বন্ড ও ঋণপত্রের মধ্যে পার্থক্য

বন্ড ও ঋণপত্র উভয়ই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ নেওয়ার একটি উপায়। তবে, বন্ড ও ঋণপত্রের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বন্ড ও ঋণপত্রের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

বন্ড (Bond):
যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তির প্রয়োজন মেটানোর জন্য বা বিনিয়োগের জন্য অর্থায়নের দরকার হয়। আর বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি ঋণের এমন একটি হাতিয়ার, যা বিক্রয়ের মাধ্যমে কম্পানি তহবিল সংগ্রহ করে। সাধারণভাবে বলা যায়, যে দলিল বা ঋণ ঋণচুক্তির মাধ্যমে কম্পানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ঋণ মূলধন সংগ্রহ করে তাকে বন্ড বলে। ব্যাপক অর্থে বন্ড হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণের দলিল, যেখানে একটি ফার্ম বা সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করে এবং মেয়াদ শেষে আসল অর্থ ফেরত দেয়।

সাধারণত সরকার ও কম্পানি তাদের তহবিলে প্রয়োজনে বন্ড ইস্যু বা বিক্রয় করে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এ ছাড়া বৈদেশিক সরকার, স্থানীয় সরকার ও মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন অনুযায়ী বন্ড ইস্যু করে থাকে। বন্ডকে স্থায়ী আয়যুক্ত সিকিউরিটি বলা হয়। কারণ বন্ডের লিখিত মূল্যের ওপর এর বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট হারে প্রতিবছর সুদ পেয়ে থাকে। বন্ডের লিখিত মূল্যের ওপর যে হারে সুদ প্রদান করা হয় তাকে কুপন সুদের হার বলে। প্রতিটি বন্ডে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এখানে মেয়াদ বলতে ওই সময়কে বোঝায়, যে পর্যন্ত না ফার্ম বা কম্পানি বন্ডের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে বন্ডগুলো বন্ডহোল্ডারদের কাছ থেকে ফেরত নেয়। তবে মেয়াদবিহীন বন্ডও আছে, যাকে চিরস্থায়ী বন্ড বলে।

বন্ডের মেয়াদ শেষে যে মূল্য পরিশোধ করা হয় তাকে মেয়াদপূর্তিতে মূল্য বা Maturity value বলে। এই মূল্য অভিহিত মূল্যের সমান বা বেশি হবে। বন্ড জামানতযুক্ত ও জামানতবিহীন দুই ধরনের হতে পারে। ঋণপত্র জামানতহীন বন্ডের উদাহরণ, অন্যদিকে মর্টগেজ বন্ড জামানতযুক্ত বন্ডের উদাহরণ। সরকারের নতুন প্রকল্প চালু করার জন্য বা চালু করা প্রকল্প শেষ করার জন্য এবং কম্পানিগুলোর ব্যবসায় সমপ্রসারণ ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড একটু গুরুত্বপূর্ণ অর্থায়নের উৎস।

ঋণপত্র (Debenture) :
পূর্ববর্তী পাঠে বলা হয়েছে যে কোম্পানি মূলধনের অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হলে ঋণ গ্রহণ করে। ঋণ পত্রের মাধ্যমে কোম্পানি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি উভয় ধরনের ঋণ গ্রহণ করে। এটি আর কিছুই নয়। কোম্পানির ঋণ গ্রহীতার স্বীকৃতিপত্র মাত্র। এ স্বীকৃতিপত্রের মাধ্যমে কোম্পানি জনসাধারণের কাছে ঋণের আবেদন জানায়। ধরুন, একটি কোম্পানি ৫ বছর মেয়াদি ১০% ঋণপত্র ইস্যু করল। যার আর্থিক মূল্য ১০,০০০ টাকা।

যদি কেই একটি ঋণপত্র ক্রয় করে তাহলে ঐ ব্যক্তি ১০,০০০ টাকার উপর ১০% হারে সুদ পাবে। মেয়াদপূর্তি অর্থাৎ ৫ বছর পর আবার ১০,০০০ টাকা ফেরত পাবে। ঋণপত্রটিতে ঋণের সকল শর্ত বর্ণিত থাকে। স্বীকৃতি ঋণপত্রের সারকথা।

বন্ড ও ঋণপত্রের মধ্যে পার্থক্যঃ
১। বন্ড হল একটি জামানতযুক্ত ঋণপত্র। এর অর্থ হল বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান ঋণের পরিমাণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, বন্ডধারীরা জামানতের সম্পত্তি নিয়ে ঋণের পরিমাণ আদায় করতে পারে। বন্ড সাধারণত নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করে, যা বন্ডের পরিপক্কতার তারিখে পরিশোধ করা হয়।

অন্যদিকে, ঋণপত্র হল একটি জামানতবিহীন ঋণপত্র। এর অর্থ হল ঋণের পরিমাণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, বন্ডধারীরা ঋণের পরিমাণ আদায়ের জন্য কোনো জামানত ব্যবহার করতে পারে না। ঋণপত্র সাধারণত নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করে, যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পরিশোধ করা হয়।

২। বন্ড একটি নির্দিষ্ট সময়ে মুদ্রা বা অন্যান্য অর্থক্রিয়ার জন্য পরিমিত সময়কালের মধ্যে একটি নির্ধারিত পরিমাণের মুদ্রা জনিত করতে সহায়ক হয়। অন্যদিকে,
ঋণপত্র: এটি একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে ঋণ প্রদান করার জন্য একটি প্রমাণপত্র বা অগ্রিম মুদ্রা জনিত করতে সহায়ক হয়।

৩। বন্ডের মালিক বা মালিকানারা একটি নির্দিষ্ট মাসিক অথবা বাৎসরিক পরিমাণ প্রদান করতে হতে পারে, যা বন্ডের মূল মূল্য বা পার্যবাহিত মূল্যের একটি নির্দিষ্ট হারে হতে পারে। অন্যদিকে, ঋণপত্র সাধারিত হয় না, কিন্তু ঋণপত্র ধারকে ঋণ প্রদানের জন্য আদায়ের জন্য মাসিক অথবা বাৎসরিক বা অন্যান্য মেয়াদের মধ্যে একটি প্রদান করতে বলা হয়।

৪। বন্ড মেছুর সমাপ্ত হলে, মূল পূর্ণ হয়ে যায় এবং মালিক অথবা মালিকানারা মূল্যের একটি নির্দিষ্ট হারে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের টাকা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, ঋণপত্র আদান-প্রদানের জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ রয়েছে এবং এই তারিখে ঋণপত্র সমাপ্ত হয়ে যায়, তবে মূল মূল্য একই থাকে।

৫। বন্ড একটি নির্দিষ্ট বার্ষিক হারে মালিক বা মালিকানাকে মূল প্রদান করতে সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে, ঋণপত্র সময়ের মধ্যে বা একক সময়ে ঋণ প্রদানের জন্য একটি নির্দিষ্ট হার থাকতে পারে।