মনোবিদ এবং মনোচিকিৎসক এর মধ্যে পার্থক্য

মনোবিদ (Psychologist) :
মনোবিদরা হচ্ছেন মানসিক রোগের জন্য মেডিকেল ডাক্তার, অর্থাৎ এরা চার-পাঁচ বছরের রেসিডেন্সি শেষ করে দুই-তিন বছর মানসিক রোগসমূহের উপর বিশেষজ্ঞতা লাভ করেন, পরে এক-দুই বছর অন্য একজন প্রবীণ মনোবিদের অধীনে কাজ করেন, তারপর নিজে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। যেহেতু এরা মেডিকেল ডাক্তার, এরা তাদের রোগীকে ঔষধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। তাদের চিকিৎসার মূল চিন্তাধারা হচ্ছে যে মানসিক রোগগুলো বায়োলোজিক্যাল, অর্থাৎ একটি সুনির্দিষ্ট জৈবিক কারণ আছে কিনা রোগগুলোর পেছনে। বাস্তবে বিষয়টা কিন্তু এইরকম না, অনেক মানসিক রোগের কারণসমূহ কী তা এখনো গবেষণার বিষয়।

আর মানসিক রোগের জন্য ঔষুধ দেয়ার ব্যাপারটি হচ্ছে যে একটা গাছ মারা যাচ্ছে তাই সেই গাছটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনবরত পানি ঢালা, কিন্তু গাছটি অন্য কোনো কারণে মারা যেতে পারে। যেমন- মাটিতে পুষ্টির অভাব, কীটপতঙ্গের আক্রমণ ইত্যাদি। অর্থাৎ, মানসিক রোগের জন্য ঔষধ নেয়া হচ্ছে ক্ষত না বুঝে সর্বাঙ্গে ঔষধ দেয়া, ফলে কাজ হতে পারে, নাও হতে পারে।

মনোচিকিৎসক (Psychiatrist) :
মনোচিকিৎসকদের কাছে মানসিক রোগের কারণ অনেক, তাদের মতে একটি রোগ হাজার কারণে সৃষ্ট হতে পারে। যেমন- সামাজিক, অর্থনৈতিক দুরাবস্থার বিপর্যয়ের কারণে, আন্ত-র্সাম্পর্কিক কারণে, কিংবা জৈবিক কারণে। কানাডা আমেরিকার অধিকাংশ প্রদেশে সাইকোলোজিস্টদের ঔষধ দেয়ার ক্ষমতা নাই যেহেতু তারা মেডিকেল ডাক্তার না।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিস্ট হতে হলে আপনাকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিতে মাস্টার্স আর পিএইচডি শেষ করে এক-দুই বছর অন্য কোনো হাসপাতাল বা প্রবীণ সাইকোলোজিস্টের অধীনে কাজ করতে হবে, মাস্টার্স আর পিএইচডির সময় কোর্সওয়ার্কে পাশাপাশি আপনাকে হাতে-কলমে প্রশীক্ষণ দেয়া হবে। সাইকোলোজইস্টদের থিউরিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, এবং সেই অনুসারে চিকিৎসা, রোগ সম্পর্কে ধারণা ভিন্ন হতে পারে। যেমন ধরেন, ফ্রয়েডীয় সাইকোলোজিস্টদের মতে রোগ সৃষ্টি হয় আপনার ছোটবেলায়, মায়ের সাথে সম্পর্কে কেমন, বাবার সাথে সম্পর্ক কেমন, যৌনধারণা কেমন ছিলো, ফিক্সেশন হয়েছিলো কি না ইত্যাদি।

মনোবিদ এবং মনোচিকিৎসক এর মধ্যে পার্থক্যঃ

১। মনোবিদ হওয়ার জন্য পড়ুয়াদের সাইকোলজিতে ব্যাচেলর্স, মাস্টার্স এবং ডক্টরেট ডিগ্রির প্রয়োজন। এ ছাড়াও, বেশ কিছু বছরের পেশাদারি অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন রয়েছে।

অন্যদিকে, মনোচিকিৎসক হওয়ার জন্য এমবিবিএস-এর পর ১ বছরের ইন্টার্নশিপ এবং তার পর সাইকিয়াট্রিতে এমডি ডিগ্রি থাকতে হবে। এর পর সাইকিয়াট্রিস্ট হিসাবে লাইসেন্স পাওয়ার পর কোনও সরকারি হাসপাতালে ন্যূনতম ৪ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

২। মনোবিদরা সাধারণত সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করেন। সাইকোথেরাপির যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মনোবিদেরা চিকিৎসা করেন, সেগুলো হলো-সাইকোঅ্যানালিসিস এবং সাইকোডাইনামিক থেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, হিউম্যানিস্টিক থেরাপি ও হোলিস্টিক থেরাপি ইত্যাদি। কোন রকম ঔষুধ ছাড়া রোগীদের সুস্থ করার জন্যই কাজ করেন।

অন্যদিকে, মনোচিকিৎসকরা সাধারণত ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার উপরেই বেশি ভরসা রাখেন। জীবনবিজ্ঞান, নিউরোকেমিস্ট্রি-র ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকায় মস্তিষ্কে নানারকম নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতা, পারিবারিক ইতিহাস, চিকিৎসাসংক্রান্ত ইতিহাসও যে মানসিক অসুস্থতার জন্য দায়ী , তা এঁরা বুঝতে পারেন। তবে, তারা শুধু ঔষুধ নয়, প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য থেরাপিরও সাহায্য নেন।