্ষায় কোন নির্দিষ্ট গুনকে প্রভাবিত করে সেটির ফলাফল বর্ণনা করা হয়। এর মাধ্যমে পরীক্ষা কারণ এবং প্রভাবের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা যায়। উদ্দেশ্য এবং মাত্রার ভিত্তিতে পরীক্ষার পার্থক্য আছে। কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষাই ফলাফলের পুনরাবৃত্তিমূলক পদ্ধতি এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে। প্রাকৃতিক পরীক্ষামূলক গবেষণারও অস্তিত্ব রয়েছে।

একজন শিশু মাধ্যাকর্ষণকে বোঝার জন্য কিছু সাধারণ পরীক্ষা করতে পারে, যেথায় বিজ্ঞানীদের দল কয়েক বছর ধরে শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঘটনাটিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে। পরীক্ষা এবং অন্যোন্য হাতে-কলমে কার্যক্রম শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা ফলাফলের মান বাড়ায় এবং একটি শিক্ষার্থীকে উক্ত বিষয়ে আরও নিয়জিত ও আগ্রহী করে; বিশেষ করে যখন এটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হয়।

মূল্যায়ন ও পরীক্ষার মধ্যে পার্থক্যঃ
১. মূল্যায়নের উদ্দেশ্য ব্যাপক ও বহুমুখী। কিন্তু পরীক্ষার উদ্দেশ্য সংকীর্ণ ও একমুখী। কেননা , মূল্যায়নের মাধ্যমে ব্যক্তির বিভিন্ন অংশের পরিমাপ করা হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক।

২. মূল্যায়ন একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিকতার নীতি অনুসরণ করা হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষা হল মূল্যায়নের একটি অংশমাত্র। তাই পরীক্ষা একটি আংশিক প্রক্রিয়া।

৩. মূল্যায়নের পরিধি ব্যাপক। মূল্যায়নের মাধ্যমে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন বিকাশ পরিমাপ করা হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষার পরিধি তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত। পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির শুধুমাত্র আংশিকভাবে বিষয়জ্ঞান পরিমাপ করা হয়।

৪. মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রাথমিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। যেহেতু মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সামগ্রিক , তাই এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক অভিজ্ঞতাগুলিকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষা যেহেতু নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক , তাই পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রাথমিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না।

৫. মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীর পরিমাণগত ও গুণগত উভয় দিকেরই বিচার করা হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর পরিমাণগত জ্ঞানকে বিচার করা হয়।

৬. মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির পুঁথিগত জ্ঞান ছাড়াও ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন অংশের পরিমাপ করা হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞান পরিমাপ করা হয়। পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিত্ব পরিমাপের বিষয়টি ততটা গুরুত্ব পায়না।

৭. মূল্যায়ন একটি বা কয়েকটি কৌশলের সমষ্টি নয় , বিবিধ কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষা হল মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী একটি কৌশলমাত্র।

৮. মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বিবিধ কৌশল অবলম্বন করা হয় এবং ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের সামগ্রিক বিচার করা হয়, তাই মূল্যায়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, পরীক্ষা যেহেতু নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক ও একমুখী, তাই পরীক্ষা একটি সরল প্রক্রিয়া।

৯. মূল্যায়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এতে বিভিন্ন ধরণের অভীক্ষার প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একক পারদর্শিতার অভীক্ষা ব্যবহার করা হয়।

১০. মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর পৃথক বিচ্ছিন্ন তথ্যের কোনো গুরুত্ব নেই। এখানে ব্যক্তির সামগ্রিক তথ্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে, পরীক্ষার ক্ষেত্রে পাঠ্যবিষয়কেন্দ্রিক একক তথ্য প্রাধান্যলাভ করে।

১১. মূল্যায়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এতে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক পরিমাপ করা হয়, তাই মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ। অন্যদিকে, পরীক্ষা যেহেতু তাৎক্ষণিক, তাই এতে খুব কম সময় লাগে।

১২. মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটির দ্বারা শিক্ষার্থীর বিভিন্ন জ্ঞান ও সামর্থ্যের পরিমাপ করা সম্ভব। অন্যদিকে, পরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র একমুখী, বিষয়কেন্দ্রিক ও তাৎক্ষণিক জ্ঞানের পরিমাপ করা যায়।