প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শেয়ারের মধ্যে পার্থক্য

প্রাথমিক শেয়ার ও মাধ্যমিক শেয়ারের মধ্যে বহু পার্থক্য আছে। একটি প্রাথমিক শেয়ার একটি প্রাথমিক স্তরের শেয়ার, আর মাধ্যমিক শেয়ার হল একটি উচ্চতর স্তরের শেয়ার। নিচে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শেয়ারের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

প্রাথমিক শেয়ার (Primary Share) :
বাজারে সাধারণত একটি কোম্পানি প্রথমে প্রাথমিক বা প্রাইমারি শেয়ারের মাধ্যমে প্রবেশ করে। প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের একটা অভিহিত মূল্য বা ফেস ভ্যালু থাকে। কোম্পানি যখন তার শেয়ারটি মার্কেটে ছাড়তে চায়, তখন সে অভিহিত মূল্যের সঙ্গে প্রিমিয়াম যুক্ত করে একটি নির্দিষ্ট টাকায় শেয়ারটি বিক্রি করতে চায়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদন দিলে কোম্পানিটি শেয়ার কেনার দরখাস্ত আহ্বান করে। যাকে বলা হয় ইনিশিয়াল পাবলিক অফার (আইপিও) বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব।

অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু হচ্ছে শেয়ারের মূল দাম। যদি অভিহিত মূল্য ১০ টাকা হয়, প্রিমিয়ামসহ শেয়ারটির দাম ৫০ টাকা হলেও অভিহিত মূল্য ১০ টাকার ওপর ভিত্তি করে লভ্যাংশ দেওয়া হয়।

মাধ্যমিক শেয়ার (Secondary Share) :
আইপিওতে আবেদন করে প্রাথমিক শেয়ারের মালিক হওয়া যায়। সেই কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তাদের শেয়ারের লেনদেন শুরু হয়। এ সময় লটারিতে পাওয়া প্রাথমিক বা প্রাইমারি শেয়ার যখন কেউ বিক্রি করে দেয়, তখন তা সেকেন্ডারি শেয়ারে পরিণত হয়। সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে ব্যবসা করতে হলে শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারে ব্যবসা করতে সেকেন্ডারি মার্কেটই ভালো জায়গা।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শেয়ারের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. বিভিন্ন কোম্পানি বা ইস্যুকারক প্রতিষ্ঠান IPO এর মাধ্যমে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে যে শেয়ার ছাড় এবং ক্রেতা আবেদনের প্রেক্ষিতে লটারির মাধ্যমে যে শেয়ার ক্রয় করে, তাকে প্রাথমিক শেয়ার বলে।

অন্যদিকে, প্রাথমিক শেয়ারের মালিকগণ ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে আগ্রহী অন্য বিনিয়োগকারীদের নিকট তার শেয়ার বিক্রি করলে, উক্ত বিক্রীত শেয়ারকে সেকেন্ডারি শেয়ার বলে।

২. প্রাথমিক শেয়ার সাধারণত ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে, মাধ্যমিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয় বা হস্তান্তর হয় স্টক এক্সচেঞ্জে।

৩. প্রাথমিক শেয়ার স্ব-স্ব কোম্পানির নিকট হতে প্রথমেই যারা লাভ করে অথবা লটারির মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়, তারাই এর মালিক। অর্থাৎ কোম্পানির নিকট হতে একবার মাত্র হাত বদল হয়। অন্যদিকে, মাধ্যমিক শেয়ার যতদিন এই কোম্পানি থাকবে, ততদিন হাত বদল হতে পারে।

৪. প্রাইমারি শেয়ার প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রাইমারি মার্কেট। অন্যদিকে, স্টক একচেঞ্জ কর্তৃক পরিচালিত ব্রোকার হাউজের ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থায় শেয়ারের ক্রয়-বিক্রয়কে বলা হয় সেকেন্ডারি মার্কেট বা কার্ব মার্কেট।

৫. প্রাইমারি শেয়ারের জন্য যারা আইপিও এর মাধ্যমে আবেদন করবে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিতদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়। অন্যদিকে, মাধ্যমিক শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে বাজার চাহিদা ও যোগানের প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার অনুযায়ী ক্রেতার BO একাউন্টে বণ্টিত হয়।

৬. প্রাথমিক শেয়ারের দাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এর নীতিমালা অনুযায়ী কোম্পানি নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে Face value সকল কোম্পানির সমান হলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি প্রিমিয়ামসহ প্রাথমিক শেয়ারের মূল্য অধিক ধরে।

অন্যদিকে, সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হয় বাজার চাহিদা ও বাজার যোগানের ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। তবে দাম নির্ধারণে কোম্পানির পিই রেশিও, ইপিএস, মুনাফা প্রভৃতি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৭. প্রাইমারি শেয়ারের বাজার প্রকৃতপক্ষে শেয়ার বাজার নয়। এটি কোম্পানির শেয়ার বণ্টনের একটি পদ্ধতি মাত্র। অন্যদিকে, সেকেন্ডারি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের বাজারকেই প্রকৃত শেয়ার বাজার বলা হয়। এখানে বিক্রেতা হলো কোম্পানির পক্ষে ব্রোকার হাউজ এবং ক্রেতা হলো BO একাউন্টধারী বিনিয়োগকারী।

৮. একটি নতুন প্রযুক্তি কোম্পানি তাদের প্রথম আইপিও-এর মাধ্যমে প্রাথমিক শেয়ার বিক্রি করে। অন্যদিকে, মাধ্যমিক শেয়ার একজন বিনিয়োগকারী স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিদ্যমান কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে।