প্রতারণা ও মিথ্যা বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য

প্রতারণা (Fraud) :
এক পক্ষকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে অপর পক্ষ কোন কার্য করলে, তাকে প্রতারণা বলে। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ১৭ ধারা মতে চুক্তির কোন ১টি পক্ষ কর্তৃক বা তার নীরব সমর্থনে অথবা তার প্রতিনিধি কর্তৃক অপর পক্ষকে বা তার প্রতিনিধিকে প্রবঞ্চনা করার উদ্দেশ্যে অথবা তাকে চুক্তি সম্পাদনের জন্য প্ররোচিত করার নিমিত্তে নিম্নের যে কেন কাজ করা হলে তাকে প্রতারণা বলা হবে।

প্রতারণা হচ্ছে অসদুপায় অবলম্বন করে কোন কিছু সমাধানের সক্ষমতার কারণে পুরস্কার গ্রহণ করা। সাধারণত প্রতারণা করা হয় আইন অমান্য করে, যাতে প্রতিযোগিতা মুলক পরিস্থিতিতে অসম সুবিধা পাওয়া যায়। এর বিশদ সংজ্ঞার পরিধিতে ঘুষ, ক্রোনিজম, নেপোটিজম, স্লিইজ এবং অন্য যেকোনো পরিস্থিতি যেখানে অবৈধভাবে অন্যকে সুযোগ দেয়া হয় ইত্যাদি সবকিছুই যুক্ত।

মিথ্যা বর্ণনা (Misrepresentation) :
চুক্তি সম্পাদনের সময়ে বা পূর্বে এক পক্ষ অপর পক্ষকে চুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে যে সকল তথ্য বা সংবাদ সরবরাহ করে তাকে, বলে বিবৃতি বা বর্ণনা (Representation), এরূপ বিবৃতি যদি ভ্রান্ত হয় এবং ঠকানো ইচ্ছে না থাকে, তবে তাকে মিথ্যা বর্ণনা বলা হয়। অর্থাৎ প্রাপ্ত সংবাদ দ্বারা সমর্থনযোগ্য নয় এরূপ অসত্য কথাকে সত্য ভেবে নিশ্চয়তার সাথে বলা। অপর পক্ষকে ঠকানোর উদ্দেশ্য না নিয়ে যদি কর্তব্যের এমন কোন ত্রুটি করা হয়। যার ফলে অন্যের মনে ভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং কর্তব্য লঙ্ঘনকারীর স্বার্থ আদায় হয়, এরূপ ক্ষেত্রে মিথ্যা বর্ণনার দ্বারা সায় আদায় বলে ধরা হবে।

প্রতারণা ও মিথ্যা বর্ণনার মধ্যে পার্থক্যঃ
প্রতারণা ও মিথ্যা বর্ণনা উভয় ক্ষেত্রেই মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয় এবং ফলশ্রুতিতে চুক্তি বাতিলযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। উভয়ের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা নিম্নরূপ –

১. চুক্তি সম্পাদনের সময় বা পূর্বে একপক্ষ অপর পক্ষকে চুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে যে সকল তথ্য বা সংবাদ সরবরাহ করে, তাকে মিথ্যা বর্ণনা বলা হয়। অন্যদিকে, এক পক্ষকে ঠকানো উদ্দেশ্যে অপর পক্ষ কোন কাজ করলে তাকে প্রতারণা বলে।

২. মিথ্যা বর্ণনায় অপরকে ঠকানোর কোন উদ্দেশ্য থাকে না। অন্যদিকে, প্রতারণা অপরকে ঠকানোর উদ্দেশ্য থাকে।

৩. মিথ্যা বর্ণনায় অসত্য বিষয়কে সত্য মনে করে বর্ণনা দেওয়া হয়। অন্যদিকে, প্রতারণায় জেনে শুনে মিথ্যা বর্ণনা দেয়া হয় বলে এটা ইচ্ছাকৃত অপরাধ।

৪. মিথ্যা বর্ণনা সত্য মনে করে অসত্য ভাষণ, বিষয় বর্ণনার ক্ষেত্রে কর্তব্য লঙ্ঘন ও বিষয়বস্তুর সম্পর্কে ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে মিথ্যা বর্ণনার উৎপত্তি। অন্যদিকে, প্রতারণা ইচ্ছাপূর্বক অসত্য ভাষণ, কারসাজি করে সত্য গোপন, পালনের ইচ্ছে না নিয়ে অঙ্গীকার প্রদান এবং আইনে বর্ণিত প্রতারণাযোগ্য যে কোন কাজ হতে ইহা উৎপত্তি হয়।

৫. মিথ্যা বর্ণনায় ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ চুক্তি বাতিল করতে পারে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করতে পারে না। অন্যদিকে, প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ চুক্তি বাতিল এবং মামলা দায়ের করতে পারে।

৬. মিথ্যা বর্ণনার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের যদি সাধারণ প্রচেষ্টায় সত্য উদঘাটনের সুযোগ থাকে তবে অপর পক্ষ এই অজুহাতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারে। অন্যদিকে, প্রতারণামূলক নীরবতা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সাধারণ বুদ্ধিমত্তার সাহয্যে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ সত্য উদঘাটন করতে পারলেও ঐ বিষয়ে অপর পক্ষ আত্মসমর্থন করতে পারে না।

৭. মিথ্যা বর্ণনা আইনগত অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না। প্রতারণা দেওয়ানী ও ব্যক্তিগত অন্যায় খেসারত আইন অনুযায়ী অপরাধমূলক।