কার্ড এবং ইয়োগার্টের মধ্যে পার্থক্য

কার্ড (Curd):

কার্ড তৈরি করা হয় এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুধ জমাট বাধিয়ে, যাকে বলে কোয়াগুলেশন। তার সঙ্গে যোগ করা হয় এসিড বা অম্লীয় উপাদান, যেমন- লেবুর রস ও ভিনেগার। ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক এসিড দুধে থাকা এসিডগুলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে দুধকে জমাট বাধতে সাহায্য করে। এর ফলে শক্ত ও জমাট আকারে দই তৈরি হয়ে যায়৷ কার্ড ভারতে ‘দহি’ এবং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ‘দই’ হিসেবে পরিচিত।

কার্ড প্রস্তুত করা হয় ল্যাকটিক এসিড (দুধে উপস্থিত অম্ল) ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে দুধকে ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। দুধে বিদ্যমান ক্যাসেইন নামের গ্লোবিউলার প্রোটিনের সঙ্গে এই ব্যাকটেরিয়ার বিক্রিয়া ঘটে। বিক্রিয়ার সময় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা শক্তি উৎপন্ন হয়৷

শক্তি উৎপন্ন হবার সঙ্গে সঙ্গে বাই-প্রোডাক্ট বা উপজাত হিসেবে ল্যাকটিক অ্যাসিডও তৈরি হতে থাকে। ল্যাকটিক অ্যাসিড গ্লোবিউলার প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তাদের সক্রিয়তা নষ্ট করে, ফলে তৈরি হয় ঘন, জমাট এক গঠন যা আমাদের কাছে দই বা কার্ড বলে পরিচিত।

ইয়োগার্ট (Yogurt):

ইয়োগার্ট তৈরি করা হয় ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে দুধের ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন ঘটিয়ে। এক্ষেত্রে দইয়ের ব্যাকটেরিয়া হিসেবে ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগেরিকাস ও স্ট্রেপটোকক্কাস থারমোফিলাসের মতো ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ব্যবহার করে বাড়িতে দই তৈরি অসম্ভব। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো দুধে থাকা শর্করা (ল্যাকটোজ) বা চিনির সঙ্গে বিক্রিয়া করে।

এর ফলে ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয়। এই এসিড এরপর দুধের প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ও ইয়োগার্ট প্রস্তুত হয়। দুধের ধরনের উপর নির্ভর করে ইয়োগার্টের স্বাদে বা রঙে তারতম্য ঘটতে পারে। ইয়োগার্ট সাধারণত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়। এটিকে কৃত্রিমভাবে সুমিষ্ট করা হয় ও স্বাদে বৈচিত্র‍্য রাখা হয়।

কার্ড এবং ইয়োগার্টের মধ্যে পার্থক্যঃ

ইংরেজিতে ‘কার্ড (Curd)’ বা ‘ইয়োগার্ট (Yogurt)’ শব্দটি লিখে গুগলে সার্চ দিলে দইয়ের ছবি আসে। কিংবা শব্দার্থ বের করতে গেলেও দই কথাটি আসে। কিন্তু কার্ড এবং ইয়োগার্টের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কার্ড এবং ইয়োগার্টের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। দুটো খাবারই তৈরি হয়ে দুধ দিয়ে। তবে কার্ড তৈরি হয়ে দুধে এসিডিক পদার্থ দিয়ে। যেমন- দুধে লেবুর রস বা ভিনেগার দিয়ে কার্ড তৈরি করা হয়। অন্যদিকে, ইয়োগার্ট বানানো হয় দুধে ব্যাকটেরিয়ার গাঁজন প্রক্রিয়ায়। এটা বানাতে নির্দিষ্ট কালচার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যাতে থাকে ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুলগারিকাস এবং স্ট্রেপ্টোককাস থার্মোফাইলস।

২। ইয়োগার্টে নানা ধরনের ফ্লেভার থাকে। আম, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, পিচ, কিউয়ি, ভ্যানিলা ইত্যাদি ফ্লেভারে মিলতে পারে। অন্যদিকে, কার্ড সাধারণত একই ফ্লেভারের হয়ে থাকে। অর্থাৎ, ফ্লেভারের জন্যে এতে অন্য কিছু মেশানো হয় না।

৩। ইয়োগার্ট ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। আরো আছে ফসফরাস এবং ভিটামিন বি১২। অন্যদিকে, কার্ডে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি৬।

৪। ইয়োগার্ট সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে, কার্ড বাড়িতেই বানানো হয়। তবে মিষ্টির দোকানে যে দই মেলে তাও বাড়িতে বানানোর মতোই।

৫। ইয়োগার্ট খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে। দেহে কোলেস্টেরলেও মাত্রাও কমে। অন্যদিকে, কার্ড হজমশক্তি বাড়ায়। সঙ্গে হজমপ্রক্রিয়া সুষ্ঠু করে তোলে।

৬। কার্ডে ল্যাকটোজ (দুধে থাকা শর্করা) এর পরিমাণ ইয়োগার্টের চেয়ে বেশি থাকে। তবে তরল দুধের তুলনায় কার্ডেও ল্যাকটোজের পরিমাণ কম থাকে। কাজেই, যারা ‘ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট’ তাদের জন্য ইয়োগার্ট তুলনামূলক সুবিধাজনক হতে পারে।