মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রাসংকোচন-এর মধ্যে পার্থক্য

মুদ্রাস্ফীতি (Inflation)ঃ

কোন কালপরিধিতে পণ্য-সেবার মূল্য টাকার অঙ্কে বেড়ে গেলে অর্থনীতির ভাষায় তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। সাধারণত পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ঐ পণ্য ক্রয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রার প্রয়োজন কিংবা একই পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের পরিমাণ পণ্য কিনতে গেলে পরিমাণে কম পাওয়া যায়। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। একই ভাবে অর্থনীতিতে পণ্যের আসল বিনিময়মূল্য কমে যায়। সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি সূচকের মাধ্যমে হিসাব করা হয় যাকে মুদ্রাস্ফীতি সূচক বলা হয়।
মূদ্রাস্ফীতি একটি অর্থনীতিতে একাধারে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে নগদ অর্থের সুযোগ ব্যয় কমে যায় এবং মানুষ নগদ অর্থের সঞ্চয়ের বদলে তা খরচ করে ফেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এর ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়ের অভাবে ভোগে এবং অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কমে আসে। এছাড়াও মুদ্রাস্ফীতির ফলে গদবাধা আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে আসে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সূদের প্রকৃত হার পুনরায় নিরূপণ করতে হয়। অপরদিকে ইতিবাচক প্রভাবগুলো হল পন্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী হয় যার ফলে অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ঠি হয় এবং যার মাধ্যমে নতুন উপভোক্তা তৈরী হয়।

মুদ্রাসংকোচন (deflation)ঃ

উত্তর: মুদ্রাসংকোচন হলো মুদ্রাস্ফীতির ঠিক বিপরীত ধারণা বা অবস্থা। যখন দেশে দ্রব্যসামগ্রীর যোগান অপেক্ষা অর্থের যোগান কম হয়, তখন দামস্তর ক্রমাগত ও অব্যাহতভাবে হ্রাস পেতে থাকে। দামস্তর হ্রাসের এই প্রবণতাই অর্থনীতিতে মুদ্রাসংকোচন হিসেবে বিবেচিত। অধ্যাপক স্যামুয়েলসনের মতে, ‘মুদ্রাসংকোচন বলতে এমন অবস্থা বোঝায়, যখন অধিকাংশ দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেতে থাকে।’ অর্থনীতিবিদ পল আইনজিগের মতে, ‘মুদ্রাসংকোচন হলো এমন একটি ভারসাম্যহীন অবস্থা, যেখানে দামস্তরের নিম্নগতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে অর্থনৈতিক শক্তি সংকুচিত হয়ে আসে। সুতরাং বলতে পারি, যখন কোনো একটি দেশে দ্রব্যসামগ্রীর জোগান অপেক্ষা অর্থের জোগান কম হয় এবং এর ফলে দামস্তর ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়, তখন তাকে মুদ্রাসংকোচন বলে।

মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রাসংকোচন-এর মধ্যে পার্থক্যঃ

১। যখন অধিক পরিমাণ অর্থ অল্প পরিমাণ দ্রব্যের দিকে ধাবিত হয় তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে । অন্যদিকে পূর্ণ নিয়ােগের সঙ্গে জড়িত দামস্তর অপেক্ষা চলতি দামস্তর যদি নেমে যায় তবে দেশের আয় ও নিয়ােগ কমে , সেই অবস্থাকে মুদ্রাসংকোচন বলে ।

২। মুদ্রাস্ফীতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচনে বিনিয়োগ হ্রাস পায় ।

৩। মুদ্রাস্ফীতিতে অর্থের মূল্য হ্রাস পায়। অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচনে অর্থের মূল্য বৃদ্ধি পায়।

৪। মুদ্রাস্ফীতিতে দামস্তর বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচনে দামস্তর হ্রাস পায় ।

৫। মুদ্রাস্ফীতিতে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচনে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পায় ।

৬। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রাস্ফীতি সহায়ক । অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রাসংকোচ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ।