সাংবাদিকতা এবং গণযোগাযোগের মধ্যে পার্থক্য

সাংবাদিকতা (Journalism):

Journalism একটি ইংরেজী শব্দ। শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হল সাংবাদিকতা । Journalism শব্দটির অর্থ ভালভাবে বুঝতে একে দুটি অংশে ভাগে ভাগ করা যায় । প্রথমটি হল Journal আর অপরটি হল ism। Journal বলতে বুঝায় “দিনপঞ্জি” অথাৎ কোন কিছু প্রকাশ করা । আর ism মানে হল চর্চা বা অভ্যাস । এক কথায় বলা যায় , “দিনপঞ্জি চর্চা বা অনুশীলন”। সাংবাদিকতা হল সংবাদপত্রের মধ্য দিয়ে খবর ও মন্তব্য প্রকাশ করা । সাংবাদিকতা হলো বিভিন্ন ঘটনাবলী, বিষয়, ধারণা, মানুষ, প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি ও পরিবেশন, যা উক্ত দিনের প্রধান সংবাদ এবং তা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। এই পেশায় শব্দটি দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও সাহিত্যিক উপায় অবলম্বনকে বোঝায়। সাংবাদিকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লেসলি স্টীফেন বলেন, যে বিষয়গুলোর সম্পর্কে তুমি অজ্ঞ সে বিষয়গুলোর ওপর পারিশ্রমিক নিয়ে লেখাই হচ্ছে সাংবাদিকতা ।

B.N Ahuja তাঁর Theory and practice of journalism বইতে বলেছেন, “সাংবাদিকতা হল সামাজিক কার্যাবলির ঐ অংশ যেটি সমাজের সংবাদ এবং মতার্দশ প্রচারের সঙ্গে যুক্ত।”

স্যার এরিখ হজিনস্ তার সংজ্ঞায় বলেছেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে সঠিক, পরিজ্ঞাত ও ত্বরিতগতিতে তথ্যাদির এদিক-ওদিক এমনভাবে প্রেরণ যাতে করে সত্য পরিবেশিত হয় এবং তাৎক্ষণিক ভাবে না হলেও সব তথ্যের যথার্থতা ধীরে ধীরে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ডেভিড ওয়েন রাইট বলেছেন , journalism is Information. It is communication. It is the events of the day distilled into a few words, sounds or pictures processed by the mechanics of communication to satisfy the human curiosity a world that is always eager to know what’s new.

গণযোগাযোগ (Mass communication):

ভৌগোলিকভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর নিকট একই সংবাদ একসাথে দ্রুত প্রেরণের প্রক্রিয়াকে গণযোগাযোগ বলে। গণ যোগাযোগ (Mass communication) পাঠ্য বিষয়ে মূলতঃ গণমাধ্যমের উপর বিস্তারিতভাবে পাঠ করা হয়। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংবাদিকতা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হিসেবে পঠিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে গণমাধ্যম পরিবেশিত বার্তা বা সংবাদ পরিচিত বা অপরিচিত অসংখ্য জনগণের মাঝে যে যোগাযোগ ঘটায় তাই গণযোগাযোগ।

সাধারণত গণ যোগাযোগ বলতে কোন গণ যোগাযোগ উৎস দ্বারা মানুষের কাছে কোন প্রকার বার্তা পৌঁছানোকে বোঝায়। বর্তমান বিশ্বে প্রযু্ক্তির ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় গণ যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। বিজ্ঞাপন, গণযোগাযোগের সাথে সম্পর্কিত, একটি পণ্য বা পরিষেবাকে একটি প্ররোচিত পদ্ধতিতে বিপণন করা হয় যা দর্শকদের পণ্যটি কিনতে বা পরিষেবা ব্যবহার করতে উত্সাহিত করে। যেহেতু বিজ্ঞাপন সাধারণত টেলিভিশনের মতো কোনো না কোনো গণমাধ্যমের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়, তাই বিজ্ঞাপনের প্রভাব এবং পদ্ধতি অধ্যয়ন গণযোগাযোগের অধ্যয়নের সাথে প্রাসঙ্গিক।

সাংবাদিকতা এবং গণযোগাযোগের মধ্যে পার্থক্যঃ

সাধারণত গণ যোগাযোগ বলতে কোন গণ যোগাযোগ উৎস দ্বারা মানুষের কাছে কোন প্রকার বার্তা পৌঁছানোকে বোঝায়। সাংবাদিকতা এবং গণযোগাযোগের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। সাংবাদিকতা হচ্ছে সঠিক, পরিজ্ঞাত ও ত্বরিতগতিতে তথ্যাদির এদিক-ওদিক এমনভাবে প্রেরণ যাতে করে সত্য পরিবেশিত হয় এবং তাৎক্ষণিক ভাবে না হলেও সব তথ্যের যথার্থতা ধীরে ধীরে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, ভৌগোলিকভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর নিকট একই সংবাদ একসাথে দ্রুত প্রেরণের প্রক্রিয়াকে গণযোগাযোগ বলে।

২। গণযোগাযোগ বলতে কোনও বার্তা পৌঁছে দেওয়ার, তথ্য সরবরাহ করা, সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং শ্রোতাদের বিনোদন দেওয়ার লক্ষ্যে বিশাল জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগকে বোঝায়। অন্যদিকে, সাংবাদিকতা হল প্রতিদিন দর্শনের কাছে সংবাদ এবং অন্যান্য বর্তমান ঘটনার প্রতিবেদন করার ক্রিয়াকলাপ।

৩। সাংবাদিকতা সব সংবাদ প্রতিবেদন সম্পর্কিত। অন্যদিকে, গণযোগাযোগ সম্প্রচারিত সংবাদ, বার্তা এবং তথ্যগুলির সাথে সম্পর্কিত।

৪। সাংবাদিকতায় সাংবাদিকরা তথ্য ভিত্তিক বা পরিসংখ্যান ভিত্তিক তথ্য অনুসন্ধানের জন্য অনুসন্ধান করেন। অন্যদিকে, গণসংযোগের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু তথ্য, ইতিহাস, বিনোদন, রাজনৈতিক, কাল্পনিক, আঞ্চলিক ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তৈরি করতে পারেন।

৫। সাংবাদিকতার লক্ষ্য স্থানীয়ভাবে, আন্তর্জাতিকভাবে বা আন্তর্জাতিকভাবে ঘটেছিল এমন ঘটনাসমূহের সাথে তথ্য জানানো এবং পাঠকদের পরিচিত করা। অন্যদিকে, গণযোগাযোগের উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন মিডিয়া চ্যানেল ব্যবহার করে জনসাধারণের কাছে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া।

৬। সাংবাদিকতা হল সংবাদপত্রের মধ্য দিয়ে খবর ও মন্তব্য প্রকাশ করা। অন্যদিকে, বিজ্ঞাপনের প্রভাব এবং পদ্ধতি অধ্যয়ন গণযোগাযোগের অধ্যয়নের সাথে প্রাসঙ্গিক।