শ্বেত ও লোহিত ফসফরাসের মধ্যে পার্থক্য

শ্বেত ও লোহিত ফসফরাস হলো দুটি পরিমাণের একই ধাতুর বিভিন্ন অবস্থা। তবে শ্বেত ও লোহিত ফসফরাস এর মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে শ্বেত ও লোহিত ফসফরাস এর মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

শ্বেত ফসফরাস (White Phosphorus):
ফসফরাসের সকল গঠনগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমনকি রসায়ন শিল্পেও সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শ্বেত ফসফরাস। এটি চারটি ফসফরাস নিয়ে গঠিত যার প্রত্যেকটি ফসফরাস অন্য তিনটি ফসফরাসের সাথে একক বন্ধন বা সিগমা বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ হয়। কঠিন শ্বেত ফসফরাসকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। নিম্ন তাপমাত্রায় এর β রূপ ও উচ্চ তাপমাত্রায় এর α রূপ বিদ্যমান। শ্বেত ফসফরাস,ফসফরাসের সকল গঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল, বিষাক্ত ও সক্রিয়। শ্বেত ফসফরাস ধীরে ধীরে লোহিত ফসফরাসে পরিণত হয়। এই রূপান্তরকে আলো,তাপমাত্রা গতিশীল করে এবং শ্বেত ফসফরাসের মূল গঠনে লোহিত ফসফরাস মিশ্রিত থাকে বলে এটিকে হলুদ দেখায়। তাই,একে হলুদ ফসফরাসও বলা হয়। এই কারণে এটিকে সবসময় অবিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।

শ্বেত ফসফরাস অক্সিজেনের উপস্থিতিতে জ্বলে উঠে এবং এসময় এর বর্ণ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে সবুজ ও নীল হয়ে যায়। এটি খুবই প্রজ্বলনীয় ও বিষাক্ত। P4O10 যৌগটির রসুনের মত গন্ধ থাকে। তাপপ্রয়োগে এটি কঠিন বা তরল হিসেবে থাকে না। অনেকটা নাইট্রোজেনের সদৃশ হয়ে যায়।

লোহিত ফসফরাস (Red Phosphorus):
লোহিত ফসফরাস হলো অমূল্যবান রঙ ধাতু, যা মোটামুটি গা বা লাল রং ধাতু হয়ে থাকে। লোহিত ফসফরাস গঠনের দিক থেকে একাধিক ফসফরাস নিয়ে গঠিত হয়। প্রায় ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শ্বেত ফসফরাসকে উত্তপ্ত করে অথবা প্রখর সূর্যালোকে রেখে দিলে লোহিত ফসফরাস পাওয়া যায়। এমনভাবে বিক্রিয়ার পর এটি নিরাকার হয়ে যায়। আবার উত্তপ্ত করলে এটি স্ফটিকে পরিণত হয়। এসব বিবেচনা করলে এটিকে ফসফরাসের গঠন বলা যায় না।

তবে,শ্বেত ফসফরাসের প্রাথমিক দশা ও বেগুনি ফসফরাসের মধ্যবর্তী সতয় এর আধিক্যের কারণে একে ফসফরাসের অন্যদিকে গঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, উজ্জ্বল ও ফ্রেশলি প্রস্তুত একটি লোহিত ফসফরাস অনেক সক্রিয়। এমনকি ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটি শ্বেত ফসফরাসের থেকেও স্থিতিশীল। এটি বায়ুর সাথে দহনে শ্বেত ফসফরাসের মত জ্বলে উঠে না। ফস্ফরাস অনেক উপকারি।

শ্বেত ও লোহিত ফসফরাস এর মধ্যে পার্থক্যঃ
১. শ্বেত ফসফরাস মোমের মত নরম। অন্যদিকে, লোহিত ফসফরাস অদানাদার গুড়া পদার্থ।

২. শ্বেত ফসফরাস এর গন্ধ রসুনের মতো। অন্যদিকে, লোহিত ফসফরাস গন্ধহীন।

৩. 250ºC তাপমাত্রায় নিষ্ক্রিয় পরিবেশে (CO₂ বা N₂ গ্যাস) আয়োডিন (I₂) প্রভাবকের উপস্থিতিতে শ্বেত ফসফরাস ; লোহিত ফসফরাসে রূপান্তরিত হয়। অন্যদিকে, 550ºC তাপমাত্রায় নিষ্ক্রিয় পরিবেশে (CO₂ বা N₂ গ্যাস ) লোহিত ফসফরাসকে উত্তপ্ত করলে, লোহিত ফসফরাসের বাষ্প উৎপন্ন হয়। এই বাষ্পকে শীতল করলে শ্বেত ফসফরাস উৎপন্ন হয়।

৪. শ্বেত ফসফরাস অত্যন্ত সক্রিয়। অন্যদিকে, লোহিত ফসফরাস কম সক্রিয়।

৫. শ্বেত ফসফরাস উত্তপ্ত ক্ষার দ্রবণের সাথে বিক্রিয়া করে ফসফিন উৎপন্ন করে। অন্যদিকে, লোহিত ফসফরাস ক্ষারের সাথে কোন বিক্রিয়া করে না।

৬. শ্বেত ফসফরাস কক্ষ তাপমাত্রায় অস্থায়ী। ধীরে ধীরে লোহিত ফসফরাসে পরিণত হয়। অন্যদিকে, লোহিত ফসফরাস সাধারণ তাপমাত্রায় স্থায়ী।