প্রাথমিক তরঙ্গ ও গৌণ তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য

প্রাথমিক তরঙ্গ গুলি গৌণ তরঙ্গ থেকে দ্রুত ভূমিকম্প পরিমাপক কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছায়। প্রাথমিক তরঙ্গ ও গৌণ তরঙ্গ দুটি ভূমিকম্পের সাথে জড়িত। নিচে প্রাথমিক তরঙ্গ ও গৌণ তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

প্রাথমিক তরঙ্গ (Primary Wave) :
প্রাথমিক তরঙ্গের (ইংরেজি ভাষায় সংক্ষেপে পি-তরঙ্গ নামেও পরিচিত) গতিবেগ বেশি, ফলে এটি গৌণ তরঙ্গ থেকে দ্রুত ভূমিকম্প পরিমাপক কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছায়। অর্থাৎ এগুলিই প্রথমে ভূকম্পমাপক যন্ত্রে আবির্ভূত হয়, যার কারণে এদেরকে প্রাথমিক তরঙ্গ বলা হয়। প্রাথমিক তরঙ্গগুলি সংকোচক বা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ নামেও পরিচিত। এগুলি সঞ্চারক মাধ্যমটির (কঠিন, তরল বা বায়বীয়) মধ্যে তরঙ্গের দিক বরাবর সামনে-পেছনে দোলনের সৃষ্টি করে, ফলে মাধ্যমটির কোনও একটি বিন্দুর মধ্য দিয়ে তরঙ্গটি প্রবাহিত হবার সময় এটি একবার প্রসারিত হয়, একবার সংকুচিত হয়, অনেকটা যেমন শব্দতরঙ্গ বাতাসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পৃথিবীতে প্রাথমিক তরঙ্গগুলি পৃষ্ঠতলের কাছাকাছি শিলার ভেতর দিয়ে সেকেন্ডে ৬ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে পৃথিবীর মজ্জা বা মর্মস্থলের কাছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার নিচে এই গতিবেগ সেকেন্ডে ১০.৪ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মজ্জার ভেতরে প্রবেশের পর তরঙ্গের বেগ কমে ৮ কিমি/সেকেন্ড হয়ে যায়। পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছে এই বেগ আবার বৃদ্ধি পেয়ে ১১ কিমি/সেকেন্ডে পরিণত হয়। এই গতিবেগ বৃদ্ধির কারণ হল তরল পদার্থের মাধ্যাকর্ষণজনিত চাপ বৃদ্ধি এবং শিলাস্তরের গঠনের পরিবর্তন। সাধারণত গতিবেগ বৃদ্ধির কারণে প্রাথমিক তরঙ্গগুলি বক্রপথে ভ্রমণ করে এবং বক্রপথগুলি ঊর্ধ্বমুখী ও অবতল আকৃতির হয়।

গৌণ তরঙ্গ (Secondary Wave) :
গৌণ তরঙ্গ (ইংরেজিতে সংক্ষেপে এস তরঙ্গ নামেও ডাকা হয়) কৃন্তন তরঙ্গ বা তির্যক তরঙ্গ নামেও পরিচিত। এই তরঙ্গগুলির কারণে কঠিন সঞ্চারণ মাধ্যমটি ভূমিকম্পের সঞ্চারণের দিকের সাথে লম্বভাবে উপরে-নিচে ওঠানামা করে। যখন তরঙ্গটি মাধ্যমের কোনও বিন্দুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এটির একবার উপরে, একবার নিচে কৃন্তন ঘটে।

পৃথিবীপৃষ্ঠে এই কৃন্তন তরঙ্গের গতিবেগ সেকেন্ডে ৩.৪ কিলোমিটার এবং কোরের সীমানার কাছে এর গতিবেগ সেকেন্ডে ৭.২ কিলোমিটার। কোর তরল বলে কৃন্তন তরঙ্গগুলি সঞ্চারণ করতে পারে না। অন্যভাবে দেখলে, বহিঃস্থ কোর যে তরল, এই সিদ্ধান্তের পক্ষে একটি শক্তিশালী যুক্তি হল কৃন্তন তরঙ্গের অনুপস্থিতি। মূল তরঙ্গের মত গৌণ তরঙ্গগুলিও ঊর্ধ্বগামী অবতল বক্রাকার পথে ভ্রমণ করে।

প্রাথমিক তরঙ্গ ও গৌণ তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. প্রাথমিক তরঙ্গ ইংরেজি ভাষায় সংক্ষেপে পি-তরঙ্গ নামেও পরিচিত। অন্যদিকে, গৌণ তরঙ্গ ইংরেজি ভাষায় সংক্ষেপে এস তরঙ্গ বা কৃন্তন তরঙ্গ বা তির্যক তরঙ্গ নামেও পরিচিত।

২. প্রথমে ভূকম্পমাপক যন্ত্রে আবির্ভূত হয়, যার কারণে এদেরকে প্রাথমিক তরঙ্গ বলা হয়। অন্যদিকে, গৌণ তরঙ্গগুলির কারণে কঠিন সঞ্চারণ মাধ্যমটি ভূমিকম্পের সঞ্চারণের দিকের সাথে লম্বভাবে উপরে-নিচে ওঠানামা করে।

৩. প্রাথমিক তরঙ্গ ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, গৌণ তরঙ্গ P-wave এর চেয়ে ধীর গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।

৪. প্রাথমিক তরঙ্গ হল সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী তরঙ্গ। অন্যদিকে, গৌণ তরঙ্গ হল ছোট এবং প্রাথমিক তরঙ্গের সাথে তুলনায় কম শক্তিশালী।

৫. এগুলি প্রাথমিক শক্তিতে তৈরি হতে পারে এবং প্রাথমিক তরঙ্গের তাপমাত্রা সাধারণত বেশি হয়। অন্যদিকে, গৌণ তরঙ্গ গুলি সাধারণত প্রাথমিক তরঙ্গের প্রভাবের পরিণামে উৎপন্ন হতে পারে এবং তাদের তাপমাত্রা সাধারণত কম হয়।

৬. প্রাথমিক তরঙ্গ সাধারণত দূরদর্শী বা লঞ্চ অবস্থায় প্রেরণ করা হয়। অন্যদিকে, গৌণ তরঙ্গ সাধারণত তরঙ্গ আদর্শের আবাসন করে এবং প্রাথমিক তরঙ্গ দ্বারা বিক্রিত হতে পারে।

৭. পৃথিবীর মজ্জা বা মর্মস্থলের কাছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার নিচে এই গতিবেগ সেকেন্ডে ১০.৪ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মজ্জার ভেতরে প্রবেশের পর তরঙ্গের বেগ কমে ৮ কিমি/সেকেন্ড হয়ে যায়। অন্যদিকে, পৃথিবীপৃষ্ঠে এই কৃন্তন তরঙ্গের গতিবেগ সেকেন্ডে ৩.৪ কিলোমিটার এবং কোরের সীমানার কাছে এর গতিবেগ সেকেন্ডে ৭.২ কিলোমিটার।