সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এক ধরনের নির্দেশনামূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই অর্থব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ঠিক
বিপরীত। যে অর্থব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদন উপকরণের মালিকানা রাষ্ট্রের এবং সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কেন্দ্রীয়
সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় তাকে সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশনামূলক অর্থব্যবস্থা বলে। এ অর্থব্যবস্থায় দ্রব্যের দাম
নির্ধারণে স্বয়ংক্রিয় বাজার ব্যবস্থার কোনও ভূমিকা থাকে না এবং উৎপাদিত দ্রব্য ভোগ ও বন্টনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ
বজায় থাকে।
১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভ- াদিমির লেনিন সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে চীন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া,
সাবেক পূর্ব জার্মানীসহ কিছু দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু হয়।

পুজিবাদী অর্থব্যবস্থা

যে অর্থব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে এবং বাজার ব্যবস্থা সরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত থাকে, তাকে ধনতান্ত্রিক বা পুজিবাদী অর্থব্যবস্থা বলে। এ ধরনের বাজার ব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম কোথায় বিনিয়োগ করবে, কি উৎপাদন বা বিক্রয় করবে, কি দামে দ্রব্য বা সেবা বিনিময় করবে- এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকে। অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দ্রব্য বা সেবার দাম বাজারে চাহিদা ও যোগান এর মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এখানে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বর্তমানে পুরোপুরি ধনতান্ত্রিক বাজার অর্থব্যবস্থায় না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার প্রায় কাছাকাছি অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান।

সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্যঃ

১. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণ রাষ্ট্রের হাতে থাকে। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকে।

২. সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কোন সম্প্রদায়ের সম্পদ বণ্টন করতে পারে।পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এটি অসম্ভব।

৩. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সমতা বিধান করা হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সমতা বিধান করা সম্ভব হয় না।

৪. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সকলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ থাকে। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় সকলের সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয় না।

৫. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কল্যাণমুখী। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা মুনাফাভোগী।

৬. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় শিক্ষাখাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মূলধন গঠনে সকলে ব্যস্ত থাকে।

৭. সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গরীবদের সাহায্যের জন্য সহজেই অর্থ পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এটি খুব কমই দেখা যায়।

৮. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সুস্বাস্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এটি অকল্পনীয়।

৯. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় অর্থনীতি পরিবর্তনশীল।

১০. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র ও লাল ফিতার দৌরাত্ম অত্যধিক। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এটি খুব কমই দেখা যায়।

১১. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানা অনুপস্থিত। পক্ষান্তরে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানা-ই মূলধনের উৎস।