ধ্রুপদী তত্ত্ব ও নিউ-ক্লাসিক্যাল তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য

ধ্রুপদী তত্ত্ব (Classical Theory) :
ধ্রুপদী শব্দের ইংরেজি হলো Classical যা প্রাচীন বা মৌলিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন জ্ঞানের সমাহার যা গতানুগতিকভাবে গৃহীত হয়। এটি অষ্টাদশ শতাব্দীর সময় হতে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত সময়ে প্রসার লাভ করে। এটি একটি মৌলিক তত্ত্ব যার প্রভাব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখনো দৃঢ়ভাবে পরিলক্ষিত হয়। সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাহী ও কর্মীদের আচরণ কী হবে এবং এদের কর্মপ্রবাহ কীভাবে চলবে এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রাচীনতম চিন্তা ভাবনাগুলো ধ্রুপদী তত্ত্বের আওতাভুক্ত। ধ্রুপদী সংগঠনে কার্যরত ব্যক্তিদের সম্পর্ক, ক্ষমতা, উদ্দেশ্য, ভূমিকা, কার্যাবলি, যোগাযোগ প্রভৃতি উপাদানগুলো এ তত্ত্বে বিরাজমান।

নিউ-ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব (Neo-classical Theory) :
মানব সম্পর্ক, মানুষের আবেগ, প্রত্যাশা, আচরণ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থাপনার করণীয় সম্পর্কে পরবর্তী কালের ব্যবস্থাপনা বিশারদগণ যে সকল তত্ত্ব দিয়েছেন তাকে নিউ-ক্লাসিক্যাল মতবাদ বলে। নিউ-ক্লাসিক্যাল মতবাদ ধ্রুপদী মতবাদের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে। বলা যায়, এটি ধ্রুপদী মতবাদেরই সম্প্রসারিত রূপ এবং ঠিক বিপরীত। ধ্রুপদী মতবাদে সংগঠনের আনুষ্ঠানিক কাঠামোতে বিশ্বাস করে এবং মানুষকে অর্থনৈতিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল মতবাদে অনানুষ্ঠানিক কাঠামো, কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক উপাদান এবং আবেগকে বিবেচনা করে।

এ মতবাদের মূল ধারণা হলো কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক দিকগুলো বিবেচনায় আনতে হবে। এর বৈশিষ্ট্য হলো এটি কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক দিকগুলো বিবেচনা করে। এর আরেকটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হলো এটি কাজের ক্ষেত্রে মানুষকে অর্থনৈতিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে।

ধ্রুপদী তত্ত্ব ও নিউ-ক্লাসিক্যাল তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্যঃ
শিল্প বিপ্লবের ফলে উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। এ পরিবর্তনকে সুষ্ঠুভাবে কার্যে প্রয়োগের জন্য ধ্রুপদী মতবাদের উৎপত্তি হয়। তবে এ তত্ত্বে কর্মীকে অর্থনৈতিক মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এ ধারণা পরিবর্তন করে শ্রমিক-কর্মীদেরকে সামাজিক মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে নব্য-ধ্রুপদী মতবাদ ((Neo-classical) এর বিকাশ ঘটে। ধ্রুপদী মতবাদ ও নব্য-ধ্রুপদী মতবাদের কতকগুলো মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. ধ্রুপদী তত্ত্ব নৈর্ব্যক্তিক ও যান্ত্রিক সাংগঠনিক কাঠামো নির্ভর বলে প্রতীয়মান হয়। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল তত্ত্বকে সামাজিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২. ধ্রুপদী মতবাদে শৃঙ্খলা ও যৌক্তিকতার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল মতবাদে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সামাজিক চাহিদার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

৩. ধ্রুপদী তত্ত্বে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও কঠোর রীতিনীতি প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল মতবাদে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

৪. ধ্রুপদী তত্ত্বানুযায়ী নীতি ও নিয়মাবলীর কার্যকারণ হচ্ছে সাংগঠনিক আচরণ। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল তত্ত্বানুযায়ী ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং মনোভাবের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সাংগঠনিক আচরণ।

৫. ধ্রুপদী তত্ত্বে কর্মীদেরকে অর্থনৈতিক মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল তত্ত্বে কর্মীদের সামাজিক মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৬. ধ্রুপদী তত্ত্বে কর্মীর কার্যাবলি ও অর্থনৈতিক চাহিদার ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল তত্ত্বে কর্মীদের আবেগ-অনুভূতি ও সামাজিক চাহিদার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

৭. ধ্রুপদী মতবাদ অনুযায়ী কর্মীরা সর্বাধিক পরিশ্রম করে এবং দক্ষতানুযায়ী পুরস্কার প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল মতবাদে সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মীরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করে, এখানে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া কম।

৮. ধ্রুপদী মতবাদ অতিমাত্রায় যান্ত্রিক। অন্যদিকে, নিউ-ক্লাসিক্যাল মতবাদ মানবিক।