গুরুমস্তিষ্ক ও লঘুমস্তিষ্কের মধ্যে পার্থক্য

গুরুমস্তিষ্ক (Cerebrum):

গুরু মস্তিষ্ক হল মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ। গুরু মস্তিষ্ক করোটির প্রায় বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত থাকে। গুরু মস্তিষ্কের বাইরের দিকে অসংখ্য খাঁজ বা সালকাস এবং ভাঁজ বা জাইরাস দেখা যায়। দুটি বড়, কুন্ডলী পাকানো ও খাজঁ বিশিষ্ট খন্ড নিয়ে সেরেব্রাম গঠিত। খন্ড দুটিকে সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার বলে। সেরেব্রাম মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশকে আবৃত করে রাখে। খন্ড দুটি ভেতরের দিকে কর্পাস ক্যালোসাম নামে চওড়া স্নায়ুগুচ্ছ দিয়ে যুক্ত। পৃষ্টতল নানা স্থানে ভাজঁ হয়ে উচুঁ নিচু অবস্থায় থাকে। উচুঁ জায়গাকে জাইরাস এবং নিচু জায়গাকে ফিসার বলে।

সেরিব্রাম শরীরের সচেতন বা স্বইচ্ছায় চালিত সঞ্চালক পেশির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এই কাজগুলো প্রাথমিক সঞ্চালক কোরটেক্স এবং অন্যান্য ফ্রন্টাল লোব অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয় যেখানে কর্ম পরিকল্পনা করা হয়। প্রাথমিক সঞ্চালক কোরটেক্সের উর্ধ্বস্থ সঞ্চালক নিউরণ এক্সনগুলো পাঠায় মস্তিষ্কের শাখা প্রশাখা এবং মেরুদন্ড হয়ে নিম্ন সঞ্চালক নিউরণের synapse, যেটা পেশি নিয়ন্ত্রণ করে। কোরটেক্সের সঞ্চালক অঞ্চলের ক্ষতি হলে বিশেষ ধরনের সঞ্চালক নিউরণ রোগ হতে পারে। এই ধরনের ক্ষতির ফলে পেশির ক্ষমতা বিনষ্ট হওয়া এবং সম্পূর্ণ প্যারালাইসিস না হয়ে একক কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এটি ইন্দ্রিয় উপলব্দি ক্ষমতা, স্মৃতি, চিন্তা এবং বিচারিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। সহায়ক সঞ্চালক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবেও সেরিব্রাম কাজ করে।

লঘুমস্তিষ্ক (Cerebellum):

লঘু মস্তিষ্ক হল পশ্চাদ মস্তিষ্কের অংশ । গুরু মস্তিষ্ক আকারে বড় এবং এই মস্তিষ্ক করোটির অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে থাকে। লঘু মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত ছোট এবং পশ্চাদ করোটির খাঁজে অবস্থিত । গুরু মস্তিষ্কের গোলার্ধ দুটি করপাস ক্যালোসাম নামে যোজক দিয়ে যুক্ত থাকে । এছাড়াও এটি মনোযোগ, ভাষা এর মত সূক্ষ্ম কাজের সাথেও জড়িত। রাগ, আবেগ প্রকাশে নিয়ন্ত্রকের কাজ করলেও এর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন সংশ্লিষ্ট কাজই সবচেয়ে গুরুত্ববহন করে। মেরুরজ্জু এবং মস্তিষ্ক এর অন্যান্য অংশ থেকে সংবেদী সংকেত গ্রহণ করে সেগুলোকে একত্র করে সূক্ষ্ম মুভমেন্টে পরিণত করে। সেরেবেলামে আঘাত সরাসরি প্যারালাইসিস করে না,বরং সূক্ষ্ম মুভমেন্টে সমস্যা করে যেমন ভারসাম্য রক্ষা।

সেরিবেলাম বহিঃস্থ গ্রে ম্যাটার এবং অন্তঃস্থ হোয়াইট ম্যাটার দ্বারা নির্মিত। গাঠনিকভাবে সেরিবেলামকে প্রাথমিক ভাঁজ দ্বারা সম্মুখ লোব,পশ্চাৎ লোব এবং ফ্লোক্যুলোনোডুলার লোব এ তিনভাগে ভাগ করা যায়। কার্যকরীভাবে একে আর্কিসেরিবেলাম, প্যালিওসেরিবেলাম, এ নিওসেরেবেলাম, এ তিনভাগে ভাগ করা যায়।

গুরুমস্তিষ্ক ও লঘুমস্তিষ্কের মধ্যে পার্থক্যঃ

গুরু মস্তিষ্ক হল মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ। গুরু মস্তিষ্ক করোটির প্রায় বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত থাকে। গুরু মস্তিষ্ক ও লঘু মস্তিষ্কের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। গুরু মস্তিষ্ক হল মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ। গুরু মস্তিষ্ক করোটির প্রায় বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত থাকে। অন্যদিকে, লঘু মস্তিষ্ক হল পশ্চাদ মস্তিষ্কের অংশ । গুরু মস্তিষ্ক আকারে বড় এবং এই মস্তিষ্ক করোটির অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে থাকে। লঘু মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত ছোট এবং পশ্চাদ করোটির খাঁজে অবস্থিত ।

২। গুরুমস্তিষ্ক হল অগ্র মস্তিষ্কের অংশ। অন্যদিকে, লঘু মস্তিষ্ক হল পশ্চাদ মস্তিষ্কের অংশ।

৩। গুরুমস্তিষ্কের গোলার্ধ দুটি করপাস ক্যালোসাম নামে যোজক দিয়ে যুক্ত থাকে । অন্যদিকে, লঘুমস্তিষ্কের গোলার্ধ দুটি ভারমিস নামে যোজক দিয়ে যুক্ত থাকে ।

৪। গুরুমস্তিষ্কটি পাঁচটি খন্ডে বিভক্ত, যেমন : একটি করে অগ্র, মধ্য ও পশ্চাদ খন্ডক এবং দুটি পার্শ্ব খন্ডক । অন্যদিকে, লঘুমস্তিষ্কে এই ধরনের খন্ড থাকে না।

৫। গুরুমস্তিষ্কের প্রধান কাজ হল প্রাণীদের চিন্তা, বুদ্ধি, স্মৃতি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যদিকে, লঘুমস্তিষ্কের প্রধান কাজ হল প্রাণীদেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করা ।