সাইক্লোন, টাইফুন ও হারিকেনের মধ্যে পার্থক্য

সাইক্লোন (Cyclone) :
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘সাইক্লোন’ হিসেবে পরিচিত। সাইক্লোনের কারণে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতে প্রচুর জানমালের ক্ষতি হয়। এ ছাড়াও, দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় সিভিয়ার ট্রপিক্যাল সাইক্লোন। আর দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরে একে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়।

মহাসাগরের উপর হঠাৎ করে নিম্নচাপ অঞ্চল সৃষ্টি হওয়ার ফলে সেখানে উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চলের বাতাস ছুটে আসে ওই স্থানকে পরিপূর্ণ করে তোলার জন্য। বাইরে থেকে আসা এই বাতাস যখন ওই স্থানে অবস্থান করে তখন পূর্বের গতির জন্য বর্তমানের গতিশীল অবস্থাকে আরো জোরালো করে তোলে, এর ফলে বাতাস এর ঘূর্ণন অবস্থা প্রচন্ড তীব্রতর হয়ে দেখা দেয়, এর ফলে সৃষ্টি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। মহাসাগরের উপর গড়ে ওঠা এই শক্তিশালী বায়ুর ঘূর্ণন অবস্থা ধীরে ধীরে স্থলভাগের উপরে উঠে আসে।

টাইফুন (Typhoon) :
টাইফুন হল তীব্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় যা উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীন, ফিলিপাইন, তাইওয়ান এবং জাপানের দক্ষিণ উপকূলের আশেপাশে ঘটে। এরা বিষুবরেখার কাছাকাছি গঠন করে এবং উচ্চ অক্ষাংশে ভ্রমণ করে। টাইফুনগুলি সারা বিশ্বে ঘটে এবং তাদের উৎপত্তি স্থলের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন নামে তাদের উল্লেখ করা হয়। যেমন আটলান্টিক এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে তাদের হারিকেন বলা হয়।

টাইফুনগুলিকে তাদের বায়ুর গতি অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। বাতাসের গতি থাকে যা ১৫৭ মাইলের বেশি হতে পারে। উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে, টাইফুনের মৌসুম নেই। এগুলি যে কোনও সময় ঘটতে পারে যদিও বেশিরভাগই গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং জুলাই এবং নভেম্বরে উত্তর গোলার্ধের শুরুর দিকে ঘটে।

হারিকেন (Hurricane) :
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চল, মধ্য এবং পূর্ব উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়কে ‘হারিকেন’ বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কিউবা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে হারিকেন আঘাত করে।

সাইক্লোন, টাইফুন ও হারিকেনের মধ্যে পার্থক্যঃ
‘হারিকেন’, ‘টাইফুন’ ও ‘সাইক্লোন’—সবই গ্রীষ্মকালীন ঝড়। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে এগুলো ভিন্ন নামে পরিচিত। সাইক্লোন, টাইফুন ও হারিকেনের পার্থক্য নিম্নরূপ-

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘হারিকেন’। কিন্তু একই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হলে তার নাম হয়ে যায় ‘টাইফুন’। আর দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘সাইক্লোন’। আবহাওয়াবিদদের কাছে ঘূর্ণিঝড়ের সাধারণ নাম ‘ট্রপিক্যাল সাইক্লোন’ বা উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলবিষয়ক প্রশাসনের (এনওএএ) ব্যাখ্যা অনুযায়ী, উষ্ণমণ্ডল বা উপ-উষ্ণমণ্ডল অঞ্চলের জলাধার থেকে যখন মেঘ ও বজ্রপাতসহ ঝড় সৃষ্টি হয়ে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় এগোতে থাকে, তখন তাকে উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় বলে।

এ ছাড়া এনওএএর তথ্য অনুযায়ী, ‘যখন কোনো উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের তীব্রতা ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হয়, তখন তাকে উৎপত্তিস্থল অনুযায়ী ‘হারিকেন’, ‘টাইফুন’ বা ‘সাইক্লোন’ বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ অনুযায়ী হারিকেনকে ১ থেকে ৫ নম্বর ক্যাটাগরিতে (মাত্রা) ফেলা হয়।

ভিন্ন ভিন্ন সাগরের কারণে এগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম হয়। ভারত মহাসাগরের বিশালাকার ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশের ঘূর্ণিঝড়কে টাইফুন বলা হয়। অন্যদিকে একই মহাসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশের ঘূর্ণিঝড়কে হারিকেন বলা হয়। পাশাপাশি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়কেও হারিকেন বলা হয়। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ অংশের ঘূর্ণিঝড়কেও সাইক্লোন বলা হয়।

সহজভাবে বলতে গেলে উত্তর আমেরিকার উভয় পাশের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়কে হারিকেন বলা হয়। পূর্ব এশিয়ায় প্রধানত টাইফুন বলা হয়। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হয়।