অ্যানাবেটিক ও ক্যাটাবেটিক বায়ুর মধ্যে পার্থক্য

পার্বত্য অঞ্চলে দিন ও রাতের উষ্ণতার তারতম্যের ফলে উৎপন্ন পার্বত্য ঢাল বরাবর প্রবাহিত বায়ু হল – ক্যাটাবেটিক ও অ্যানাবেটিক বায়ু। অ্যানাবেটিক ও ক্যাটাবেটিক বায়ুর মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে অ্যানাবেটিক ও ক্যাটাবেটিক বায়ুর মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

অ্যানাবেটিক বায়ু (Anabatic Wind):
‘Anabatic’ – শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘Anabaino’ থেকে, যার অর্থ হলো ঊর্দ্ধগামী। উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে দিনের বেলায় সূর্যকিরণে পার্বত্য উপত্যকা উত্তপ্ত হওয়ার ফলে বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে পরিচলন পদ্ধতিতে পর্বতের ঢালে বরাবর উপরের দিকে উঠতে থাকে। এইরূপ ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও হালকা বায়ুকে উপত্যকা বায়ু বা অ্যানাবেটিক বায়ু বলে। অর্থাৎ দিনের বেলা সূর্যকিরণের প্রভাবে পর্বতের মধ্যভাগের তুলনায় উর্দ্ধভাগ ও উপত্যকার তলদেশ অপেক্ষাকৃত বেশী উত্তপ্ত হয়ে পড়ে । যার ফলে সংশ্লিষ্ট বায়ুস্তরও উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে পর্বতের গা বেয়ে এবং উপত্যকার উজান বরাবর উপরের দিকে প্রবাহিত হয় ।

উপত্যকার উজান বরাবর প্রবাহিত ঊর্দ্ধগামী বায়ুকে উপত্যকা বায়ু ও পর্বতের ঢাল বরাবর উপরের দিকে প্রবাহিত বায়ুকে ঊর্দ্ধঢাল বায়ু বলে। এই ঊর্দ্ধঢাল বায়ুরই অপর নাম অ্যানাবেটিক বায়ু। ভারতের হিমাচল প্রদেশের কুলু ও কাংড়া উপত্যকায় দিনের বেলা অ্যানাবেটিক বায়ু প্রবাহিত হয় ।

ক্যাটাবেটিক বায়ু (Katabatic Wind):
‘Katabatic’ – শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘Katabaino’ থেকে, যার অর্থ হল নিম্নগামী। দিনের বেলা পর্বতের নিম্ন উপত্যকার বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হলে তাকে অ্যানাবেটিক বায়ু বলে। অর্থাৎ রাতের বেলা বিকিরণের ফলে পর্বতের গা এবং উপত্যকা শীতল হয়ে পড়ে । শীতল ভূমির সংস্পর্শে এসে ভূমি সংলগ্ন বায়ুও শীতল হয় । ফলে এই শীতল ও ভারী বায়ু পর্বতের গা ও উপত্যকা বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসে । রাতের বেলা উপত্যকা বেয়ে নিম্নগামী এই বায়ুপ্রবাহকে পার্বত্য বায়ু (Mountain Wind) ও পর্বতের গা বেয়ে নীচের দিকে প্রবাহিত বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু (Katabatic Wind) বলে। ভারতের হিমাচল প্রদেশের কুলু ও কাংড়া উপত্যকায় রাতের বেলা ক্যাটাবেটিক বায়ু প্রবাহিত হয়।

অ্যানাবেটিক ও ক্যাটাবেটিক বায়ুর মধ্যে পার্থক্যঃ
১. Anabatic শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘Anabaino’ থেকে, যার অর্থ হলো ঊর্দ্ধগামী। Katabatic শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘Katabaino’ থেকে, যার অর্থ হল নিম্নগামী।

২. উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে দিনের বেলায় সূর্যকিরণে পার্বত্য উপত্যকা উত্তপ্ত হওয়ার ফলে বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে পরিচলন পদ্ধতিতে পর্বতের ঢালে বরাবর উপরের দিকে উঠতে থাকে। এইরূপ ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও হালকা বায়ুকে উপত্যকা বায়ু বা অ্যানাবেটিক বায়ু বলে। অন্যদিকে, দিনের বেলা পর্বতের নিম্ন উপত্যকার বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হলে তাকে অ্যানাবেটিক বায়ু বলে।

৩. অ্যানাবেটিক বায়ু পার্বত্য উপত্যকা থেকে প্রবাহিত হওয়ায় একে উপত্যকা বায়ুও (Valley breeze) বলে। অন্যদিকে, পর্বতের ঊর্ধ্বাংশ থেকে প্রবাহিত হওয়ায় ক্যাটাবেটিক বায়ু পার্বত্য বায়ু (Mountain breeze) নামেও পরিচিত।

৪. অ্যানাবেটিক বায়ুর প্রভাবে পাহাড়ি উপত্যকায় বিকেলের দিকে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে, ক্যাটাবেটিক বায়ুর প্রবাহে উপত্যকা অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।

৫. অ্যানাবেটিক বায়ু উষ্ণ, আদ্র ও হালকা হয়। অন্যদিকে, ক্যাটাবেটিক বায়ু শীতল, শুষ্ক ও ভারী হয়।

৬. অ্যানাবেটিক বায়ু গ্রীষ্মকালে মূলত দিনের বেলা প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে, ক্যাটাবেটিক বায়ু শীতকালে মূলত রাত্রি ও ভোর বেলা প্রবাহিত হয়।